স্টাফ রিপোর্টার: বাম-কংগ্রেসে জোট হল। প্রচারে যৌথ উদ্যোগে রাস্তায় নামার কথাও বললেন প্রদেশ সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury)। কিন্তু সিপিএম বা বামের ভোট কংগ্রেস, আর কংগ্রেসের ভোট বাম শিবিরে যাবে কি? জোট চর্চার মধ্যেই বড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে দুই জোট শরিকের মধ্যেই।
জোট হওয়ার পরও বামেরা কংগ্রেসকে ভোট দেয়নি বলে এর আগের একাধিক নির্বাচনে অভিযোগ উঠেছে। কখনও ঘটেছে উলটোটা। এবারও সেই প্রশ্ন প্রথমে ছিল। কিন্তু আসন রফা নিয়ে আলোচনা এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। জোট জটিলতা বাড়তেই আরও একবার সেই প্রশ্ন সামনে। এবং তা এসেছে কোচবিহারে জোট প্রার্থীর সামনে কংগ্রেসের প্রার্থী দিয়ে দেওয়ার ঘটনার জেরে। যাকে পুরুলিয়া আসন নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের ‘জেদাজেদি’র ফল বলে দাবি করেছিল কংগ্রেস। কোচবিহারে তাদের প্রার্থী পিয়া রায়চৌধুরীর স্বামী বিশ্বজিৎ সরকার প্রশ্ন তুলেছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্বের মনোভাব নিয়ে। তাঁর প্রশ্ন ছিল, “ফরওয়ার্ড ব্লক বলছে কংগ্রেসকে সমর্থন করি না, ওদের ভোট লাগবে না। এদিকে আমাদের প্রার্থী ছিল না। তাহলে আমাদের ভোটগুলোর কী হত? আমাদের কর্মী-সমর্থকরা কাকে ভোট দিতেন?” এই বাস্তব পরিস্থিতির কথা মেনে নিয়েছেন অনেকেই। কোচবিহারে সিপিএম আর ফরওয়ার্ড ব্লকের কিছু ভোট আছে। বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট থাকার পরও কোচবিহারে বামেদের ভোট যে কংগ্রেসের প্রার্থী পাবেন না এটাও ধরে নেওয়া যায়। কারণ সেখানে জোট প্রার্থী ফব-র।
[আরও পড়ুন: আগুনে গরমে পুড়বে গোটা দেশ, এপ্রিল-জুনে ভয়ংকর তাপপ্রবাহের সতর্কতা মৌসম ভবনের]
একই পরিণতি হতে পারে পুরুলিয়াতেও। কংগ্রেস শিবিরেই এই সন্দেহ। সেখানে কুড়মি ভোট এবার ফ্যাক্টর। তাদের প্রার্থীও দাঁড়িয়েছেন। বাম, কংগ্রেসের আলাদা কুড়মি সমর্থন থাকলেও সেই ভোট ভাগ হয়ে কুড়মিদের ঝুলিতে যেতে পারে বলে সন্দেহ প্রদেশ নেতৃত্বের। একইভাবে সেখানে ফব আর কংগ্রেসের মধ্যে প্রার্থী নিয়ে অশান্তি হওয়ায় কারও ভোটই কেউ পাবে না বলে অনুমান ফ্রন্ট নেতৃত্বের। সিপিএম পুরুলিয়ায় কংগ্রেসকেই সমর্থন দেবে বলে জানালেও ফব নেতৃত্বের দাবি, “আমাদের সঙ্গে নিশ্চয়ই সেখানে শত্রুতা করবে না ফ্রন্টের বাকি শরিকরা।”
একই পরিস্থিতি মালদহ উত্তর, বীরভূম, হাওড়া, হুগলি-সহ দক্ষিণবঙ্গের কম করে ১০টি জেলায়। মালদহ উত্তরে কংগ্রেসের প্রার্থী নিয়েই চাপা ক্ষোভ রয়েছে। ফলে প্রদেশ নেতৃত্বের যৌথ প্রচার-বার্তার পরও কংগ্রেসের অনেকে প্রচার এড়াতে পারেন বলে খবর। ফলে সেখানে বাম-কংগ্রেসে হাত ধরাধরি করে ভোটের কাজে কিছুটা ঘাটতি পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। এদিকে ফ্রন্টের অন্দরের খবর, বীরভূম আসন সিপিএম কংগ্রেসকে ছেড়ে ভুল করেছে বলে রিপোর্ট এসেছে। এই পরিস্থিতিতে সেখানকার সিপিএমের ভোট কংগ্রেসের ঘরে যাবে না বলে সন্দেহ।
দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কংগ্রেসের আসন নেই। বাম, বিশেষ করে সিপিএম সেই আসনগুলি ভাগ করে নিচ্ছে। যা নিয়ে প্রদেশের মধ্যে ক্ষোভ চরমে। সিপিআই, আরএসপি নেতৃত্বের বক্তব্য, “এই অস্থির-জোট পরিস্থিতিকে বাঁধতে একটা বার্তা দিয়েছেন প্রদেশ সভাপতি। তবে তাতে বেশ কিছু জায়গায় উল্টো ফল হবে বলেই ধারণা। কংগ্রেসের সমর্থন আমাদের দরকার। কিন্তু তা কতটা পাব তা নিয়ে সন্দেহ আছে।” ফব রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমরা কংগ্রেসকে কোথাও সমর্থন করছি না। কংগ্রেসও স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ভোট দেবে না। ফলে জোটের স্বার্থই তো থাকল না। এটা আমরা প্রথমেই সিপিএম এমনকী, ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে জানিয়েছিলাম।” অতীতে একাধিক ভোটে বাম ও কংগ্রেস ভোট পরস্পরের দিকে গেলেও এবার সেই সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন অধীর। তাঁর বক্তব্য, “সেটা একটা পর্ব ছিল। কিন্তু সময় বদলায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাবনাও বদলায়।” অন্যদিকে, উত্তরের রায়গঞ্জে প্রায় প্রথম দিন থেকেই যৌথ প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থী আলি ইমরান রামজ (ভিক্টর)। তাঁর কথায়, “অধীরবাবু ঠিকই বলেছেন। প্রচার যৌথভাবেই হবে। এখানে সব ভোটই জোটের প্রার্থী হিসাবে আমি পাব।”