সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার দুর্গোৎসবে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকলের কাছে আকর্ষণীয় ছিল কুমারী পুজো। কিন্তু এবার দুর্গাপুজোয় ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে কুমারী পুজো হচ্ছে না। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মহাষ্টমীতে এই বছর কুমারী পুজো বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিশন কর্তৃপক্ষ। তবে ঢাকার বাইরে বিশেষ করে কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, বাগেরহাট-সহ রামকৃষ্ণ মিশনের অনেক শাখায় নিয়ম অনুযায়ী কুমারী পুজো অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে দুর্গাপুজো। ১৩ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে দুর্গোৎসব। ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের স্বামী শান্তিকরানন্দ মহারাজ (কিশোর মহারাজ) জানান, এর আগে করোনা মহামারী সময়ও মহাষ্টমীতে কুমারী পুজো বাদ পড়েছিল। কারণ, সংক্রমণ রোধে তখন সরকারের পক্ষ থেকে বেশি লোককে এক জায়গায় একত্রিত হওয়ায় নিষেধ করা হয়েছিল। আর বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবার কুমারী পুজো বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অনেক জায়গাতেই কুমারী পুজোর আয়োজন করা হবে।
এই বছর ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন মন্দিরের ভিতরে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হবে। স্বামী শান্তিকরানন্দ মহারাজ এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, করোনার সময়েও মন্দিরের ভিতরে দুর্গাপুজো করা হয়েছিল। তা ছাড়া আগে তো মন্দিরেই পুজো হত। যখন ভক্ত সংখ্যা বেড়ে গেল, তখন মন্দিরের বাইরে আনা হয়েছে। মন্দিরের ভিতরে হলেও পুজোর দিক দিয়ে কোনও ঘটতি হবে না। উপাচার কিংবা প্রসাদ বিতরণের বিষয়ে কোনও কমতি থাকবে না। ভক্তদের জন্য যা যা দরকার, সেগুলো ঠিক থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের জেরে প্রধানমন্ত্রীর গদি হারান শেখ হাসিনা। পতন ঘটে আওয়ামি লিগ সরকারের। এখন ক্ষমতায় ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার। এই রাজনৈতিক পালাবদলের মধ্যেই দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশে। হাসিনার দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে নানা প্রান্তে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন হিন্দুরা। তাই মনে ভয়ে, আশঙ্কা, উদ্বেগ নিয়েই চলছে পুজোর প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে দুর্গাপুজো নিয়ে নানা হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। এমনকী দুর্গাপুজো উপলক্ষে দেশের দক্ষিণের জেলা খুলনার দাকোপ উপজেলার ৫টি মন্দিরে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা চেয়ে উড়ো চিঠি পাঠানো হয় বলেও অভিযোগ। কিন্তু নির্বিঘ্নে উৎসব উদযাপনের আশ্বাস দিয়েছে ইউনুস সরকার। নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর দিয়ে নানা পদক্ষেপ করা হয়েছে। হাসিনাহীন বাংলাদেশে কীভাবে শান্তিপূর্ণ দুর্গাপুজো সম্পন্ন করে নয়া সরকার, সেদিকে নজর থাকবে ভারতও।