বৃষ্টি ভাণ্ডারী: দ্বেষের আগুনে জ্বলছে বাংলাদেশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহে দীপু দাস নামে জনৈক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে খুন করেছে কট্টরপন্থীরা। জনসমক্ষে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর দেহ। শুধু তাই নয়, দীপুর পোড়া মুণ্ডু ও ধড় নিয়ে নারকীয় উল্লাস দেখে শিঁউড়ে উঠেছে সভ্য সমাজ! এবার পদ্মাপাড়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে বাংলাদেশের একাধিক অনুষ্ঠান বাতিল করলেন আরমান খান। ইউনুসের দেশে হিন্দু নিধনের প্রতিবাদ জানিয়ে রশিদপুত্রের মন্তব্য, "আর কোনওদিন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখব না।"
দিন কয়েক ধরেই ইউনুসের দেশের 'কাণ্ড-কারখানা' পরখ করে উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক মহল। পদ্মাপাড়ের এহেন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ে সঙ্গীতশিল্পী আরমানের মন্তব্য, "সাধারণত আমি দুটো জিনিস নিয়ে চিন্তিত। ওখানে যেভাবে হিন্দুদের নির্যাতন করা হচ্ছে, সেটা ভীষণ অনৈতিক। দ্বিতীয়ত, যেভাবে ওরা বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করেছে। একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে আমার বিশ্বাস, মা সরস্বতীর বাস আমাদের বাদ্যযন্ত্রে। পুজোর সময়ে মায়ের পায়ে আমরা বাদ্যযন্ত্র অর্পণ করি। আর সেখানে ওরা আক্রমণ হেনেছে। সেটাতেই আমার ভীষণ রাগ হচ্ছে। আমি জানি না কেন, বাংলাদেশের সঙ্গীতশিল্পীরা এহেন ঘৃণ্য ঘটনার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন না! যেভাবে বাদ্যযন্ত্রের উপর আঘাত হানা হয়েছে, সেটা তো ওদেরও অপমান।" বাংলাদেশের আমজনতার এহেন বর্বর, নারকীয় কর্মকাণ্ডের সমালোচনাতেও সরব হয়েছেন তিনি।
রশিদপুত্র আরমান খানের সংযোজন, "বাংলাদেশের এহেন বর্বর রূপ দেখে মনে হচ্ছে না ওখানকার আমজনতা আর সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে কোনও ফারাক আছে! হিন্দু-মুসলিম ধর্মের উর্ধ্বে গিয়ে যতদিন না এরা নিজেদের 'মানুষ' বলে ভাবছে, ততদিন এই হিংসা বাংলাদেশে চলবেই। নিজেদের চিন্তাধারার জন্যেই বাংলাদেশ কোনওদিন উন্নত দেশে পরিণত হবে না। এহেন পরিস্থিতিতে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি জীবনে আর কোনওদিন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখব না।" লাগাতার ভারত বিদ্বেষ, সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর এহেন নির্যাতনের জেরে দুই দেশের শিল্পীদের পারস্পারিক সাংস্কৃতিক বিনিময়ও ব্যহত হয়েছে। সেকথায় সিলমোহর বসিয়ে আরমান বলছেন, "ঠিক পাকিস্তানের সঙ্গে এই কারণেই সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। আগে আমরা দেখেছি, দুই দেশের শিল্পীদের পরস্পরের দেশে অবাধ যাতায়াত ছিল। আর এবার বাংলাদেশ নিজের কবর নিজেই খুঁড়ল।"
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির। এই ঘটনার পরই ভয়ংকর হিংসা ছড়ায় গোটা বাংলাদেশে। এরই রোষ গিয়ে পড়ে দীপু নামে ওই সংখ্যালঘু হিন্দু যুবকের উপর। ময়মনসিংহের মোকামিয়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা দীপু গত দু’বছর ধরে ভালুকার একটি কারখানায় কর্মরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ কারখানায় হঠাৎ একদল বিক্ষোভকারী চড়াও হন। চলে ভাঙচুর। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, টেনে হিঁচড়ে কারখানার বাইরে বের করে আনা হয় দীপুকে। তারপর গণপিটুনি দেওয়া হয় তাঁকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দীপুর। এরপর তাঁর দেহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নিয়ে যায় বিক্ষুব্ধ জনতা। গাছে বেঁধে ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। সঙ্গে চলে স্লোগান। গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত সভ্য সমাজ।
