সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রাকৃতিক বিপর্যয় একাধারে ডেকে আনে বহু বিপদ। মানুষের জীবন-জীবিকায় তা বড়সড় আঘাত হানে। তছনছ করে দেয় সাজানো সংসার। আর মানবেতর প্রাণীরা প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জল, জঙ্গল, মাটিতে যাদের জন্ম, বেড়ে ওঠা, সেসব জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে ওঠে ঝড়ঝঞ্ঝা, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে। সদ্য বাংলা আর ওড়িশা উপকূলে তাণ্ডব দেখিয়েছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় 'ডানা'। তার ল্যান্ডফল ছিল ওড়িশার ধামরা ও ভিতরকণিকার মাঝ বরাবর। এই ভিতরকণিকা মূলত ম্যানগ্রোভ এলাকা এবং জীববৈচিত্র্যে ভরা। তা লুপ্তপ্রায় অলিভ রিডলে কচ্ছপদের বাসস্থান। 'ডানা'র ঝাপটায় গোটা এলাকা-সহ তছনছ হয়েছে তাদের ডেরাও। আরও বিপন্ন এই সরীসৃপের দল। সূত্রের খবর, ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে এখানে আসা বহু পরিযায়ী পাখিরও মৃত্যু হয়েছে।
ম্যানগ্রোভ অরণ্য, ভরপুর জীববৈচিত্র্যের কারণে ভিতরকণিকা ভারতের 'মিনি আমাজন' বলে পরিচিত। এখানকার মূল বাসিন্দা নোনা জলের কুমির আর অলিভ রিডলে কচ্ছপ - উভয়েই এখানকার বিশেষত্ব। তার মধ্যে অলিভ রিডলে কচ্ছপ এখানে প্রায় সংরক্ষিত। কারণ, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিকে বাঁচাতে ১৯৮৩ সাল থেকে কচ্ছপ বা তাদের ডিম সংগ্রহ, কেনাবেচা সবই নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তার পরও তাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায় ফি বছর কোনও না কোনও ঘূর্ণিঝড়। ফণী, অশনি, আমফান থেকে শুরু করে আজকের ডানা - সব ক্ষেত্রে রিডলে কচ্ছপরা বিপদে পড়ে। পরিসংখ্যান বলছে, মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত দুর্যোগের কারণে সৈকতে কচ্ছপদের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ডিম নষ্ট হয়ে যায়।
তথ্য বলছে, অলিভ রিডলে কচ্ছপ জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে সমুদ্র থেকে গাহিরমাথা সৈকতে উঠে আসে ডিম পাড়ার জন্য। গড়ে প্রায় ২ লক্ষ ৪০,০০০ টি বাসা বাঁধে তারা। সময়সারণী লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, এই সময়ে ডিম বেশিরভাগই ফুটে যায়। ফলে 'ডানা'য় ডিমের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে এখনও পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির যা খবর পাওয়া গিয়েছে, তাতে রিডলে কচ্ছপদের ডেরা নষ্ট হয়েছে। এছাড়া ভিতরকণিকার আরেক বিশেষ প্রাণী নোনা জলের কুমিরও 'ডানা'র দাপটে ভিটেহারা। তারা নাকি ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। তা নিয়ে নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে বলা হচ্ছে, ভিতরকণিকার বিশাল ম্যানগ্রোভ অরণ্য তাদের সকলকে রক্ষা করতে সমর্থ হবে।