রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: অষ্টাদশ আইপিএল সবেমাত্র তার উষালগ্নে পদার্পণ করেছে। গোটা কতক খেলা হয়েছে। গত আইপিএলের চ্যাম্পিয়ন কেকেআরও নেমে পড়েছে। ইডেনে আরসিবির বিরুদ্ধে তারা হেরেছে। কিন্তু গুয়াহাটিতে রাজস্থান রয়্যালসকে তারা অনায়াসে পর্যদুস্ত করেছে। দেখতে গেলে, রাজস্থান-বধ উত্তর নাইট শিবিরে শান্তি ফেরার কথা। কিন্তু কেকেআরের জয়কে নেপথ্যে পাঠিয়ে সর্বাগ্রে মঞ্চ দখল করছে তাদের ঘরের মাঠ। যার নাম-ইডেন পিচ!

বিরাট কোহলি-ফিল সল্টদের কাছে উদ্বোধনী ম্যাচ হারার পর অভিযোগের পথে না হেঁটে নাইট অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে বলে যান যে, ইডেনে ঘূর্ণি উইকেট পেলে ভালো হয়। তবে তাঁরা কোনও অভাব-অভিযোগ করছেন না। প্রত্যুত্তরে ইডেন কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যয় সে দিন রাতেই 'সংবাদ প্রতিদিন'-কে বলেন, পিচের চরিত্র বদলানো সম্ভব নয়। দেখতে গেলে, দু'জনের একজনও ভুল কিছু বলেননি। রাহানে নাইট অধিনায়ক। ইডেন তাঁর ঘরের মাঠ। সেখানে স্পিন-সহায়ক পিচ চাওয়া অপরাধ নয়। ঠিক তেমনই সুজন যা বলেছেন, অন্যায্য নয়। ইডেন পিচ বিগত বহু বছর ধরেই গতিসম্পন্ন। ভারতীয় বোর্ড প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ পিচের পুরস্কার প্রাপ্ত। সেই পিচকে রাতারাতি দুরন্ত ঘূর্ণিতে রূপান্তর করা কী করে সম্ভব?
আসলে গণ্ডগোলটা করেছেন দু'জন। আইপিএলের দুই ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে এবং সাইমন ডুল। দ্বিতীয়জন আবার প্রাত্তন নিউজিল্যান্ড পেসার। পিচ নিয়ে ইডেন কিউরেটরের মন্তব্য এ দিন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার পর ভোগলে বলে দেন, তিনি কেকেআরে থাকলে সুজনের মন্তব্যে তীব্র হতাশ হতেন। তিনি বলে দেন, "রাহানে ১২০ রানের পিচ চাইছে না। রাহানে এমন পিচ চাইছে, যেখানে বোলারদের জন্য কিছু থাকে।" ডুল আবার এক কদম এগিয়ে মন্তব্য করে বসেন, "ফ্র্যাঞ্চাইজি স্টেডিয়ামের ভাড়া দিচ্ছে। তার পরেও যদি নিজেদের পছন্দের উইকেট না পায়, তা হলে অন্যত্র ঘরের মাঠ নির্বাচন করা উচিত। আর খেলা নিয়ে বিবৃতি দেওয়া কিউরেটরের কাজ নয়। তার জন্য উনি টাকা পান না।" অর্থাৎ, প্রান্ডন নিউজিল্যান্ড পেসার যা বলেছেন, তার মর্মার্থ হল, কেকেআর ইডেন বাদে অন্যত্র খেলুক। অন্য ঘরের মাঠ দেখুক!
