শিলাজিৎ সরকার: বারামুলার গুলাম নবি দার পেশায় সরকারি স্কুলের শিক্ষক। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার। তিনি চাইতেন, ছেলে মন দিয়ে পড়াশোনা করুক। বড় হয়ে ডাক্তার হোক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছেলের মাথায় চেপে বসেছিল ক্রিকেটের ভূত। যা নিয়ে গুলাম বিশেষ খুশি ছিলেন না।
তবে মঙ্গল-সন্ধ্যার পর মনে হয় না ছেলের সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে গর্বিতই হবেন গুলাম। ওহ, ছেলের নামটাই তো বলা হয়নি। আকিব নবি দার। আইপিএলের মিনি নিলামে এদিন যে কাশ্মীরী পেসারকে ৮.৪০ কোটি টাকা খরচ করে দলে নিয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালস। আসলে, রনজি ট্রফিতে গত বছর থেকেই ধারাবাহিকভাবে দুরন্ত বোলিং করছেন আকিব। ফলে ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁকে নিয়ে আলোচনা ছিল তুঙ্গে। এবার সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টিতে ৭ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেল, সাদা বলেও একই রকম কার্যকর তিনি। ফলে নিলামে আকিব যে 'ফোকাসে' থাকবেন, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল না ক্রিকেট মহলের।
অথচ বাবার কথা মেনে চললে, ক্রিকেটার হওয়াই হত না তাঁর। বছর উনত্রিশের আকিব (Aquib Nabi) বলছিলেন, "আমি পড়াশোনায় ভালো ছিলাম। তাই বাবা সবসময় বলত, আমি যেন পড়াশোনাটা মন দিয়ে করি। বাবা চেয়েছিল, আমি যেন ডাক্তার হই। তবে আমি ক্রিকেটে চলে আসি। খেলা ছাড়ার কোনও ভাবনাই আমার ছিল না। প্রথমে আমার পরিবার চায়নি যে আমি খেলাধূলা নিয়ে এত মাতামাতি করি। কিন্ত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবাই মেনে নিয়েছে।" এদিনের পর আকিবের সিদ্ধান্ত যে বারামুলার দার পরিবারকে গর্বিত করছে, বলাই যায়।
আইপিএলের আগে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ট্রায়ালে গিয়েছিলেন আকিব। আরও কয়েকটা ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে যোগাযোগ করেছিল তাঁর সঙ্গে। পরপর ম্যাচ থাকায় ট্রায়ালে যেতে পারেননি। তারপরও আকিব আশাবাদী ছিলেন যে, কোটি টাকার ক্রিকেট লিগে ঠিক টিম পেয়ে যাবেন। হলও তাই। এমনিতে লাল বলের বোলার হিসাবেই ঘরোয়া ক্রিকেটে পরিচিত আকিব। তবে সাদা বল, বিশেষত টি-টোয়েন্টি বোলিংয়ের জন্য নিজেকে বিশেষভাবে তৈরি করেছেন তিনি। "টি-টোয়েন্টি বোলিংয়ের জন্য আলাদাভাবে পরিশ্রম করি। স্লোয়ার বাউন্সার, ওয়াইড ইয়র্কারের মতো ডেলিভারি নিয়ে কাজ করেছি। ম্যাচে ব্যবহারও করি”, বলছিলেন ডেল স্টেইনের একনিষ্ঠ ভক্ত আকিব।
কাশ্মীরে সারা বছর প্র্যাকটিস করাটাই চ্যালেঞ্জ। সেখানে কীভাবে প্রস্তুতি সারেন? আকিবের জবাব, "যদি খেলার মানসিকতা থাকে, কিছুই বাধা দিতে পারে না। আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টি তেমনই। আমি সবকিছু ভুলে শুধু ক্রিকেটে ফোকাস করি। যখন খুব বেশি ঠাণ্ডা পড়ে, তখন বোলিং সেভাবে করা যায় না। তাই বিভিন্ন ফিটনেস ড্রিলে বেশি সময় বরাদ্দ করি।” সেই পরিশ্রমের ফলই যেন মঙ্গলবার পেলেন আকিব।
