shono
Advertisement
Manoj Kumar

দেশাত্মবোধক সিনেমা বানাতে বাড়ি বিক্রি, 'উপকার' তৈরি শাস্ত্রীর অনুরোধে, রাজনীতি সচেতন ছিলেন ভারত কুমার

লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর অনুরোধেই সিনেমা পরিচালনা শুরু মনোজ কুমারের।
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 10:31 AM Apr 04, 2025Updated: 12:56 PM Apr 04, 2025

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না হয়েও দেশের মানুষের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সিনেমাকে 'অস্ত্র' হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন যে মানুষটি, তিনি মনোজ কুমার। সেই তালিকায় অবশ্য অনেক পরিচালক, অভিনেতার নাম ঠাঁই পেলেও দেশাত্মবোধক ছবির সমার্থক হয়ে ওঠে মনোজ কুমার নামটিই। এমনকী সিনেমার পর্দায় দেশের মানুষদের কথা তুলে ধরার জন্য নিজের বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছিলেন পরিচালক তথা অভিনেতা। আর সেই জন্যই তাঁকে 'ভারত কুমার' আখ্যাও দেওয়া হয়। সেই 'মুকুট' জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সযত্নে আগলে রেখেছিলেন হরিকৃষ্ণ গিরি গোস্বামী ওরফে মনোজ কুমার (Manoj Kumar)।

Advertisement

ষাটের দশকে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর অনুরোধেই পরিচালকের আসনে বসেছিলেন মনোজ কুমার। সেসময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাস্ত্রী অভিনেতাকে 'জয় জওয়ান জয় কিষাণ' স্লোগানের উপর ভিত্তি করে একটি সিনেমা তৈরি করার আবদার জানান। যে ছবি গাইবে সেনা, কৃষকদের জয়গান। সেখান থেকেই মনোজ পরিচালিত 'উপকার' উপহার পেলেন দর্শকরা। প্রেম চোপড়া, আশা পারেখ কামিনী কৌশল, প্রাণ, মদন পুরিদের মতো বাঘা অভিনেতাদের নিয়ে কালজয়ী সিনেমা তৈরি করে ফেললেন মনোজ কুমার (Manoj Kumar)। তাঁর হাত ধরেই গোটা দেশ শুনল 'মেরে দেশ কি ধরতি, সোনা উগলে, উগলে হিরে মোতি...'। স্বাধীনতা দিবস হোক কিংবা সাধারণতন্ত্র দিবস, ছয় দশক পেরিয়ে সেই গান এখনও দেশপ্রেমের উদযাপনে বাজে সর্বত্র। ষাটের দশকের সেই ছবির পটভূমি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। যা প্রান্তিক অঞ্চলের কৃষক, খেটে খাওয়া মানুষদের গল্প বলার পাশাপাশি দেশের সেনাবাহিনীর গৌরবগাথাও উদযাপন করেছে। পরিচালনার পাশাপাশি তিনি এই ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। বক্স অফিসেও সাড়া ফেলে দেয়। সেবছর দেশের সবথেকে বেশি ব্যবসা করা সিনেমার খেতাব জিতে নিয়েছিল মনোজ পরিচালিত 'উপকার'। একাধিক বিভাগে পুরস্কৃত হয় এই সিনেমা। ছবিতে নিজেদের রোজনামচা, নিজেদের জীবনের গল্প দেখতে পেয়ে ভারতীয় দর্শকরা এতটাই একাত্ম বোধ করেছিলেন এবং এই ছবি সাধারণ মানুষের মনে এতটাই জায়গা করে নিয়েছিল যে পরবর্তীতে তেলুগু ভাষাতেও তৈরি হয়। যার নাম 'পদিপান্তালু'। সেখান থেকেই মনোজ কুমারের দেশপ্রেমের গাথা বোনা শুরু। এর পর দেশাত্মবোধক সিনেমা তৈরির জন্য নিজের সম্পত্তি, বাড়িও বিক্রি করে দিয়েছিলেন সেই মানুষটি।

লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর সঙ্গে টিম 'উপকার', মধ্যমণি মনোজ কুমার

