শিলাজিৎ সরকার: দু’জনই বাংলার পেসার, জাতীয় দলের সদস্য। দু’জনই খেলবেন আগামী আইপিএলে। একজনকে রিটেন করেছে দিল্লি ক্যাপিটালস। অপরজনকে এবার মিনি নিলাম থেকে দলে নিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। সেই মুকেশ কুমার এবং আকাশ দীপের নিলাম-পরবর্তী জীবন কোন খাতে বইছে? ভারতীয় তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুকেশ কুমার একটি বিরল নজিরের মালিক। একই সিরিজে, দিন পনেরোর ব্যবধানে তিন ফরম্যাটে দেশের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল বঙ্গ পেসারের। যদিও মাস কয়েক আগে পাওয়া চোট অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে মুকেশকে। ফের লড়াই করে সেই দূরত্ব মুছে দেওয়াই এখন পাখির চোখ তাঁর।
পায়ের পেশিতে চোট পেয়ে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে ছিলেন মুকেশ। মরশুমের শুরুতে রনজি ট্রফিতে খেলতে পারেননি। সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টিতে ফের রাজ্য দলের জার্সিতে ফিরেছেন। এবার চ্যালেঞ্জ বিজয় হাজারে ট্রফি। শনিবার সল্টলেকে জেইউ সেকেন্ড ক্যাম্পাসে দলের সঙ্গে তারই অনুশীলন করছিলেন মুকেশ। সেখানে নিজের চোট প্রসঙ্গে তিনি বলছিলেন, “আগস্টে চোট পেয়েছিলাম। মাঠে ফিরলাম নভেম্বরের শেষে। কেরিয়ারে এত বড় চোট আগে পাইনি। দীর্ঘদিন এনসিই-তে ছিলাম। সেসময় সবাই অবশ্য উৎসাহ দিয়েছেন। রোহিতভাই (শর্মা) এসেছিলেন। তিনিও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন।” আরও একজনের থেকে পরামর্শ নিতে মুখিয়ে রয়েছেন মুকেশ। মিচেল স্টার্ক। অস্ট্রেলীয় স্পিডস্টারের সঙ্গে দিল্লি ক্যাপিটালসে ড্রেসিংরুম ভাগ করে নেন বঙ্গ পেসার। তাঁর থেকেই মুকেশ জানতে চাইবেন চোট সারিয়ে স্বমহিমায় ফেরার মন্ত্র। বঙ্গ পেসার বলছিলেন, “গত আইপিএলে স্টার্কের সঙ্গে ফিটনেস নিয়ে আলোচনা করেছি। ও আমাকে বিভিন্ন পরামর্শও দিয়েছে। এবার দেখা হলে চোট সারিয়ে প্রত্যাবর্তন করার বিষয়ে পরামর্শ চাইব। ও কীভাবে চোট সামলেছিল, কীভাবে প্র্যাকটিস শুরু করেছিল, সেসব নিয়ে জানতে চাইব।”
এবার দিল্লি ক্যাপিটালস স্কোয়াডে স্টার্ক ও মুকেশ ছাড়াও আকিব নবি, টি নটরাজন, কাইল জেমিসনের মতো পেসার আছেন। ফলে প্রথম একাদশে জায়গা করে নেওয়াটা সহজ হবে না বঙ্গ পেসারের জন্য। তা নিয়ে এখনই ভেবে সময় নষ্টে নারাজ মুকেশ। “আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে বাড়তি ভাবনাচিন্তা করি না। বর্তমানে ফোকাস থাকে। দলে ভালো প্লেয়ার থাকা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ প্রতিযোগিতা প্লেয়ারের উন্নতিতে সাহায্য করে। দল যদি কোনও দায়িত্ব দেয়, সেটা পালনের জন্য নিজেকে তৈরি রাখাই আমার লক্ষ্য। দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে ভাবছি না।” বয়স তিরিশের গণ্ডি পার করলেও জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নেননি মুকেশ। তবে ডাক পাওয়ার বিষয়টি ছাড়ছেন নির্বাচকদের উপর। মুকেশ নিজে শুধু পারফর্ম করে যেতে চাইছেন।
