রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর আজ শনিবার প্রথম বৈঠকে বসছিল রাজ্য বিজেপির কোর কমিটি। আর সেই বৈঠকে হাজির হলেন না বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী—সহ দলের কোর কমিটির দুই সদস্য সুভাষ সরকার ও নিশীথ প্রামাণিক। দুই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ ও নিশীথ দু’জনেই এবার লোকসভা ভোটে বাঁকুড়া ও কোচবিহার কেন্দ্র থেকে পরাজিত হয়েছেন। তবে প্রথম বৈঠকে শুভেন্দুর না থাকা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। কারণ, কোচবিহারে দলের কোনও আগাম কর্মসূচি ছিল না।
সকল কোর কমিটির সদস্যকেই এই বৈঠকে আসার কথা বলা হয়েছিল। ভোট বিপর্যয়ের পর রাজ্য বিজেপির একাংশ শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) দিকে আঙুল তুলেছে। নাম না করলেও দিলীপের নিশানাতেও রয়েছেন শুভেন্দু। পাল্টা শুভেন্দুও সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, দলের খারাপ ফল হলে তাঁর ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। সংগঠনে তিনি কখনও মাথা গলাননি। সেই পরিস্থিতির মধ্যেই শনিবারের বৈঠকে দিলীপের মুখোমুখিই হলেন না শুভেন্দু। বৈঠকে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালব্য থাকলেও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল ছিলেন না। অন্যদিকে, সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar), দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh), লকেট চট্টোপাধ্যায়রা ছিলেন। বনসল না আসাতেই ভোটের ফলাফল নিয়ে এদিন বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়নি বলে জানা গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: গার্ডেনরিচ কাণ্ডে ৮৮ দিনের মাথায় চার্জশিট পেশ, অভিযুক্ত প্রোমোটার-সহ ৬ জন]
রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানান, আসন্ন চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী কারা হবেন তার একটা তালিকা তৈরি করে দিল্লিতে পাঠানো হচ্ছে। সেই মতো মানিকতলা—সহ চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিটি থেকে ৩জন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর অর্থাৎ মোট ১২জনের নাম দিল্লিতে পাঠানো হচ্ছে। তবে প্রার্থীদের নাম নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত এদিন হয়নি বলেই খবর। আবার বৈঠকে বসতে পারে রাজ্য বিজেপি।
জানা গিয়েছে, বাগদা কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের স্ত্রীকে প্রার্থী করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে তা নিয়েও আবার দলের একাংশের আপত্তি রয়েছে। মানিকতলা কেন্দ্রে কল্যাণ চৌবের নাম প্রথম দিকেই রয়েছে বলে খবর। তবে সূত্রের খবর, উপনির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার থাকবে স্থানীয় নেতাদের। কর্মীদের আস্থা রয়েছে, সংগঠনে যাদের গুরুত্ব রয়েছে তাদেরকেই প্রার্থী করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, চব্বিশের ভোটে বাংলায় ব্যর্থতার পর দায় নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ পাল্টা দোষারোপ চলছে। বঙ্গ বিজেপির মধ্যে ক্ষোভ—বিক্ষোভও প্রকাশ্যে এসেছে। কোন্দল ফের বেআব্রু হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতেই ভোটের ফলাফল নিয়ে আজ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে পর্যালোচনা হবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু বনসল ও শুভেন্দু না থাকায় তা হয়নি।
[আরও পড়ুন: হিংসা ছড়াতে মন্দির চত্বরে গরুর কাটা মাথা! NSA আইনে গ্রেপ্তার ৪]
তবে ভোট পরবর্তী অশান্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। দলীয় কর্মীরা যাতে সংগঠনের থেকে কোনওভাবেই সরে না যান সেজন্য বিধানসভাভিত্তিক একটি করে কমিটি করা হয়েছে। তারা আক্রান্ত কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। তবে ভোটের ফল পর্যালোচনায় শীঘ্রই আরেকটি বৈঠক হবে বলে ঠিক হয়েছে। এদিকে, কোর কমিটির বৈঠকে অনুপস্থিত থাকা নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলেছে আগে দলের আক্রান্ত কর্মীদের পাশে থাকতে হবে। তাই কোচবিহারে এসেছি। কোর কমিটির বৈঠকে যা সিদ্ধান্ত হবে সেটাই আমি মেনে নেব।’’