স্টাফ রিপোর্টার: প্রায় দু’কোটি টাকা খরচ করে রাজ্য বিজেপির তিনদিনের ‘প্রশিক্ষণ শিবির’ বসছে পূর্ব ভারতের অন্যতম বিলাসবহুল রিসর্ট বৈদিক ভিলেজে। প্রধানমন্ত্রীর গরিব দূরীকরণ কর্মসূচি বাংলার গ্রামে গ্রামে তুলে ধরার লক্ষ্যে এই ‘সেভেন স্টার’ শিবিরকে রাজ্যের আদি বিজেপি নেতারা ‘বড় লোকের পিকনিক’ বলে কটাক্ষ করেছে। আগামী ২৯ আগস্ট থেকে এই রিসর্টে বাংলার নির্বাচিত শ’দেড়েক প্রতিনিধির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা বি এল সন্তোষ ও অমিত মালব্যরা উপস্থিত থাকবেন। আসতে পারেন নয়া পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল ছাড়াও আরও কয়েকজন সর্বভারতীয় নেতা। সোমবার দলের হেস্টিংস কার্যালয়ে সাংগঠনিক বৈঠকে এই প্রশিক্ষণ শিবিরের পাশাপাশি নবান্ন অভিযানের পরিবর্তিত দিনও ঘোষণা করেছেন রাজ্য বিজেপি নেতারা। ৭ সেপ্টেম্বরের বদলে আগামী ১৩ তারিখ এই কর্মসূচি করার দিন ধার্য হলেও তাতে দলের একাংশের নেতারা সায় দেননি। কারণ, সেপ্টেম্বরের প্রথম দিন থেকেই কলকাতায় দুর্গাপুজোর র্যালি দিয়ে শারদোৎসবের ঢাকে কার্যত কাঠি পড়ে যাচ্ছে। স্বভাবতই, উৎসবমুখর বাঙালি দিকভ্রান্ত বিজেপি নেতাদের ডাকে কতটা সাড়া দেবে তা নিয়ে চিন্তিত গেরুয়া শিবিরের একটা বড় অংশ। বৈদিক ভিলেজের মতো বিলাস বহুব রিসর্টে প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজনকে কটাক্ষ করেছন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। তিনি বলেন, “ভালই তো নেতারা সুইমিং পুলে বসে প্রশিক্ষণ নেবেন।”
প্রশিক্ষণ শিবিরের নামে রাজারহাটের বৈদিক ভিলেজের প্রায় দেড়শো কটেজ ও সুইট বুক করছে রাজ্য বিজেপি। শুধুমাত্র নেতা নয়, তার ঘনিষ্ঠদের জন্যও আলাদা করে বেশ কিছু সুপার ডিলাক্স কটেজ বুকিং করা হচ্ছে। মহিলানেত্রীদের পাশাপাশি শাখা সংগঠনের রাজ্য নেতাদের জন্যও আলাদা কটেজ বুকিং হচ্ছে। একই সঙ্গে ভিলেজের স্পা, সুইমিং পুল ও বিলাসিতার যাবতীয় উপকরণও বুকিং করা হচ্ছে শিবিরে আসা নেতাদের জন্য। প্রশিক্ষণ শিবিরের স্থান নির্বাচনের প্রস্তাবটি এদিনের বৈঠকে ওঠার পর আদি বিজেপি নেতাদের একাংশ বিরোধিতা করেন। বলেন, গরিব মানুষের কাছে যাওয়ার জন্য যে প্রশিক্ষণ শিবির হবে সেখানে দু’কোটি টাকা খরচ করে এত বিলাসিতা করা আদৌ যুক্তিযুক্ত নয়। বিশেষ করে গরিব মানুষের জন্য কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে গিয়ে যদি বৈভবের সমুদ্রে গা ভাসিয়ে দেওয়া হয় তাহলে জনমানসে বিজেপি নিয়ে ভুল বার্তা যাবে। আর এমন প্রশিক্ষণ শিবির বহু জেলাতেই আয়োজন করা হয়ে থাকে। সেখানে মাত্র দেড়শো লোকের জন্য দু’কোটি টাকা ব্যয় করে এই ‘পিকনিক’ পার্টির পক্ষে যথেষ্ট ক্ষতির কারণ হবে। এমনিতেই বিজেপিকে বাংলার মানুষ বড়লোকের পার্টি বলে মনে করে, তার উপর যদি এমন ‘সেভেন স্টার’ রিসর্টে ফূর্তিতে ডুব দিয়ে চিন্তন বৈঠক করা হয় তাহলে আগামী লোকসভা ভোটে তার প্রভাব পড়বে। কিন্তু রাজ্যে দলের সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্যরা কার্যত বৈদিক ভিলেজেই তিনদিনের ‘পিকনিক’ করার প্রস্তাবেই অনড় থাকেন।
[আরও পড়ুন: হাই কোর্টের নির্দেশের পরও মেলেনি বকেয়া DA, রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা]
দিল্লির নেতার এমন ভাবনা দেখে রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর অধিকাংশই বৈদিক ভিলেজের বিলাসবহুল ঘর বুকিংয়ের পক্ষে সায় দেন। স্বভাবতই, যখন রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির ইসু্য নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা, তখন তিনদিনের এই বিলাস-বৈভবে ভরা পিকনিক যে নতুন বিতর্কের সূচনা করবে তা মেনে নিয়েছেন আদি বিজেপি নেতারা। দলের একাংশের প্রশ্ন, ২০১৬ সালেও প্রশিক্ষণ শিবির হয়েছিল হলদিয়ায়। তখন তো এরকম বিলাসবহুল ব্যবস্থা ছিল না। এবার এত টাকা খরচ করে ‘সেভেন স্টার’ রিসর্টে কেন করা হচ্ছে?
এদিকে, এদিন দলীয় বৈঠকে আলোচনার পর রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এক প্রেস বিবৃতিতে জানান, “৭ সেপ্টেম্বর রাজ্যের একটি বড় এলাকাজুড়ে জনজাতি সমাজের করম পুজো পালিত হবে। জনজাতি সমাজের আবেগের বিষয়টি মাথায় রেখে বিজেপি নবান্ন অভিযানের দিন পরিবর্তন করেছে। আগামী ১৩ তারিখ নবান্ন অভিযান হবে। লক্ষ লক্ষ বিজেপি কার্যকর্তা সেই কর্মসূচিতে শামিল হবেন।” এদিনের বৈঠকে রাজ্যের সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য বলেন, নবান্ন অভিযানে ১০ লক্ষ জমায়েত হবে। মালব্যর এই কথা শুনে বৈঠকে শ্রোতার আসনে উপস্থিত বিজেপির রাজ্য ও জেলা নেতাদের মধ্যে কার্যত গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। মালব্যর এই জমায়েতের টার্গেট শুনে পরে একাধিক নেতা নিজেদের মধ্যে হাসাহাসিও করেন। হতবাক জেলা নেতাদের নিজেদের মধ্যেই অনেককে বলতে শোনা যায়, সাংগঠনিক কোনও ধারণা নেই তাই জমায়েতের সংখ্যা নিয়ে এই ধরনের অবাস্তব কথা বলছেন মালব্য।