সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও নন্দন দত্ত: শক্তিগড়ের শুটআউটের সঙ্গে কয়লা পাচারের যোগ আগেই মিলেছিল। এবার নিহত রাজু ঝাঁয়ের সঙ্গে উঠে গরুপাচারের যোগও স্পষ্ট হচ্ছে ক্রমেই। ইলামবাজার গরুহাটের ‘সর্বেসর্বা’ আবদুল লতিফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল নিহত রাজুর। স্থানীয় সূত্রে খবর, এনামুল-অনুব্রতহীন বীরভূমে বকলমে লতিফের ব্যবসা সামলাতেন রাজুই। শুধু গরু-কয়লা নয়, লতিফের অন্যান্য ব্যবসাও দেখাশোনা করতেন তিনি। এমনকী. তাতে বিপুল বিনিয়োগও করেছিলেন। শনিবার সন্ধেয় সেই আবদুল লতিফের গাড়ি (নম্বর: WB48D7032)-তেই খুন হন রাজু। যা ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বীরভূমের ইলামবাজারের সুক বাজারের বাসিন্দা আবদুল লতিফ। ২০১০ সাল থেকে ইলামবাজার থেকে মুর্শিদাবাদ হয়ে গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এছাড়াও অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ এই লতিফ ছিল গরু পাচারের কিংপিন। ইলামবাজারের গরুর হাটও নিয়ন্ত্রণ করত লতিফ। বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত এই গরু পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল লতিফের ৷ গরুপাচারকারী এনামুল হকের অন্যতম সঙ্গী ছিলেন লতিফ ৷ তৃণমূল বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই লতিফের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে সিবিআই ৷ তাঁকেও তলব করেছিল। কিন্তু হাজিরা দেননি। সূত্রের খবর, বাংলাদেশে গাঢাকা দিয়েছিলেন তিনি। দিন দশেক আগে বীরভূমে ফিরেছেন লতিফ।
[আরও পড়ুন: যৌন মিলনের পর নিজের স্ত্রীকে বন্ধুকে দিয়ে ‘ধর্ষণ’, গ্রেপ্তার অভিযুক্ত]
ইলামবাজারের গরুবাজার সংলগ্ন সুখ বাজারে রয়েছে তার বিশাল প্রাসাদপম বাড়ি । একটি বড় গাড়ির শোরুম, মার্বেল এর ব্যবসা, হোটেল ব্যবসা ছাড়াও একাধিক বৈধ ও অবৈধ বালি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এতদিন তাঁর অনুপস্থিতিতে বকলমে সমস্ত ব্যবসাই সামলেছেন রাজু। লতিফ ঘনিষ্ঠ রাজুর মৃত্যুর কারণ নিয়ে ক্রমশ জটিলতা বাড়ছে। ব্যবসায়িক টানাপোড়েন নাকি রাজনৈতিক শত্রুতা, নাকি তথ্য গোপন রাখতেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হল রাজু ঝাঁকে, উঠছে প্রশ্ন।
সম্প্রতি, আসানসোল-দুর্গাপুর এলাকার ইসিএলের কয়লা পরিবহণের বরাত পেয়েছিলেন রাজু। কিন্তু সেই কাজের দায়িত্ব পুরনো সঙ্গীদের দেননি। অথচ রাজুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় তাঁদের অনেককেই সিবিআই-ইডি-সিআইডি তলব করেছিল। তা নিয়ে মনোমালিন্য বাড়ছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজুর সঙ্গী লোকেশ সিংয়ের সিটি সেন্টারের অফিসে দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। গুলিও চলে। সেই অফিসে যাতায়াত ছিল রাজুরও। পুলিশ মনে করছে, রাজুকে ভয় দেখাতে গুলি ছোঁড়া হয়। এরপর কিছুদিনের মধ্যেই খুন করা হল রাজুকে। যা দেখে পুলিশের প্রাথমিক সন্দেহ, ব্যবসায়িক গোলমালের জেরেই শক্তিগড়ে খুন করা হল তাকে।