অর্ণব আইচ: বাড়ির সামনে থেকে প্রিয় পোষ্যকে ‘অপহরণ’। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেন এক মহিলা। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে গোল্ডেন রিট্রিভার ‘রিও’র সন্ধানে তদন্ত শুরু করেছেন দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুর থানার (Haridebpur PS) আধিকারিকরা। এই কুকুর ‘অপহরণে’র পিছনে এক দম্পতি বা যুগল রয়েছেন বলে ধারণা পুলিশের। কলকাতায় কুকুরের অবৈধ বা বেআইনি ‘ব্রিডিং চক্র’ এই ঘটনার পিছনে রয়েছে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
ঠাকুরপুকুরের দাসপাড়ার বাসিন্দা দেবলীনা ঘোষ জানান, সরস্বতী পুজোর দিন তাঁদের বাড়ির সামনেই খেলছিল আট বছর বয়সের গোল্ডেন রিট্রিভার ‘রিও’। কিন্তু এরপর থেকে আর তার সন্ধান মেলেনি। বাড়ির লোকেরা এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন যে, বাইকে করে এক দম্পতি বা যুগল সেখানে আসে। রাস্তার সামনে কুকুরটিকে আদর করছিল তারা। হঠাৎই বাইকে দু’জনের মাঝখানে ‘রিও’কে তরা তুলে নিয়ে পালায়। রাস্তার মোড়ে একটি সিসিটিভির ফুটেজে বাইকটি গেলেও তার নম্বরপ্লেট অস্পষ্ট। যেহেতু এলাকাটি হরিদেবপুর এলাকায়, তাই বাড়ির লোক হরিদেবপুর থানায় অভিযোগ জানান।
[আরও পড়ুন: ফিল্মি কায়দায় কোটি টাকা লুট হাওড়ায়, হাতে বন্দুক নিয়ে ভিড়ে উধাও ৪ ডাকাত]
জানা গিয়েছে, দেবলীনা ঘোষ ও তাঁর পরিবারের লোকেরা গত সাত বছর আগে এক বছর বয়সের ওই গোল্ডেন রিট্রিভারটিকে উদ্ধার করেন। কুকুরটিকে তার পুরনো মালিক রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছিলেন। উদ্ধারের সময় রীতিমতো আতঙ্কে ছিল সে। গত সাত বছর ধরে ‘রিও’ তাঁদের পরিবারেরই একজন। শেষ পর্যন্ত প্রিয় পোষ্যর সন্ধান না পেয়ে তাঁরা বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান। ‘রিও’র সন্ধান মিললে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কারও দেবেন বলে ঘোষণা করেন। অভিযোগ উঠেছে, কলকাতা-সহ সারা দেশেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে বেআইনিভাবে কুকুরদের ‘ব্রিডিং চক্র’। যারা এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত, তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে ভাল জাতের কুকুর চুরি বা ‘অপহরণ’ করার চেষ্টা করে। সেগুলি তারা ‘ব্রিডিং’এর কাজে লাগায়। কুকুর শাবক জন্ম নিলে সেগুলি বিক্রি করে মোটা টাকা উপার্জন করে তারা। অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলে পুলিশের ধারণা, ‘রিও’কে চুরি বা ‘অপহরণে’র পিছনে ব্রিডিং চক্র থাকতে পারে। অপহরণকারীদের ‘টার্গেট’ থাকে পূর্ণবয়স্ক ও শান্ত কুকুর, যাদের দিয়ে ‘ব্রিডিং’ করানো যাবে। সম্ভবত সেই কারণেই তারা ‘রিও’ নামে এই পূর্ণবয়স্ক পুরুষ গোল্ডেন রিট্রিভারকে বেছে নেয়।
ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন শহরে ঘটেছে ভাল জাতের কুকুর চুরির ঘটনা। এক পশুপ্রেমী জানান, অবৈধ ‘ব্রিডিং’য়ের সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কুকুরের মাংস পাচার চক্রও। উত্তর পূর্ব ভারতের কিছু পাচারকারী এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তারা বিভিন্ন শহর থেকে কুকুর চুরি করে তার মাংস উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়েকটি জায়গা, এমনকী চোরাপথে বিদেশেও পাঠাচ্ছে। যদিও এই ব্যাপারে কলকাতায় কোনও অভিযোগ এখনও আসেনি। ‘রিও’র সন্ধান চালাতে হরিদেবপুর, ঠাকুরপুকুর ও বেহালা অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।