মনোজ তিওয়ারি: বিরাট কোহলির টেস্ট থেকে অবসরের পোস্ট দেখার পর থেকেই মনটা বেশ খারাপ। পুরোনো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। বোর্ডের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ছিল। বিরাট তখন অনুর্ধর্ব ১৯ বিশ্বকাপ জিতে এসেছে। আমি 'সিবি' সিরিজ খেলে ফিরেছি। ওই অনুষ্ঠানেই বিরাটের সঙ্গে প্রথম দেখা। টুকটাক কথাবার্তা হয়েছিল। তারপর ঘরোয়া ক্রিকেটে ওর বিপক্ষে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছি। এখনও মনে আছে দিল্লির হয়ে ওয়ান ডে'তে বাংলার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলেছিল। ওকে যত দেখেছি তত মুগ্ধ হয়েছি। ক্রিকেটের প্রতি কী দায়বদ্ধতা। ওই বয়স থেকেই সেরা হওয়ার কী অদম্য ইচ্ছে।
তারপর ভারত 'এ' টিমের হয়ে খেলেছি। স্মৃতি যদি খুব বেইমানি না করে, তাহলে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আমাদের ম্যাচ ছিল। ভারত 'এ' টিমের হয়ে আমাদের ভালো এক পার্টনারশিপ ছিল। বিরাট সেঞ্চুরি করেছিল। আমি আশির কাছাকাছি রান করেছিলাম। ওই ইনিংসের পরই দিলীপ বেঙ্গসরকারের চোখে পড়ে যায় বিরাট। তারপর ভারতীয় টিমে সুযোগ পেয়ে যায়। তখন থেকেই বিরাটের মধ্যে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করতাম। সেরা হওয়ার ইচ্ছে। ওর কথাবার্তা, শরীরীভাষাতে সেটা বারবার ফুটে উঠত। ওর জীবনে দু'নম্বর বলে কিছু ছিল না। প্র্যাকটিসেও দু'নম্বর হতে চাইত না। সবসময় সেরা হতে চাইত। লক্ষ্যই ছিল এক নম্বর হওয়া। সেভাবে নিজেকে সবসময় প্রস্তুত করত। নেটে পড়ে থাকত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কী জেদ। সেরা হয়ে দেখিয়েও দিয়েছে।
বিরাটের আগ্রাসন নিয়ে যে এত কথা হয়, সেটা ভারতীয় টিমে আসার পর হয়নি। আগে থেকেই তা একইরকম ছিল। রাজ্য দলের হয়ে ম্যাচ হোক কিংবা ভারত 'এ' ম্যাচ, আগ্রাসী ব্যাপারটা ওর মধ্যে সবসময় ছিল। ফিটনেস নিয়ে কী অসম্ভব খাটাখাটনি করেছে, সেটাও খুব কাছ থেকে দেখেছি। অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপ খেলে আসার পর ফিটনেস নিয়ে একটু সমস্যা ছিল। একটু মোটা ছিল। তখন আমি নিজে প্রচণ্ড ফিট। বিরাট ফিটনেস নিয়ে কথা বলত আমার সঙ্গে। ও বুঝে গিয়েছিল, বিশ্ব ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ হতে গেলে অসম্ভব ফিট হতে হবে। সেই অনুযায়ী ডায়েট চার্ট তৈরি করেছিল। নিজের পছন্দের খাবার-দাবার সেই লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দেয়। তারপর ভারতীয় ক্রিকেটে বিরাটের ফিটনেস বেঞ্চমার্ক হয়ে যায়। কিন্তু তার জন্য কী পরিমাণ ত্যাগ, কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে ওকে, তার সাক্ষী আমি নিজে।
বিরাটের টেস্ট থেকে অবসর নিয়ে নেওয়ায় লাল-বলের ক্রিকেটের জৌলুস যে অনেক কমে যাব, সেটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি। ক্রিকেটে এখনও টি-টোয়েন্টির আধিপত্য। তরুণ ক্রিকেটারদের বেশিরভাগই সব টি-টোয়েন্টির পিছনে ছুটছে। সেখানে এত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পরও টেস্ট নিয়ে বিরাটের মধ্যে কী রকম প্যাশন ছিল। জানি না ঠিক কী ঘটেছে। কেন বিরাট আচমকা এভাবে অবসর নিয়ে নিল। ওর মধ্যে এখনও অনেক ক্রিকেট বেঁচে রয়েছে। অনায়াসে আরও কিছুদিন টেস্ট খেলে যেতে পারত। যাই হোক, এটা ওর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
তবে আমি বলব, কেন কয়েক মাসের মধ্যে ভারতের তিন সেরা ক্রিকেটারকে এভাবে অবসর নিতে হল, তার কারণটা দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের সামনে নিয়ে আসা উচিত। অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝেই টেস্ট থেকে অবসর ঘোষণা করে ফিরে আসে রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তারপর এক সপ্তাহের ব্যবধানে রোহিত শর্মা আর বিরাটের টেস্ট থেকে অবসর নিয়ে নেওয়া। কিছুদিন আগেও রোহিতকে এক পডকাস্টে বলতে শুনেছিলাম যে ও ইংল্যান্ড সিরিজের জন্য ভাবনা-চিন্তা শুরু করে দিয়েছে। তাহলে কেন ওকে অবসর নিয়ে নিতে হল? কেন বিরাটকে এভাবে চলে যেতে হল। দু'জনের আচমকা অবসর কি শুধুই ওর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত? নাকি ওদের একপ্রকার বাধ্য করা হল?
