অপরাজিতা সেন: রাজ্য সরকারি প্রশাসনে কাজের পরিমাণ ও গতি বাড়াতে বড় মাপের পদক্ষেপ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। সমস্ত সরকারি দপ্তরগুলিতে কর্মীদের হাজিরায় বায়োমেট্রিক সিস্টেম (Biometric systems) চালু হচ্ছে শীঘ্রই। মুখের ছবি ও আঙুলের ছাপ দিয়ে প্রবেশ এবং প্রস্থান করতে হবে কর্মস্থলে। কালীঘাটে তৃণমূল কংগ্রসের (TMC) শীর্ষবৈঠকে শুক্রবার প্রশাসনে গতির লক্ষ্যে এমনই নয়া উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
বায়োমেট্রিক সিস্টেম চালুর পাশাপাশি ডিএ নিয়ে চলতি বিতর্ক এবং সরকারি কর্মচারীদের একাংশের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আচরণ নিয়েও সবিস্তার ব্যাখ্যা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আগের বাম সরকারের আমলের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে কাজ হচ্ছে। মানুষকে ঘরে ঘরে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীরা অধিকাংশই খুব ভাল কাজ করছেন। তবে একাংশ বিরোধী দলের হয়ে নানা ধরনের কুৎসা এবং অপপ্রচার করছেন। আমাদের প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে হবে।”
[আরও পড়ুন: ভিন্দ্রানওয়ালের স্মৃতি উসকে ফের অশান্ত পাঞ্জাব, কেন শুরু হয়েছিল খলিস্তানি আন্দোলন?]
ডিএ নিয়ে জনমানসে বিরোধীদের বিভ্রান্তি তৈরির তীব্র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “বাম আমলে মাত্র ৩৩ শতাংশ ডিএ দিত, সেখানে আমাদের সরকার এসে ১০৬ শতাংশ দিচ্ছে। কেন্দ্রের চাকরি ও বেতন, দুটোই আলাদা। রাজ্যে চাকরি করে কেন্দ্রের সমান বেতন দাবি করা অনৈতিক। আমি সীমিত সামর্থ্য মেনে যতটা পারি ডিএ দিয়েছি। কিন্তু একবারও তো কেউ বলছেন না, কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের ন্যায্য বকেয়া পাওনা কেন দেওয়া হচ্ছে না?”
সরকারি কর্মীদের দফতরে হাজিরা নিয়েও বৈঠকে বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, দিনকয়েক আগে আমি সারপ্রাইজ ভিজিটে গিয়েছিলাম স্বরাষ্ট্র দপ্তরে। দেখি পর পর সব চেয়ার ফাঁকা। কাজের দিনে মাত্র সাত-আটজন লোক কাজ করছেন। বাকিরা আসেননি। দেখি একজনের টেবিলে ফাইলের পাহাড়। তিনি ‘ডাই ইন হারনেস’ অর্থাৎ অকালে মৃত্যু হলে পরিজনদের চাকরির ফাইল ছাড়েন। কিন্তু আমি যদি প্রতিদিন টেবিলের সব ফাইল ছেড়ে দিই, তা হলে উনি জমা করে রাখবেন কেন?” এর পরই ওই কর্মীদের কাজের নেতিবাচক মনোভাবের সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কর্মীদের একাংশ কাজ না করে, মানুষকে পাওনা পরিষেবা না দিয়ে সরকারকে হেয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের স্বার্থে এটা মেনে নেওয়া যাবে না।”
[আরও পড়ুন: রাহুলের পাশে দাঁড়ানোয় মহুয়া মৈত্রকে ‘নগরবধূ’ বলে আক্রমণ, বিতর্কে বিজেপি বিধায়ক]
দেশের অন্য অংশের সঙ্গে রাজ্যেও বহু বেসরকারি এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রেও ইতিমধ্যে কর্মীদের হাজিরা নিয়মিত করতে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু করেছে। সরকারি দু’-একটি ক্ষেত্রেও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ইতিমধ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হয়েছে। কিন্তু এবার কাজের পরিমাণ ও গতি বাড়াতে মুখের ছবি দিয়ে হাজিরার পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন এবং আইনও আনা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন। তৃণমূলের শীর্ষবৈঠকে ১১ বছরে রাজ্য সরকারের সাফল্যের খতিয়ান শীর্ষক একটি পুস্তিকাও প্রকাশ করেন তিনি। সেখানে দফতর ধরে ধরে কী কী উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। সরকারের এই উন্নয়নের তালিকা শীর্ষক পুস্তিকা পাড়ায় পাড়ায় পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।