shono
Advertisement
Jemimah Rodrigues

দাগ আচ্ছে হ্যায়! এগারোর গম্ভীরকে মনে করিয়ে জেমাইমা দেখালেন এভাবেও ফিরে আসা যায়

ম্যাচশেষে তাঁর আনন্দাশ্রু ঘিরে তৈরি হল আবেগের বিস্ফোরক।
Published By: Biswadip DeyPosted: 12:00 AM Oct 31, 2025Updated: 12:47 PM Oct 31, 2025

বিশ্বদীপ দে: সময় কেবলই এগিয়ে চলে তা নয়। সে মাঝে মাঝে পুরনো সময়কে ফিরিয়েও দেয়। বৃহস্পতিবার অজিদের রানের পাহাড় ডিঙিয়ে ভারতের মেয়েরা যেভাবে ফাইনালে পৌঁছলেন তা অবিশ্বাস্য! আর সেই জয়ে যিনি চালকের আসনে ছিলেন তিনি নিঃসন্দেহে জেমাইমা রদ্রিগেজ (Jemimah Rodrigues)। এদিন তাঁর সঙ্গে এক ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেটারের ছবি পাশাপাশি রেখে অনেকেই পোস্ট করছেন। আসলে দু'জনেরই জার্সিতে যে মাটি মাখা! ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে অবশ্য শতরান পাননি গৌতম গম্ভীর। কিন্তু তাঁর ৯৭ রানের ইনিংসটিই ছিল ম্যাচের সর্বোচ্চ। জেমাইমা এদিন লড়াকু শতরান পেলেন। অবশ্য ফাইনাল নয়, এটা সেমিফাইনাল। কিন্তু শক্তিশালী অজিদের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে তিনশো তাড়া করার সময় যে চাপ তাঁকে নিতে হল তা ফাইনালের চেয়ে কম বোধহয় নয়! দুই লড়াকু ব্যাটার আজ পাশাপাশি হলেন, কাদামাখা জার্সিতে দেশকে গর্বিত করার মহাকাব্য রচনা করে। যে মহাকাব্যের শিরোনাম বোধহয় হতে পারে 'দাগ আচ্ছে হ্যায়'! কে বলবে মাঝে চোদ্দোটা বছর! ২০১১ আর ২০২৫ যেন এক সরলরেখায় দাঁড়িয়ে গিয়েছে।

Advertisement

এদিন দলকে জিতিয়ে ওঠার পর জেমাইমার আনন্দাশ্রু দেখে চোখের জল সামলাতে পারেননি অনেকেই। একটা ঘোরের মধ্যে থেকে যেন তিনি বলছিলেন, "ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। এটা আমি একা করিনি। তিনিই আমাকে সামলেছেন। মা, বাবা, কোচ এবং আমার উপর যাঁরা বিশ্বাস রেখেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ। খুবই কঠিন একটা যাত্রা ছিল। এখন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।" আসলে এবারের প্রতিযোগিতাটা তাঁর কাছে যেন একটা রোলার কোস্টার রাইডের মতো। দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছিল। আবার সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে সোশাল মিডিয়ায় ট্রোলও হতে হচ্ছিল। তবু তিনি জানতেন, হাতে ধরা উইলোর তক্তাতেই বোধহয় সব হিসেব মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব। সেটাই দিলেন আজ। হরমনপ্রীতের সঙ্গে নজির গড়া পার্টনারশিপ। তারপরও অনমনীয় জেদে ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে থাকা। শতরানের সাফল্যেও ফোকাস নড়েনি। জানতেন শেষ করে না ফিরলে হবে না। যদিও ৮২ রানে একবার সহজ ক্যাচ তুলে বেঁচেছেন। তবু... সাহসীর সঙ্গেই তো ভাগ্য শেষপর্যন্ত থেকে যায়।

ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, “জেমিকে বর্ণনা করার জন্য একটাই উপযুক্ত কথা, ‘ছোটা প্যাকেট, বড়া ধামাকা’। সবথেকে ভালো লাগে যেটা, ওর মুখে সব সময় হাসি লেগে থাকে। পরিস্থিতি যেমনই আসুক না কেন, ও কিন্তু সব সময় শান্ত থাকে।” জেমাইমা যে বিশ্বকাপের আসরে ভালো খেলবে সেই ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন তিনি। জেমাইমা দেখালেন সূর্য ভুল কাউকে 'ডার্ক হর্স' ধরেননি।