এবার আসা যাক আকাশ দীপের কথায়। এক-দু’বছর নয়। পুরোপুরি ন’বছর পর ফের বাংলার কোনও ক্রিকেটারকে দলে নিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। প্রায় এক দশক পর বেগুনি জার্সিতে দেখা যাবে বঙ্গ পেসার আকাশ দীপকে। ‘ঘরের’ ফ্র্যাঞ্চইজির হয়ে ভালো পারফর্ম করার পাশাপাশি আরও একটা লক্ষ্য রয়েছে নতুন নাইটের। কেকেআর মালিক শাহরুখ খানের সঙ্গে পাঠানের গানে নাচতে চান আকাশ।
ঘরোয়া ক্রিকেটের সুবাদে নাইটদের মতো আকাশেরও ‘ঘর’ ইডেন। আইপিএলে প্রথমবার নিজের চেনা মাঠতে ঘর হিসাবে পেয়ে খুশি তিনি। বিজয় হাজারে ট্রফির জন্য শনিবার সল্টলেকে জেইউ সেকেন্ড ক্যাম্পাসে অনুশীলন করছিলেন আকাশ। সেখানেই তিনি শোনালে, “আমি তো বাংলারই প্লেয়ার। ইডেন আমার মাঠ। সেটা সাহায্য করবে। আবার ঘরের মাঠে খেলার ক্ষেত্রে প্রত্যাশার চাপও সামলাতে হয়। ব্যক্তিগতভাবে চাপ আমাকে ভালো খেলতে সাহায্য করে। ইডেনে একসময় কেকেআরে নেট বোলার হিসাবে এসেছি। এবার দলের সদস্য হিসাবে ইডেনে নামার জন্য মুখিয়ে রয়েছি।” আইপিএলের আগে এবার তেমন কোনও খেলা নেই। ফলে নতুন দলের হয়ে খেলার প্রস্তুতিতে বাড়তি সময় মিলবে। তা হাতছাড়া করতে নারাজ আকাশ। “এর আগে এমনও হয়েছে, আইপিএলের প্রস্তুতির জন্য বিশেষ সময় ছিল না। এবার সেটা হবে না”, বলছিলেন তিনি। আইপিএলের জন্য নিজের আস্তিনে নতুন অস্ত্র যোগ করার ভাবনা আছে আকাশের। সঙ্গে জুড়লেন, “সত্যি বলতে বলের রং যাই হোক, স্কিল থাকলে সাফল্য মেলে।”
এমনিতে সিনেমা বিশেষ দেখেন না আকাশ। তবে শাহরুখের ‘পাঠান স্টেপ’ নিয়ে ধারণা রয়েছে তাঁর। শোনালেন, “আমি সিনেমা বিশেষ দেখি না। শাহরুখের একটা সিনেমা দেখার কথা মনে আছে, বাজিগর। এর বাইরে পাঠানের নাচটার কথা বলব। শাহরুখের সঙ্গে ওই গানে নাচার ইচ্ছে আছে।” নাইট কোচ অভিষেক নায়ারের সঙ্গেও আগে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে আকাশের। ভারতের শেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে স্কোয়াডে ছিলেন আকাশ, দলের ব্যাটিং কোচ ছিলেন অভিষেক। সেসময় ব্যাটিং নিয়ে বর্তমান নাইট কোচের পরামর্শও পেয়েছেন বঙ্গ পেসার। বলছিলেন, “এমন নয় যে আমি নিজেকে অলরাউন্ডার তৈরি করতে চাই। তবে ব্যাটিং নিয়ে ওই পরামর্শ পেয়ে আমার সুবিধাই হয়েছে।” কেকেআরে আকাশ ছাড়াও উমরান মালিক, হর্ষিত রানা, বৈভব অরোরা, মাথিশা পাথিরানা এবং মুস্তাফিজুর রহমানের মতো পেসার আছে। প্রথম দলে জায়গা করে নেওয়াটা সহজ হবে না, জানেন বঙ্গ পেসার। তবে সেসব নিয়ে না ভেবে নিজেকে তৈরি করার লক্ষ্য আকাশের।
