গৌতম ব্রহ্ম: কলকাতার প্রথম করোনা আক্রান্ত ফিরেছিলেন লন্ডন থেকে। চিকিৎসকদের পরামর্শকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কলকাতার বুকে ঘুরে বেরিয়েছিলেন সেই আমলাপুত্র। দ্বিতীয় আক্রান্ত তরুণের বিরুদ্ধে অভিযোগটা একই। এবার সেই কাঁটায় বিদ্ধ কসমেটিক সার্জেন মনোজ খান্না। দিন কয়েক আগেই ম্যাঞ্চেস্টার থেকে দুবাই হয়ে ফিরেছিলেন তিনি। এরপর কোয়ারেন্টাইনে থাকার বদলে ক্লাবে ঘুরেছেন। খেলেছেন টেনিস। এমনকী সেই সময় তিনি রোগীও দেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শেষপর্যন্ত শুক্রবার সকালে গলায় ব্যথা ও জ্বর নিয়ে বেলেঘাটা আইডিতে ভরতি হন ওই চিকিৎসক। সঙ্গে তাঁর ছেলেও ভরতি হয়েছেন। খাস কলকাতায় এই ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পাশাপাশি এক চিকিৎসকের এ হেন ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ আচরণে স্তম্ভিত শহরবাসী।
বেলেঘাটা আইডি-তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মনোজ খান্না জানান, এক আত্মীয়ের বিয়েতে ম্যাঞ্চেস্টার গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে দুবাই হয়ে শহরে ফিরেছেন। সেই একই বিমানে ছিলেন সাংসদ তথা অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীও। শহরে ফিরে গত দু’দিন কোনও সতর্কতামূলক ব্যবস্থাই নেননি মনোজবাবু। তিনি জানিয়েছেন, অল্প কিছুক্ষণের জন্য ক্লাবে গিয়েছিলেন। সেখানে গল্পগুজবের পাশাপাশি টেনিসও খেলেন। সেই সময় বেশ কয়েকজন তাঁর সংস্পর্শে আসেন। এরপরেও তাঁর হুঁশ ফেরেনি। সেই সময় মনোজবাবু বেশ কয়েকজন রোগীও দেখেন বলেও অভিযোগ। এরপর বৃহস্পতিবার রাত থেকে তাঁর জ্বর আসে। শুরু হয় গলাব্যথাও। তারপর শুক্রবার সকালেই তিনি তড়িঘড়ি বেলেঘাটা আইডিতে ভরতি হন। তাঁর লালারস পরীক্ষা করতে পাঠনো হয়েছে।
[আরও পড়ুন : কড়া ভাষায় ইস্তফাপত্র, বিকাশ ভবনে অপমানের পর অধ্যক্ষের পদ ছাড়লেন বৈশাখী]
মনোজবাবুর সাফাই, “আমি যখন ব্রিটেন থেকে ফিরি তখন তা করোনা আক্রান্ত দেশের তালিকাভুক্ত ছিল না। তাই আমি শারীরিক পরীক্ষা করাইনি।” অথচ বেশকিছুদিন ধরেই ব্রিটেন ফেরত ভারতীয়দের আইসোলেশনে রাখা হচ্ছিল। এহেন একজন নামি চিকিৎসকের কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজে স্তম্ভিত শহরবাসী। তবে চিকিৎসকদের এই ধরণের কাজের উপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানান ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শান্তনু সেন। তিনি জানান, যারা এই ধরনের কাজ করছে, তাঁদের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তাঁদের IMA-এর সদস্যপদ বাতিল করা হবে। পরে তাদের রেজিস্ট্রেশনও বাতিল করা হবে।”
[আরও পড়ুন : ‘বেসরকারি সংস্থাগুলি কর্মীদের উপস্থিতি ৫০% করুন’, করোনা মোকাবিলায় পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর]
কে এই মনোজ খান্না? গুগল সার্চ করলে দেখা যাবে, কসমেটিক সার্জেন হিসেবে তাঁর বেশ নামডাক রয়েছে। একাধিক সেলিব্রিটির নানারকম কসমেটিক সার্জারি তিনি করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য, ক্রিকেটার হর্ষ ভোগলের চুল ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেছিলেন। অরুণলাল, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ইউসুফ পাঠান, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, গোবিন্দা-মতন সেলিব্রিটিদের সার্জারি করেছেন তিনি। পেয়েছেন মাদার টেরেসা আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। এহেন তারকা চিকিৎসকের কীর্তি দেখে হতবাক শহরবাসী।
The post নির্দেশিকাকে থোড়াই কেয়ার চিকিৎসকের, লন্ডন থেকে ফিরে ক্লাবে খেললেন টেনিস appeared first on Sangbad Pratidin.
