বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: আড়াআড়ি ভাগ দল। লাগামহীন গোষ্ঠীকোন্দল দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। কমার কোনও লক্ষণ নেই। সব দেখেশুনে বিরক্ত বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। আর ভোটেই দাঁড়াবেন না। সিদ্ধান্তে অনড় আবদুল মান্নান। মান ভাঙাতে ময়দানে শীর্ষনেতৃত্ব। ঘনিষ্ঠরাও। জোটবদ্ধ দলকে বামেদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে। নইলে সিদ্ধান্ত এদিক-ওদিক হবে না। ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন বর্ষীয়ান এই নেতা।
মাস্টারমশাই। আজীবন কংগ্রেসি। সংসদীয় রাজনীতিতে মাথার চুল পাকিয়েছেন। বুক বাজিয়ে বলতে পারেন। একমাত্র তিনিই দল পালটাননি। ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন রাজনীতি শুরু কংগ্রেসে (Congress)। শেষ করবেনও কংগ্রেসেই। কিন্তু, পরিষদীয় রাজনীতিকে কি এবার বিদায় জানানোর পালা? জিজ্ঞাসা করলেই বিরক্তির সুরে বলেন, “আর কতদিন। অনেক তো হল।” চোখেমুখে স্পষ্ট হয় দলের বর্তমান নেতাদের ওপর তাঁর বিরক্তি। বিরোধী দলনেতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ। অথচ তাঁকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে অনেক সিদ্ধান্তই নেয় প্রদেশ নেতৃত্ব। এমনকী, তাঁর নিজের জেলা হুগলির ক্ষেত্রেও। সব ঘটনায় হাবেভাবে বিরক্তি প্রকাশ করলেও মুখে রা কাড়েন না আবদুল মান্নান।
[আরও পড়ুন: ‘রাজা-মন্ত্রী হওয়া যাবে না বুঝে মুকুট পরছেন’, ফের অনুব্রতকে নিশানা দিলীপের]
প্রদেশ সভাপতি থাকাকালীন প্রয়াত হন সোমেন মিত্র। পরবর্তী সভাপতি কে হতে পারেন এমন হাজারও জল্পনার মধ্যে ময়দানে নামেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান (Abdul Mannan)। অধীর চৌধুরিকে সভাপতি চেয়ে হাইকম্যান্ডকে চিঠি লেখেন। কয়েকদিনের মধ্যেই প্রদেশ সভাপতি হিসেবে অধীরের নাম ঘোষণা করে দিল্লি। দায়িত্ব পেয়েই নিজের মতো সংগঠন সাজাচ্ছেন তিনি। বিধানভবন সামলাতে মুর্শিদাবাদ থেকে শহরে এনেছেন ঘনিষ্ঠদের। এদিকে যে মান্নান অধীরকে সভাপতি করতে হাইকম্যান্ডের কাছে তদ্বির করেছিলেন তিনিই এখন বিধানভবনমুখী হন না। পারতপক্ষে পা মাড়ান না দলের রাজ্য দপ্তরের। প্রদেশ সভাপতির সঙ্গে সাংগঠনিক কোনও কথা থাকলে ফোনেই সেরে নেন। বরং ইদানীং বাম নেতৃত্বের সঙ্গে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বাম পরিষদীয় দলনেতার সঙ্গে জেলায় যান, যে কোনও কাজ সারেন সুজনের সঙ্গে কথা বলে। কান পাতলেই শোনা যায় অধীরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তলানিতে, মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধ। সম্পর্কের অবনতি হুগলি জেলার সংগঠনকে কেন্দ্র করে। এছাড়াও রয়েছে সংখ্যালঘু ইস্যু।
কানাঘুষো, জেলার দায়িত্বপ্রাপ্তদের তালিকা তৈরির সময় বিরোধী দলনেতার মতামত বা পরামর্শ নেওয়া হয় না। এমনকী, যে জেলার বিধায়ক তিনি সেই হুগলির তালিকা তৈরির সময়ও তাঁর সঙ্গে কথা বলা হয়নি বলে খবর। ভোটে আর দাঁড়াবেন না বলে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়ে রেখেছেন। তবে সিদ্ধান্তের কথা হাইকম্যান্ডকে এখনও জানাননি। জল কোনদিকে গড়ায় সেদিকে নজর রাখছেন। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে নিজের সিদ্ধান্তেই অনড় থাকবেন বলে জানিয়েছেন ঘনিষ্ঠদের।