shono
Advertisement

করোনা আবহে শহরে প্রথম ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন, বিহারের বিরল রোগ সারাল কলকাতা

একেবারে জড় বস্তু হয়ে গিয়েছিলেন ওই রোগী। কেন হয় এই অসুখ?
Posted: 11:48 AM Nov 06, 2020Updated: 06:17 PM Nov 06, 2020

অভিরূপ দাস: চল্লিশেই বন্ধ গিয়েছিল হাঁটাচলা। জেনারেটরের মতো কেঁপে কেঁপে উঠত শরীর। মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ডোপামিনের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিহারের আরারিয়ার মণীন্দ্র নাথের। হাঁটাচলা করার সময় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে বার্তা পাঠায় ডোপামিন। তার অভাবে জড় বস্তু হয়ে গিয়েছিলেন মণীন্দ্র। চল্লিশেই বুড়িয়ে গিয়েছিলেন। চাকরি-বাকরি বন্ধ। খাট থেকে নামতে রীতিমতো কসরৎ করতে হত। এদিকে বিহারে এ অসুখের চিকিৎসা করা সম্ভব ছিল না। তাহলে উপায়?

Advertisement

আনলক পর্বে ট্রেন বন্ধ। দূরপাল্লার বাস হাতেগোনা। মণীন্দ্রর পরিবার খবর পান চিকিৎসা মিলতে পারে তিলোত্তমায়। গাড়ি ভাড়া করেই ৪৯৭ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছিল মণীন্দ্রর পরিবার। বিহার থেকে সোজা পার্কস্ট্রিটের (Park Street) ইনস্টিউট অফ নিউরো সায়েন্স। চিকিৎসকরা যখন তাঁকে দেখেন জামার বোতাম আটকাতে পারতেন না তিনি। জল ভরতি গ্লাস হাত থেকে লাফিয়ে উঠছিল। যেন খুব জোড়ে তাঁকে ঝাঁকুনি দিচ্ছে কেউ। নিউরো সার্জন ডা. অমিত কুমার ঘোষের কথায়, আর্লি এজ পার্কিন্সন বিরল অসুখের মধ্যেই পড়ে। তবে তার চেয়েও বিরল এই রোগ সারানোর অস্ত্রোপচার। আপাতত করোনা কালে পূর্ব ভারতের একমাত্র ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সেই হচ্ছে ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন।

[আরও পড়ুন: ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন শোভন-বৈশাখী! অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠকের পর জল্পনা]

৩০ আগস্ট ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে এসেছিলেন মণীন্দ্রবাবু। ওষুধ দিয়ে সাময়িকভাবে এ অসুখ কমানো যায়। কিন্তু সেসব অসুখের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ভয়ংকর। চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন জটিল ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশনই একমাত্র উপায় রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার। টানা ১০ ঘণ্টার এই বিরল অস্ত্রোপচারে রোগীকে অজ্ঞান করা হয় না। অস্ত্রোপচারের সময় রোগীকে কিছু ইন্ট্রা অপারেটিভ স্টিমুলেশন দেওয়া হয়। রোগী জ্ঞানত বুঝতে পারে ধীরে ধীরে কাঁপুনি কমে আসছে। চিকিৎসকরাও বুঝতে পারেন কাঁপুনি কতটা নিয়ন্ত্রণে।

মনীন্দ্র নাথ

কেন হয় এই অসুখ? ডা. অমিত কুমার ঘোষের কথায়, সাধারণত পারিবারিক ইতিহাস থাকলেই এই অসুখ হয়। তবে সাধারণত এই অসুখ অশীতিপরদের সঙ্গী, কিন্তু অদ্ভুতভাবে মণীন্দ্রর শরীরে তা বাসা বেঁধেছিল চল্লিশে। করোনা আবহে এই অস্ত্রোপচার করাও সহজ ছিল না। রোগীর পরিবারকে বোঝানো হয় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তা।

ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন (Deep brain stimulation) অর্থাৎ ব্রেন পেসমেকার। এই অস্ত্রোপচারে ছোট্ট একটা ডিভাইসকে শরীরের মধ্যে বসিয়ে দেওয়া হয়। যার একটা অংশ থাকে বুকের চামড়ার নিচে। অন্য অংশ থাকে মাথার মধ্যে। মস্তিষ্কে ইলেকট্রনিক সিগনাল পাঠায় এই যন্ত্র। পার্কিন্সন এর কিছু সিগনালকেও ব্লক করে দেয় এই খুদে ডিভাইস। আর তাতেই ধীরে ধীরে কমে আসে কাঁপুনি। মাত্র চল্লিশেই জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে বলে ধরে নিয়েছিলেন মণীন্দ্র। কিন্তু কলকাতার ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সায়েন্স তাঁকে নতুন জীবন দিয়েছে। মণীন্দ্রর কথায়, “কোনও খাবার হাত দিয়ে তুলে মুখে দিতে পারতাম না। এতটাই কাঁপতাম। চিকিৎসকদের কাছে ধন্যবাদ তাঁরা নতুন জীবন দিয়েছেন।” আপাতত সুস্থ হয়ে চাকরিতেও যোগ দিয়েছেন মণীন্দ্র।

[আরও পড়ুন: এটিএম কার্ড হাতিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সাফের নতুন কৌশল, নিউটাউন থেকে গ্রেপ্তার ৩ জালিয়াত]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement