সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাথার খুলিতে কিছুটা চামড়া, আর পায়ের পাতায় পাতলা চামড়ার স্তর৷ এটুকু বাদ দিয়ে গোটা শরীরে কোথাও কোনও চামড়া চোখে পড়ে না৷ মা হওয়ার আনন্দে মাতবেন কী? সদ্যোজাতকে দেখে তো টেক্সাসের প্রিসিলিয়া ম্যালডোনাডোর প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার জোগাড়৷ এমনও হয়! চিকিৎসকরাও এসব দেখে সদ্যোজাতকে নিয়ে ছুটলেন হাসপাতালের নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটে৷ দেখেশুনে তাঁরা বলছেন, বিরল অটোইমিউন ডিজিজে আক্রান্ত প্রিসিলিয়ার সদ্যোজাত পুত্র৷ তাই টানা ৪ মাস তাকে রাখা হয়েছে নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটে৷
[ আরও পড়ুন: বিআরএফ সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্তে অনড় ভারত, বৈঠক চাইছে চিন]
সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রিসিলিয়া সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন৷ মা হওয়ার অনুভূতি সবে উপভোগ করছিলেন বছর পঁচিশের মার্কিন তরুণী৷ কিন্তু সদ্যোজাতকে তাঁর কোলে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি৷ উলটে বাচ্চাটিকে একটি কাপড়ে মুড়ে লেবার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন নার্সরা৷ তা দেখে স্বভাবতই চিন্তিত হয়ে পড়েন প্রিসিলিয়া৷ দীর্ঘক্ষণ তাঁকে সন্তান সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷
[ আরও পড়ুন: দক্ষিণ আফ্রিকায় চার্চ ভেঙে মৃত কমপক্ষে ১৩]
তার বেশ কয়েকদিন পর টেক্সাসের মেথডিস্ট হসপিটালের নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয় প্রিসিলিয়াকে৷ তিনি দেখেন, বাচ্চাটিকে রীতিমত টিউব, তার, ব্যান্ডেজ জড়িয়ে রাখা হয়েছে৷ তার চিকিৎসা চলছে৷ দেখেই আঁতকে উঠেছিলেন তরুণী৷ তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিল – ‘এটাই আমার সন্তান!’ কী হয়েছে প্রিসিলিয়ার সন্তানের? জন্ম থেকেই চামড়া অত্যন্ত ভঙ্গুর, শরীরের কোথাও চামড়ার আস্তরণ উঠে হাড় বেরিয়ে এসেছে৷ চিকিৎসার পরিভাষায় একে অটোইমিউন ডিজিজ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও, রোগের সঠিক নাম ‘এপিডারমোলাইসিস বুলোসা’৷ গবেষণা বলছে, সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রে এই চামড়াক্ষয়ের রোগ শুরু হয় ১৮ বছরের পর থেকে৷ সেদিক থেকে প্রিসিলিয়ার ছেলের ঘটনা একেবারেই বিরল৷
চিকিৎসকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বাচ্চাটির জীবন কঠিন৷ সামান্য আঘাতেও তার চামড়া কোনওরকম প্রতিরোধ করতে অক্ষম৷ চিকিৎসার মাধ্যমেও সারিয়ে তোলা চিকিৎসকদের কাছেই কঠিন চ্যালেঞ্জ৷ এসব শুনে প্রিসিলিয়ার স্বামী বাচ্চাটিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন৷ তবু সন্তান তো মা, বাবার কাছে থাকবে৷ আদর-যত্নে থাকবে৷ কিন্তু তাতে ভরসা পাননি প্রিসিলিয়া৷ তাই গত সপ্তাহে টেক্সাসের হাসপাতাল থেকে হিউস্টনের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ জেস টেলর, আমেরিকার জনপ্রিয় প্লাস্টিক সার্জনের কথায়, ‘এপিডারমোলাইসিস বুলোসা রোগটি বেশ জটিল৷ এই রোগ সাধারণত জেনেটিক৷ রোগটি থাকলে মানবদেহে চামড়ার মাত্র একটি স্তর তৈরি হয়৷ যা অত্যন্ত স্বচ্ছ, বাইরে দেখে প্রায় দেখাই যায় না৷ তাই মনে হয়, কোনও চামড়া নেই৷’
[ আরও পড়ুন: ‘বালাকোটে মরেনি কোনও সৈন্য বা নাগরিক’, সুষমার মন্তব্যে ভারতকে কটাক্ষ পাকিস্তানের]
বাচ্চাটিকে বাঁচাতে অনেক অর্থ প্রয়োজন৷ মা, বাবা তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের অসহায়তার কথা জানিয়ে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন৷ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং একদিনের মধ্যে ৭৪ হাজার ডলার অর্থ সংগ্রহ হয়েছে৷ এই অর্থ হাসপাতালের বিল দিতেই খরচ হবে বলে জানাচ্ছেন প্রিসিলিয়া৷ সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবিত নন তাঁরা৷ শুধু একটিবার কোলে নিয়ে দেখার জন্য তাঁদের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা৷
The post চামড়াহীন শরীর নিয়ে জন্ম, বিরল রোগাক্রান্ত শিশুকে বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ চিকিৎসকদের appeared first on Sangbad Pratidin.