২০১৮ সালে ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছিল জেমাইমার। সাত বছর পর বিশ্বকাপে অভিষেক হল। এদিনের শতরানই তাঁর বিশ্বকাপে প্রথম শতরান। ওয়ানডে কেরিয়ারের তৃতীয়। কিন্তু প্রতিযোগিতার শুরুটা ভালো ছিল না। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬৬ ছাড়া ব্যর্থতাই ছিল সঙ্গী। একটা ম্যাচে বাদও পড়েন। দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তো শূন্যতে আউট হন। প্রথম সাত ম্যাচে ওই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অর্ধশতরান ছাড়া সেভাবে সাফল্য আসেনি। কিন্তু একসপ্তাহ আগে কিউইদের বিরুদ্ধে করেন অপরাজিত ৭৬। বাংলাদেশ ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ আসেনি। এদিন করে গেলেন অপরাজিত ১২৭। নিজেকে তুলে নিয়ে গেলেন আরও উঁচুতে।

মাত্র কয়েকদিন আগের কথা। মুম্বইয়ের খার জিমখানার সদস্যপদ বাতিল হয়েছিল জেমাইমার। অভিযোগ ছিল, তাঁর বাবা ইভান রদ্রিগেজ নাকি ক্লাব চত্বরে ধর্মীয় অনুশীলন করছিলেন। আর এর কারণে সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায় জেমাইমারও। তাঁকে তুমুল ট্রোলড হতে হয়। অনেক নেটিজেন তাঁকে 'ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের মহম্মদ রিজওয়ান' বলেও কটাক্ষ করেন। পাক ক্রিকেটার রিজওয়ান মাঠের মধ্যে ধর্মীয় প্রচারে অভিযুক্ত এক নাম। এছাড়াও জেমাইমাকে ট্রোলড হতে হয়েছে নানান রিলস পোস্ট করেও। আজ সেই সব সমালোচকদের নিশ্চুপ করিয়ে দিলেন জেমাইমা। বুঝিয়ে দিলেন, ঘুরে দাঁড়াতে জানলে কোনও পরিস্থিতিই প্রতিকূল নয়। দেখিয়ে দিলেন, এভাবেও ফিরে আসা যায়।

আর এখানেই তিনি গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে একাসনে বসে পড়লেন। ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালের জৌলুস যেন স্রেফ ধোনিকে ঘিরেই। তবু শচীন-শেহওয়াগ ফিরে যাওয়ার পর 'ছোকরা' কোহলিকে নিয়ে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন গম্ভীরই। তিনি যদিও শেষ করে আসতে পারেননি। শতরানটাও ফেলে এসেছিলেন বাইশ গজে। জেমাইমা ধৈর্য ধরে টিকে থেকে দু'টোই অর্জন করলেন।

আজকের ম্যাচের সেরা পুরস্কার জেমাইমা ছাড়া আর কেই বা পেতেন! তবু নিজেকে নিয়ে আলাদা করে ভাবতে চাইছেন না তিনি। খেলার শেষে পরিষ্কার বলে গেলেন, ''আমার পঞ্চাশ বা একশো নয়, আজকের দিনটা ভারতের জয়ের গল্পকথা।'' নিঃসন্দেহে কথাটা সত্যি। তবু এদিনের আলোর মুকুটটা যে জেমাইমারই মাথায়, তা অস্বীকারই বা করা যায় কীভাবে!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে অবশ্য শতরান পাননি গৌতম গম্ভীর। কিন্তু তাঁর ৯৭ রানের ইনিংসটিই ছিল ম্যাচের সর্বোচ্চ।
  • জেমাইমা এদিন লড়াকু শতরান পেলেন। অবশ্য ফাইনাল নয়, এটা সেমিফাইনাল।
  • তাঁদের কাদামাখা জার্সির এই দুই ছবি যেন কীভাবে মিলিয়ে দিল তাঁদের।
Advertisement