সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গোটা প্রদেশ করোনা ত্রাসে কম্পমান। চিনে মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে ব্যস্ত চিকিৎসকরা। কিন্তু চিনের হুবেই প্রদেশে ক্যানসারের মতো দুরূহ রোগাক্রান্তরাও রয়েছেন। করোনার দাপটে যাঁদের চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। তেমনই এক মা-মেয়ের অসহায় পরিস্থিতি ধরা পড়ল ইউহানের শুনশান পথে। ক্যানসার আক্রান্ত মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তায় বেরিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে আটকে রইলেন তাঁরা। ইউহানের বাইরে বেরলে করোনা সংক্রমণ বাড়বে বলে রাস্তার চেকপয়েন্টেই আটকে দেওয়া হয় তাঁদের। ইয়াংসে নদীর সেতুর উপর দাঁড়িয়ে অসহায় নারীর কাতর প্রার্থনাও প্রথমে কানে তুললেন না নিরাপত্তা রক্ষীরা। পরে অবশ্য অ্যাম্বুল্যান্স গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে।
বছর ছাব্বিশের তরুণী হু পিং লিউকিমিয়ায় আক্রান্ত, রক্তে বাসা বেঁধেছে মারণ কর্কটরোগ। কেমোথেরাপির জন্য তাঁকে হুবেই থেকে যেতে হয় জিউজিয়াংয়ে। এই সপ্তাহেও মা লু ইয়েজিন মেয়েকে নিয়ে জিউজিয়াংয়ে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েছিলেন। ইয়াংসে নদীর সেতু পেরিয়ে যেতে হয় জিউজিয়াংয়ে। কিন্তু চেকপয়েন্টে পৌঁছে থমকে যেতে হল মা-মেয়েকে। কিছুতেই নিরাপত্তা রক্ষীরা তাঁদের গন্তব্যে যেতে দিলেন না।
করোনা সংক্রমণে চিনে হু হু করে বাড়ছে মৃত, আক্রান্তের সংখ্যা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগেই হুবেই সংলগ্ন অন্তত ১৮টি শহর অবরুদ্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াতের জন্য বাস, ট্রেনও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গুরুতর প্রয়োজন ছাড়া শহরের বাইরে বেরনো যাবে না, এই মর্মে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
[আরও পড়ুন: পঙ্গপালের আক্রমণে নাস্তানাবুদ পাকিস্তান, দেশজুড়ে জারি জরুরি অবস্থা]
কিন্তু চিকিৎসার স্বার্থে হু পিংয়ের ইউহানের বাইরে যাওয়া তো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এটা তাঁর বাঁচার লড়াই। অথচ সে কথা কে বুঝছেন? যেমন বুঝছেন না প্রহরীরা। কাতর স্বরে লু ইয়েজিন তাঁদের বললেন, “দয়া করে আমাদের যেতে দিন। চিকিৎসার জন্য মেয়েকে জিউজিয়াংয়ে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি।” কিন্তু কেউ তাঁদের কথায় কর্ণপাত করেননি। সেতুর উপর দাঁড়িয়ে কনকনে ঠান্ডায় তখন কাঁপছেন হু পিং। ক্যানসার আক্রান্ত মেয়ের গায়ে কম্বল জড়িয়ে কোনওক্রমে তখন মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছেন লু। আর বলে যাচ্ছেন, “আমি মেয়েকে বাঁচাতে চাই। আর কিছু দরকার নেই। আমাদের যেতে দিন।” ওদিকে মাইক্রোফোনে ঘোষণা হয়ে চলেছে, শহরের বাইরে কাউকে বেরতে দেওয়া যাবে না।
[আরও পড়ুন: করোনার প্রকোপ, চিনা নাগরিকদের অনলাইন ভিসা ইস্যু সাময়িক স্থগিত ভারতে]
তবে লু’র এত প্রচেষ্টা বিফলে গেল না শেষপর্যন্ত। দীর্ঘ সময় নষ্টের পর নিরাপত্তা রক্ষীদের মন গলল। ফোনে অ্যাম্বুল্যান্স ডাকা হল। কিন্তু তারপরও সময় নিয়মের বেড়াজাল শিথিল হল না এতটুকুও। অ্যাম্বুল্যান্সে ওঠার আগে থার্মাল স্ক্যানারে পরীক্ষা হল হু পিংয়ের। তাঁর শরীরের তাপমাত্রা সন্দেহজনক না হওয়ায় শেষে হাসপাতালের পথ ছেড়ে দিলেন নিরাপত্তা রক্ষীরা। মাঝখান থেকে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গেল ক্যানসার আক্রান্ত তরুণীর।
The post করোনার জেরে চিনে ব্যাহত চিকিৎসা পরিষেবা, দীর্ঘক্ষণ পথে আটকে ক্যানসার আক্রান্ত তরুণী appeared first on Sangbad Pratidin.