যে বিবৃতি হাস্যকর। ডুল সাহেব জানেন না যে, ভারতীয় বোর্ডের নির্দেশিকা রয়েছে আইপিএলে পিচ নিয়ে কোনও রকম খবরদারি বরদাস্ত না করতে। তা হলে? আশ্চর্যজনক বরং সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য। বৃহস্পতিবার রাতে ডুলের মন্তব্য নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রথমে তিনি বললেন যে, সাইমন ডুলকে, তিনি জানেন না। তিনি কী বলেছেন, না জেনে তিনি কিছু বলবেন না (অথচ ততক্ষণে গোটা ভারতবর্ষ জেনে গিয়েছে)। দ্বিতীয়ত, এ নিয়ে পুনরায় সিএবি প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ফোনটা রেখে দিতে। যা অতীব অবাক করা। কারণ ডুল আদতে ইডেন কিউরেটর নিয়ে বলে প্রকারান্তরে সিএববি-র অপমান করে গিয়েছেন। সেখানে সংস্থা থেকে একটা বিবৃতি আসবে না? কেউ মন্তব্য করবেন না? কেউ পাল্টা ডুলকে বলবেন না, কিউরেটরকে অর্থ আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি দেয় না। কস্মিনকালেও দেয়নি।
যাক গে যাক। ডুলের মন্তব্য সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন যাঁরা, তাঁদের কেউ কেউ বলছিলেন, গতবার ইডেনের উইকেট একই রকম ছিল। আর সেখানে খেলেই কেকেআর চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তা হলে এবার একটা ম্যাচ দেখেই এত হইচই কীসের? তা ছাড়া রাহানে একবারও বলেননি, ইডেন পিচে তাঁরা অখুশি। বলেছেন, বল ঘুরলে ভালো। সেটা তো রয়েছে। আরসিবি ম্যাচে ক্রুণাল পাণ্ডিয়া বাঁ হাতি স্পিনে তিনটে উইকেট নিয়েছেন। সুয়াশ শর্মা দুর্ধর্ষ গুগলিতে আন্দ্রে রাসেলকে বোল্ড করেছেন। বিপক্ষ বোলারদের একটা ভালো দিন কি যেতে পারে না? কেকেআর কি একদিন খারাপ খেলতে পারে না? একটা ম্যাচ দেখেই এত দোষারোপের কী আছে?
সুজনকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি কিছু বললেন না। তবে শোনা গেল, রাহানেদের মতকে প্রাধান্য দিয়ে আগামী ৩ এপ্রিল সানরাইজার্স-কেকেআর ম্যাচের পিচ কিছুটা ঘূর্ণি-ঘেঁষা করারই চেষ্টা হবে। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের কেউ কেউ বললেন যে, তাই বলে আগামী ম্যাচে ইডেন কখনও চিপক হয়ে যাবে না। সেটা সম্ভব নয়। সেটা করতে গেলে আবার আমূল ইডেন পিচের চরিত্র বদলে ফেলতে হবে। রাতারাতি র্যাঙ্ক টার্নার করতে গেলে, পিচ আন্ডারপ্রিপেয়ার্ড হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেকেআর ৮০ অলআউট হয়ে গেলে তার দায় তখন কে নেবে? আরও বলা হল, এক-একটা পিচের চরিত্র এক-এক রকম হয়। রাজকোটের পিচ কখনও ধরমশালার মতো হবে না। ঠিক তেমনই ইডেনর পিচও চিপকের মতো করে ফেলা সম্ভব নয়। ডুল নিজেও কি পারবেন রাতারাতি ওয়েলিংটনের পিচ নাগপুরের মতো করে ফেলতে? কেউ কেউ সঙ্গে জুড়ে দিলেন, প্রতিটা টিম পিচ বুঝে নিলাম থেকে প্লেয়ার কেনে। চেন্নাই সুপার কিংস যেমন নিলাম থেকে রাশি-রাশি উচ্চমূল্যের পেসার না কিনে স্পিনার নেয়। কারণ, তারা জানে চিপকের বাইশ গজে বল ঘুরবে। সে রকম বুঝলে কেকেআরও তাই করতে পারত। কেউ তো তাদের বলেনি মিচেল স্টার্ককে ছেড়ে দিতে। তা ছাড়া বছরে দু'মাস আইপিএল হয়। তার জন্য পিচ চরিত্র সম্পূর্ণ বদলে ফেলা যায় নাকি? আর ফেলা হবেও বা কেন? যেখানে ইডেন শ্রেষ্ঠ পিচের বোর্ড সম্মান, সুজন সেরা কিউরেটরের পুরস্কার একাধিক পেয়েছেন? পাঠক, উত্তর আছে?