সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নেতাজি ফিরবেন-এই বার্তা রটেছিল লোকালয়ে৷ সাল ১৯৭৫৷ নেতাজির ৭৮ তম জন্মদিনে প্রিয় নেতাকে ফিরে পেতে লোকে লোকারণ্য কানপুরের ফুলবাগ৷ মহাপ্রস্থানের পর নেতাজির জীবন যত রহস্যেই মোড়া থাক না কেন, আর য়ত গবেষণাই তা নিয়ে চলুক না কেন, বহু দেশবাসী আজও বিশ্বাস করেন বিমানদুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়নি৷ সাধুবেশে তিনি যে এদেশেই ফিরেছিলেন তা নিয়েও যেন নিশ্চিত অনেকে৷ এই খবর রটতে চক্ষু-কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করতে কাতারে কাতারে লোক ভিড় জমাচ্ছিলেন৷
লিফলেট বিলি হয়েছিল বেশ কিছুদিন আগে থেকেই৷ ইতিউতি দেখা দিয়েছিল হোর্ডিং৷ তবে সবথেকে বেশি প্রচার হয়েছিল মানুষের মুখে মুখে৷ আর এসব কাজ যাঁরা করেছিলেন তাঁরা কোনও এক সাধুরই শিষ্য৷ ফলত দু’য়ে দু’য়ে চার করে নিতে অসুবিধা হয়নি অনেকের৷ ২৩ জানুয়ারী সকাল থেকেই তাই ফুলবাগে মানুষের ঢল৷ সকলেই চুপচাপ৷ প্রিয় নেতাজিকে একটিবার চোখের দেখা দেখতে উদগ্রীব জনতা৷ অপেক্ষার ঘণ্টা কাটছে একের পর এক৷ অবশেষে মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত৷ সকলের সামনে উপস্থিত হলেন এক বয়স্ক মানুষ৷ ভিড়ের ভিতর থেকে কে যেন বলে উঠল, নেতাজি জিন্দাবাদ৷ সমবেত জনতাও আওয়াজ তুলল নেতাজির নামে জয়ধ্বনি দিয়ে৷ এরপর সকলেই চান নেতাজি কিছু বলুন৷ সকলের আশা পূরণ করে নেতাজি কথা বলা শুরুও করলেন৷ আর যেই না কথা বলা শুরু করলেন, সেই বাধল বিপত্তি৷ লহমায় জনতা বুঝে গেল, নেতাজির নাম করে কেউ তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন৷ ভুয়া নেতাজির দিকে ছুটে গেল জুতো আর পাথর৷ নেতাজির পুনরুত্থানের এই কাহিনির এখানেই শেষ৷ আর এখান থেকেই শুরু ‘জয় গুরুদেব সংগঠন’-এর বাকি কাহিনির৷
জয় গুরুদেব সংগঠনেরই এক শাখা সংগঠন, যারা নিজেদেরকে সুভাষ সেনা বলে দাবি করে, তারাই বছর দুয়েক ধরে মথুরায় ঘাঁটি গেড়ে বসেছে৷ তারই পরিণতি কৃষ্ণক্ষেত্রে রক্তের হোলি৷
নেতাজি হিসেবে পরিচয় দিতে গিয়ে মার খেলেও বাবা গুরুদেব কিন্তু রণে ভঙ্গ দেননি৷ আটের দশকে তিনি তৈরি করেন ‘দূরদর্শী’ সংগঠন৷ বিভিন্নরাজ্যে জোরালো হতে থাকে তাঁদের কাজকর্ম৷ এর মধ্যেই ফুলেফেঁপে ওঠেন গুরুদেব৷ তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪০০০ কোটি টাকার৷ সেই সঙ্গে আছে প্রায় ২৫০টি বিলাশ বহুল গাড়ি৷ ২০০০ সালে এই বাবা ও তার শিষ্যদের নামে অন্তত ১৬ টি মামলা দায়ের করা হয়৷ ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’ও তাদের নামে বহু মূর্তি ধ্বংস করার অভিযোগ আনে৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি৷ ১৬ বছর পরে তারই দাম চোকাতে হচ্ছে রাজ্যকে৷ দুই পুলিশ অফিসার সহ মথুরার এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃত ২৪ জন৷
নেতাজি-রহস্যকে একরকম রাজনীতির চাল হিসেবেই ব্যবহার করা হয় স্বাধীন ভারতে৷ বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন নিজেও যেমন সে কাজ করেছে, তেমনই করেছে এ বাবাও৷ নেতাজির ফিরে না আসা ও নেতাজি-আবেগকে পুঁজি করেই বাড়িয়েছে সম্পত্তি৷ বুজরুকিতে সোনার কেল্লার ভবানন্দের কীর্তিকেও যেন হার মানান তিনি৷ বলা বাহুল্য, এ কাহিনিতে এতদিন না ছিল কোনও ডাঃ হাজরা, না ফেলুদা৷ থাকলে বোধহয় আর এমন আগুন জ্বলত না মথুরায়৷