সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: দু’যুগ পর কংগ্রেসের (Congress) নেতৃত্ব কোনও অ-গান্ধীর হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া সাড়লেন ন’ হাজার ৪৯৭ জন প্রদেশ ডেলিগেট। বুধবার বিকেল নাগাদ জানা যাবে মোটামুটি কত ব্যবধানে শশি থারুরকে (Shashi Tharoor) হারিয়ে দলের নতুন সভাপতি হতে চলেছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে (Mallikarjun Kharge)। ৩৬টি পোলিং স্টেশনেই নির্বিঘ্নে ভোটদানের পর বিক্ষিপ্তভাবে উঠল প্রশ্ন। কেন সাধারণ নির্বাচনের মত সভাপতি নির্বাচনে ‘নোটা’-র (NOTA) প্রয়োগ করা হল না। কংগ্রেসের একটি মহলের দাবি, সেক্ষেত্রে হয়তো রাহুল গান্ধীকে (Rahul Gandhi) দায়িত্ব দেওয়ার বার্তা দিয়ে বেশিরভাগ ভোট যেত নোটাতেই। তাই দলীয় সংবিধানকে কোনওরকম সংকটে না ফেলতেই এই সিদ্ধান্ত।
প্রায় ২২ বছর বাদে সোমবার হল কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন (Congress President Election)। দেশের প্রত্যেক ব্লক থেকে একজন করে নির্বাচিত প্রদেশ ডেলিগেট দলের নতুন সেনাপতি বেছে নিতে নিজেদের মতদান করলেন। ন’ হাজার ৯১৫ জনের মধ্যে ৯৬ শতাংশ ডেলিগেট নিজেদের রায় ব্যালটবন্দি করলেন। যে ৩৬টি কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার প্রায় সবক’টিতেই ৯০ শতাংশের বেশি পোলিং হয়েছে।পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস দপ্তরে ভোট দিয়েছেন ৮৮ শতাংশ ডেলিগেট। ২৪, আকবর রোডের সদর দপ্তরে ভোট দেন বিদায়ী অন্তর্বর্তীকালীন দলনেত্রী সোনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi), প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডা. মনমোহন সিং (Manmohan Singh) , প্রিয়াঙ্কা গান্ধী-সহ (Priyanka Gandhi) ৮৭ জন। সবার প্রথম ভোট দেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী তথা কর্মসমিতি সদস্য পি চিদাম্বরম (P Chidambaram)। ভোট দেওয়ার পর সোনিয়া বলেন, “এই দিনটার জন্য অনেকদিন ধরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলাম।”
[আরও পড়ুন: কেদার-বদ্রী দর্শনে প্রধানমন্ত্রী, এবারের দীপাবলি কাটাবেন উত্তরাখণ্ড সীমান্তে সেনাদের সঙ্গে]
কর্ণাটকের বেল্লারি জেলার সঙ্গনকাল্লুতে তৈরি হওয়া পোলিং স্টেশনে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে ভোট দেন ৫০ জন। এই দুই পোলিং স্টেশন ছাড়া কম ডেলিগেট বিশিষ্ট ছোট প্রদেশগুলিতে ১০০ শতাংশ পোলিং হয়েছে। এদিন সকালেই খাড়গেকে ফোন করেন থারুর। নিজেদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর দু’জনে মিলে কংগ্রেসের উন্নতির করার অঙ্গীকারও নেন। সদর দপ্তরে তৈরি হওয়া স্ট্রংরুমে রাখা হয়েছে ভোটবাক্স। সঙ্গে দিল্লি প্রদেশ কমিটির দু’টি বাক্স। রাতের মধ্যে রাজস্থান, হরিয়ানা থেকেও ব্যালট বাক্স প্রদেশ দপ্তরে চলে আসার কথা। বাকিগুলি আকাশপথে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসবে মঙ্গলবার। বুধবার সকাল দশটা থেকে শুরু হয়ে যাবে গণনা প্রক্রিয়া। একে একে প্রতিটি বাক্স খুলে একটি জায়গায় ঢালা হবে ব্যালট। প্রতিটি বাক্স খোলার পর ভাল করে মিশিয়ে দেওয়া হবে ব্যালট। যাতে কোন প্রদেশ থেকে কোন ব্যালট এসেছে তা বোঝা না যায়। এরপর শুরু হবে গণনা।
বুধবার বিকেলেই ঘোষণা হয়ে যাবে নতুন সভাপতির নাম। সেই মুহূর্ত থেকে অতীত হয়ে যাবেন সোনিয়া গান্ধী। তবে যিনিই নির্বাচিত হবেন, তাঁকে তখনই দলের সভাপতির পূর্ণাঙ্গ এক্তিয়ার দেওয়া হবে না। প্লেনারিতে অনুমোদন নেওয়ার পরই সভাপতির পূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার কথা নবতম সভাপতির। সেখানেই বেছে নেওয়া হবে নতুন কর্মসমিতি। তবে যেহেতু এবার কাউকে সভাপতি পদে বাছাই করা হয়নি, নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গোটা বিষয়টি নির্ধারিত হয়েছে, তাই প্লেনারি পর্যন্ত অপেক্ষা না করে সদর দপ্তরে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন সভাপতিকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তারপর তাঁর নির্ধারিত দিনে হতে পারে প্লেনারি। সাংবাদিক সম্মেলন করে গোটা বিষয়টি স্পষ্ট করেন কংগ্রেসের সেন্ট্রাল ইলেকশন অথরিটির চেয়ারম্যান মধুসূদন মিস্ত্রি। সেখানে ঘুরপথে আরও একবার স্পষ্ট হয়ে যায় নির্বাচনে কার পাল্লা ভারি। নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে শশি থারুর নতুন কোনও আপত্তি করেছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে কিছুটা ব্যঙ্গ করে বলেন, “যত সময় উনি চিঠি লিখতে খরচ করেছেন, তা যদি প্রচারে দিতেন আরও কিছু ভোট বেশি পেতে পারতেন।”
[আরও পড়ুন: ‘ভারত জোড়ো যাত্রা বন্ধ করে হিমাচল ও গুজরাট যান’, রাহুল গান্ধীকে আরজি কংগ্রেস নেতার]
এই বিশাল কর্মকাণ্ডের মাঝেই প্রশ্ন ওঠে কেন সভাপতি নির্বাচনে থাকল না ‘নোটা’-র বিকল্প। এক সর্বভারতীয় সম্পাদকের যুক্তি, “সেক্ষেত্রে বেশিরভাগ ভোটই নোটায় পড়তে পারত। সবাই যে ফের রাহুলজিকেই দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন, তা আর কারও অজানা নয়। তাই নোটায় ভোট দিয়ে রাহুলজিকে যদি সবাই বার্তা দিতে যেতেন, সেক্ষেত্রে সাংবিধানিক সংকট দেখা দিত।” তবে কী হলে কী হত, এই বিতর্ক যমুনায় ছুঁড়ে ফেলে সবাই বুধবারের অপেক্ষায়। হাইকমান্ডের কাছের প্রার্থী মল্লিকার্জুন খাড়গের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া কার্যত সময়ের অপেক্ষা। দেখার শুধু শশি থারুরের থেকে কত আলোকবর্ষ আগে থাকেন তিনি। এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।