অতীতে এক সাক্ষাৎকারে মনোজ কুমার বলেছিলেন, "দেশপ্রেম আমার রক্তে রয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার কাছ থেকে দেশপ্রেম এবং সাহিত্যচর্চার প্রতি আনুরাগ্য পেয়েছি, আর মা শিখিয়েছেন নৈতিক মূল্যবোধ।" সেই আদর্শকে পাথেয় করেই অভিনেতা-পরিচালক তাঁর ফিল্মি কেরিয়ারে একাধিক দেশাত্মবোধক সিনেমা উপহার দিয়েছেন। ১৯৬৭ সালে 'উপকার' দিয়ে শুরু, এরপর 'রোটি কাপড়া অউর মকান' (১৯৭৪), 'শহিদ' (১৯৬৫), 'পূরব অউর পশ্চিম' (১৯৭০), 'ক্রান্তি' (১৯৮১)-র মতো সিনেমাগুলি সেই তালিকার শীর্ষে। এই 'ক্রান্তি' ছবিটির জন্যই মুম্বইয়ের জুহুর বাংলো বিক্রি করে দিয়েছিলেন মনোজ। পরিকল্পনা ছিল, সেই জমিতে একটি থিয়েটার গড়ে তুলবেন, কিন্তু 'ক্রান্তি' তৈরির পথে অন্তরায় হয়ে ওঠে অর্থাভাব। তাই ছবিটি বানানোর জন্য
সেই সাধের বাংলোটি বিক্রি করে দেন অভিনেতা-পরিচালক। তার সেই কসরতের দাম পালটা ভালোবাসা দিয়ে দিয়েছিলেন দর্শকরা। বক্স অফিসে দারুণ হিট হয় 'ক্রান্তি'। রাজনীতি নিয়েও বরাবর সচেতন ছিলেন মনোজ কুমার। ফিল্মি কেরিয়ারের অস্তরাগে রাজনীতিতে কেরিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২০০৪ সালের নির্বাচনের আগে ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য হন। মোদির সঙ্গেও একাধিকবার নির্বাচনী প্রচারে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

ভারতের রাজনীতি এবং সমাজের প্রতিফলন কয়েক দশক আগেই মনোজ কুমার তাঁর সিনেমার মধ্যে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। এক্ষেত্রে তাঁকে 'ভবিষ্যৎদ্রষ্টা', বললেও অত্যুক্তি হয় না। এপ্রসঙ্গে অভিনেতার বছর খানেক আগের এক মন্তব্য উল্লেখ্য। যা কিনা শোরগোল ফেলে দিয়েছিল দেশের বিনোদুনিয়া তথা দিল্লির রাজনীতিতে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল তখন সদ্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী গদিতে বসেছেন। এক সাক্ষাৎকারে মনোজ কুমার বললেন, "ও এখনও নতুন শার্টের মতো। এখনও ধোয়া পড়েনি। আজকের প্রজন্ম অনেক বেশি সচেতন। আর কেজরি এবং তাঁর দল ভারতীয় রাজনীতিতে এক নতুন তরঙ্গ। তবে কেজরিওয়াল আমার থেকে ৪৭ বছর পিছিয়ে। অনেক আগেই আমি এক সাধারণ মানুষের রাজনীতিতে উত্থানের কাহিনি পর্দায় তুলে ধরেছি। সে 'উপকার' হোক বা 'ইয়াদগার'। 'ইয়াদগার' ছবিতে আমি এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম যার লড়াই ছিল দুর্নীতি, কালোবাজারির বিরুদ্ধে। কারখানায় কাজ করা এক সাধারণ মানুষ কীভাবে দুর্নীতিগ্রস্থ ডাক্তারদের মুখোশ খুলে দিয়েছিল, এমনকী মানুষের মনে জায়গা করে নির্বাচনে জিতেছিল। কেজরিওয়াল রাজনীতিতে আসার চার দশক আগেই আমি সেটা ভারতীয় জনতাকে দেখিয়েছি।" শুক্রবার সেই মানুষটি চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন। বিনোদুনিয়া তো বটেই এমনকী দেশের রাজনৈতিকমহলেও শোকের ছায়া মনোজ কুমারের প্রয়াণে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ষাটের দশকে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর অনুরোধেই পরিচালকের আসনে বসেছিলেন মনোজ কুমার।
  • সেসময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাস্ত্রী অভিনেতাকে 'জয় জওয়ান জয় কিষাণ' স্লোগানের উপর ভিত্তি করে একটি সিনেমা তৈরি করার আবদার জানান।
  • সেখান থেকেই মনোজ পরিচালিত 'উপকার' উপহার পেলেন দর্শকরা।
Advertisement