"বম্বেতে কাজ পেতে একটা জিনিসই কাজে দেয়, সেটা হল অডিশন।" টলিউড থেকে বলিউডে জার্নি ও নতুন সিরিজ নিয়ে আড্ডায় অভিনেত্রী তুহিনা দাস। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
বম্বে গিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত এবার কাজে আসছে মনে হচ্ছে?
... জানি না, এটা বলা এই মুহূর্তে কতটা ঠিক। কাজ করতে শুরু করেছি এটুকু বলতে পারি। কারণ, বম্বেতে সবকিছুই বেশি। অভিনেতা-অভিনেত্রী, প্রতিযোগিতা সবই বেশি। বিশাল জায়গা, কাজের পরিসরও অনেকটা, সবকিছু বাংলার থেকে বেশি। সেখানে সামান্য কিছু মুভমেন্ট হলেও, নিজের মনের কোণে একটা তৃপ্তি থাকে। এখানে, যুদ্ধ পার করতে পারলে তবেই তুমি উইনার। কেউ কেয়ার করে না, তুমি বাংলায় কী করে এসেছ।
‘ছল কপট’সিরিজটা আপনার ইতিমধ্যে এসে গিয়েছে জি ফাইভ-এ। কেমন সাড়া পেলেন?
... ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছি আমরা। কারণ থ্রিলার মানুষের পছন্দের জনার। আমি নিজেও থ্রিলার দেখতে পছন্দ করি, দর্শক হিসেবে। শুধু বাংলায় নয়, আমাদের সারা দেশেই থ্রিলার-প্রীতি আছে। সেই কারণেও এটা মানুষ দেখছে। আমি সব মিলিয়ে ওয়ার্ম রেসপন্স পেয়েছি।
এখানে তো বেশ কয়েকজন চেনা মুখ রয়েছেন?
... হ্যাঁ, শ্রিয়া পিলগাঁওকর, পুলিশের ভূমিকায়। চার বন্ধুর রিইউনিয়ন হয়, এক বন্ধুর এনগেজমেন্ট উপলক্ষ করে। সেখানে এক বন্ধু খুন হয়। কে সাসপেক্ট সেই নিয়ে গল্প এগোয়।
আপনি আরও দুটো কাজ করেছেন যতদূর জানি।
... হ্যাঁ, (হাসি)। জি ফাইভ-এর কাজটা পরে শুট করেছিলাম কিন্তু আগে রিলিজ হয়ে গেছে। প্রথম করেছিলাম ‘ক্লিন আপ ক্রু’, রোহন ঘোষের পরিচালনায়। যেটা জিও স্টুডিওজ-এর কাজ। ওটা ফুল ফ্লেজেড কাজ আমার বম্বেতে।
যেখানে যিশু সেনগুপ্ত আছেন।
...ঠিক। যিশুদা, শাশ্বতদা, আর আমিও আছি। তার ওপর রবিকিষণ, বিশাল জেঠওয়া রয়েছেন (মর্দানি-খ্যাত)। তবে কোন প্ল্যাটফর্মে আসবে এখনও জানি না।
অপর্ণা সেন-এর ‘ঘরে বাইরে আজ’-এর পরে আবার যিশুর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ...
...হ্যাঁ, (হাসি)। গল্পটা খুব ভালো এটার।
আরেকটা কী কাজ?
...‘সিঙ্গল পাপা’ বলে নেটফ্লিক্সে একটা সিরিজ আসবে। যদিও ঘোষণা হয়নি এখনও। সেখানে আমি ইন্টারেস্টিং একটি চরিত্রে, সেটা খুব বড় না হলেও। কুণাল খেমু, নেহা ধুপিয়ার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছি এখানে। খুব ভালো অভিজ্ঞতা। বাজেট আমাদের তুলনায় বেশি, ফলে কম স্ট্রেস কম ছিল কাজটা। মজা করে কাজ করেছি। পরিচালকের থেকেও ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছি।
বম্বেতে কাজ পেতে আপনার ক্ষেত্রে কোনটা কার্যকরি হচ্ছে? পিআর, কানেকশন নাকি অডিশন?
