সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টেস্টে ওপেন নামেন না তিনি। অথচ দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেন নেমেই 'অলৌকিক' ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে জিতিয়েছেন ট্রাভিস হেড (Travis Head)। তাঁকেই যে ওপেন পাঠানো হবে, সেটা আন্দাজ করতে পারেননি কেউই। এর নেপথ্যে কে, সেই গল্প ফাঁস হয়েছে।
পারথের এই পিচেই পেসারদের বাগে আনতে হিমশিম খেয়েছেন ব্যাটাররা। সেখানে পাঁচ সেশনের তিনটি ইনিংসে ১১৩ ওভারে ৩০ উইকেট পড়েছিল ৪৬৮ রানে। পেসারদের ‘বধ্যভূমি’ পারথের এই ২২ গজে ৬৯ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করেন ট্রাভিস হেড। একই সঙ্গে দ্রুততম সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৮৩ বলে ১২৩ রানে যখন থামেন, অস্ট্রেলিয়ার স্কোর বোর্ডে ১৯২ রান উঠে গিয়েছে। ম্যাচের মোড় ঘোরানো এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে ছিলেন প্যাট কামিন্স। এ কথা ফাঁস করেছেন অজি ক্রিকেটাররাই। পায়ের চোটের জন্য পারথ টেস্টে খেলতে পারেননি কামিন্স। তাঁর জায়গায় অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দিয়েছেন স্টিভ স্মিথ। না খেললেও ড্রেসিংরুমেই ছিলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার সামনে ২০৫ রানের লক্ষ্য রেখেছিল ইংল্যান্ড। পারথে সেই রান তাড়া করা মোটেও সহজ নয়। তার উপর পিঠে টান লাগায় দ্বিতীয় ইনিংসে নামতেই পারলেন না নির্ভরযোগ্য ওপেনার উসমান খোয়াজা। সেই সময় কামিন্সই পরামর্শ দেন হেডকে ওপেনে নামানোর। আলোচনায় মার্নাস লাবুশানের নাম থাকলেও শেষ পর্যন্ত অজি কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড কামিন্সের মতকে মান্যতা দেন। জানা যায়, স্টিভ স্মিথও রাজি হয়ে হেডকে বলেন, "জীবন বাজি রেখে খেলো।" এরপর তো বাকিটা ইতিহাস। ওপেন নেমে ম্যাচ জেতানোর সঙ্গে নজিরও গড়েন। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৮ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার কোনও ব্যাটার চতুর্থ ইনিংসে ৭০ বলেরও কম সময়ে সেঞ্চুরি করলেন। তাছাড়াও অ্যাশেজের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম শতরানের নজিরও গড়েছেন। তালিকায় প্রথমে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। ২০০৬ সালে পারথের ওয়াকা স্টেডিয়ামে ৫৭ বলে হাঁকিয়েছিলেন তিনি।
এমন স্মরণীয় ইনিংস খেলে হেড বললেন, "কখনওই নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস হারাইনি। কিন্তু লম্বা সময়ের পর টেস্ট খেললে একটা সন্দেহ আপনাআপনি তৈরি হয় যে, আমি কি আবার আগের মতো নিজের খেলাটা খেলতে পারব? এখনও কি আমার আগের মতো শাসন করার ক্ষমতা আছে? পুরোটাই মানসিক ব্যাপার। নিজের উপর বিশ্বাসের ব্যাপার। নিজেকে বলছিলাম নিজেকে প্রমাণের এর চেয়ে বড় মঞ্চ তুমি পাবে না। ভালো লাগছে এটা ভেবে যে, টিমের কাজে আসতে পারলাম। সবাই বলছে, আগ্রাসী ইনিংস খেলেছি। ব্যাপারটা ঠিক সেরকম নয়। টিমের যা প্রয়োজন ছিল, সেই অনুপাতে খেলেছি আমি। উসমানকে (খোয়াজা) পিঠের চোট ভোগাচ্ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম যে, আমার ওপেন করার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই আমার মনে হচ্ছিল যে, অন্য দু'টো ফর্ম্যাটে যদি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেন করতে পারি, তাহলে টেস্টেও বা পারব না কেন? পারথে সুযোগটা এল। আর সেটাকে ব্যবহার করতে হত।" উল্লেখ্য, ১৪৮-এর বেশি স্ট্রাইক রেট নিয়ে ব্যাটিং করেছেন হেড। ইনিংসটি সাজানো ১৬টি চার এবং ৪টি ছক্কা নিয়ে। এক্ষেত্রে অজি টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তের প্রশংসায় ক্রিকেটমহল। আর এই আবহে ফাঁস হয়েছে হেডকে শুরুতে পাঠানোর নেপথ্য গল্পও।
