সৌরভ মাজি, বর্ধমান: সিঙ্গুরের রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যর পথেই কি হাঁটছেন কালনার তৃণমূল (TMC) বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু? তিনি কোথায় এই মুহূর্তে? এটাই আপাতত লাখ টাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর দুটি মোবাইল নম্বরের কোনওটিতেই তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। এসএমএস করলেও মিলছে না উত্তর। বাড়িতে তিনি নেই। দলীয় কার্যালয়েও তাঁর দেখা মিলছে না। পরপর দলীয় তিনটি সম্মেলনেও দেখা যায়নি কালনার দু’বারের তৃণমূল বিধায়ককে। এরপরই পূর্ব বর্ধমানে জোর গুঞ্জন, তিনি কি দল ছাড়ছেন? তৃণমূলের অন্দরেও বিশ্বজিৎ কুণ্ডুকে নিয়ে কানাঘুষো শুরু হয়েছে।
কালনা (Kalna) বিধানসভার মধ্যে রয়েছে কালনা শহর, কালনা-২ ব্লক কালনা-১ ব্লকের একাংশ। ব্লক সম্মেলনগুলিতে সম্প্রতি বিধায়ক বিশ্বজিৎবাবুকে দেখা যায়নি। কালনা শহরের সম্মেলনেও অনুপস্থিত ছিলেন। জেলার সব কেন্দ্রে বিধানসভা ভিত্তিক সম্মেলন হয়ে গেলেও বাকি ছিল শুধুমাত্র কালনা। বিধানসভা ভিত্তিক সম্মেলন ডাকার কথা বিধায়কের। কিন্তু তিনি তা ডাকছিলেন না। শেষপর্যন্ত রাজ্যের নির্দেশে সোমবার সেই সম্মেলন ডাকেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। সেই সম্মেলনেও অবশ্য দেখা মেলেনি বিধায়কের। তবে বিধায়কের অনুগামী বলে পরিচিত কয়েকজন হাজির ছিলেন সেখানে।
[আরও পড়ুন: তেখালিতে শুভেন্দুর বক্তব্যে নজর, সূর্যোদয় দিবসের বর্ষপূতিতে তিন সভা ঘিরে তপ্ত নন্দীগ্রাম]
দুর্গাপুজোর আগে রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদল করা হয়। তাঁর বিরোধী শিবিরের বলে পরিচিত কালনা পুরসভার প্রশাসক দেবপ্রসাদ বাগকে আনা হয় শহর তৃণমূলের সভাপতি পদে। তাতেই নাকি বিশ্বজিৎবাবুর গোঁসা হয়েছে বলে তৃণমূলের অন্দরের খবর। তারপর থেকে দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর। ঠিক এমনটাই হয়েছে সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের ক্ষেত্রে। হুগলিতে নতুন জেলা কমিটি ঘোষণার পরই তিনি অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের হুঁশিয়ারি দিয়ে দলত্যাগের জল্পনা উসকেছেন। কালনার বিধায়কও দুর্গাপুজোর পর দলীয় কোনও কর্মসূচিতে যাননি। তবে তিনি আলাদাভাবে বেশ কয়েকটি সভা করেন। সেখানে দলবিরোধী বেশ কিছু কথাও তাঁর গলায় শোনা যায় বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। এবার সম্মেলনগুলিতে গরহাজির থেকে দলের সঙ্গে দূরত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এদিকে, তাৎপর্যপূর্ণভাবে কালনা বিধানসভা তৃণমূল কার্যালয়ের নামে একটি সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট (যেটি বিধায়ক নিজে পরিচালা করেন) থেকে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে লেখা হয়েছে – ‘ছিলাম, আছি এবং থাকব।’
[আরও পড়ুন: করোনা কাঁটা, চলতি বছরে বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যশালী পৌষমেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত উপাচার্যের]
এ নিয়ে বিধায়কের অনুগামী বলে পরিচিত সোমনাথ পণ্ডিত সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “দলের পুরনোকর্মীদের কোনও গিুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। বিধায়ককে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। পোস্টারে তাঁর ছবি দেওয়া হয় না।” তৃণমূলের রাজ্যের মুখপাত্র দেবু টুডুর কথায়, “বিধায়ক কোনও সম্মলনেই আসেননি। বিধানসভার সম্মেলনও ডাকছিলেন না। তাই রাজ্যের নির্দেশে এই সম্মেলন হচ্ছে। বিধায়ক কোথায় জানা নেই। উনি অসুস্থ না কি কোথাও গিয়েছেন, তাও জানি না।” জেলা তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ জানান, “বিধায়কের সঙ্গে কথা বলা হবে এই বিষয়ে।”