...বিশ্বাস করুন, বম্বেতে কাজ পেতে একটা জিনিসই কাজে দেয়, সেটা হল অডিশন। বম্বে এসে যখন প্রফেশনালি একটা প্রোফাইল তৈরি করেছি, যে কী কাজ করেছি বা ছবি ইত্যাদি, সেটা দেখার ফলে একটা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে, যে মেয়েটি একদম নতুন না। এইটুকুই, বাকিটা হল অডিশনে উতরোতে হবে।
বাংলায় কি কাজ পাচ্ছিলেন না? ‘ঘরে বাইরে আজ’-এর পরেও দু-একটা ছবি করেছিলেন।
...হ্যাঁ, ‘দময়ন্তী’ করেছিলাম, আরও কিছু। কোনও মানুষই আদতে তার জীবন-কেরিয়ার প্ল্যান করতে পারে না। আমরা ভাবি ওইরকম। আমি বাংলায় থাকাকালীন যে অল্প কাজ করেছি, সেখানে আমাকে গুরুদায়িত্ব-ওয়ালা কাজই দেওয়া হয়েছিল। ভিড়ের মাঝখানের কিছু নয়। যত তুমি বড় বড় কাজ করবে, অ্যাক্টর হিসেবে অপশন কমবে, সেটা উপলব্ধি করি। বলুন তো, ‘দময়ন্তী’ বা ‘বৃন্দা’-র মতো চরিত্র কি প্রায়ই তৈরি হয়, যে আসবে? এই সব মিলিয়ে আমার সুযোগ কমে আসে। আর একটা জিনিস মনে হয়েছিল, আমাকে ট্র্যাডিশনাল কোনও কিছুতে ভাবতে মানুষের অসুবিধা। লোকে বলে, আমি ট্র্যাডিশনাল বক্সে পড়ার মতো দেখতে নই। আর আমি নিজের শর্তে কাজ করতে ভালোবাসি। শিরদাঁড়াটুকু নিয়ে এসেছি কাঁথি থেকে। মধ্যবিত্ত পরিবারে শিরদাঁড়ার মূল্যবোধটাই থাকে, আর কিছু থাকে না। সেটা বাঁকানোতে আমার সমস্যা আছে।
টলিউডে কি আপনাকে আপস করার পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল?
...আমি যদি স্পেসিফিক জেন্ডার হিসেবে কথা বলি, যখন আমি কাঁথি থেকে বাইরে বেরিয়ে কলকাতায় আসি, মানে মা-বাবার ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে আসি, না চাইলে আমাকে অনেক কিছু ফেস করতে হয়েছে। যেটা খুবই আনফরচুনেট। যেকোনও মেয়ের ক্ষেত্রেই এই সমঝোতাগুলোর নানা চেহারা থাকে। কলকাতায় ঘর পেতেই আমাকে বেগ পেতে হয়েছিল। সেখান থেকেই জার্নি শুরু। আমি পলিটিকালি কারেক্ট উত্তর দেব না, কারণ বিভিন্ন চেহারার বিভিন্ন অভিমুখের ডিফিকাল্টি ফেস করেছি। সেটা পার্ট অফ মাই জার্নি। সেটাতেই মানুষ হিসেবে আমি দৃঢ় হয়েছি, জেদ বেড়েছে। যেখানে আমি মন থেকে না বলতে চাই, সেখানে কোনও পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ‘হ্যাঁ’ বলতে হবে সেটা আমি কোনওদিন করিনি। তাই জন্য এখনও শান্তিতে ঘুমাই। (হাসি)
একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন। এক সময় টলিউডে ওপেন সিক্রেট ছিল আপনি রোহন ঘোষের সঙ্গে প্রেম করছেন...
...প্লিজ, ব্যক্তিগত প্রশ্ন বাদ দিয়েই কথা বলি। ওটা ব্যক্তিগতই থাক। কাজ নিয়ে আরও ফোন চাই আপনার কাছ থেকে (হাসি)।
