সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ছয়মাস পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু রক্তক্ষয়ী সংঘাত থামার নাম নেই। গাজায় লাগাতার অগ্নিবর্ষণ করে চলেছে ইজরায়েলি ফৌজ। লক্ষ্য একটাই। হামাসকে চিরতরে মুছে ফেলা। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে জঙ্গিদের ঘাঁটি। ইজরায়েলে হামলা চালিয়ে গোটা আরব বিশ্বের সমর্থন আদায়ের যে 'ষড়যন্ত্র' হামাস করেছিল তাতে বিপাকে পড়তে হয়েছে তাদেরই। মুখে হাজারও গর্জন করলেও এখনও ইহুদি দেশটির বিরুদ্ধে সেভাবে কোনও পদক্ষেপ করেনি মুসলিম দেশগুলো। ইজরায়েলের মারে নিহত হয়েছে হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়েহর তিন ছেলে। ফলে আরবের বিশ্বের কাছে আর কোনও আশা নেই হামাসের। এমনই আক্ষেপ প্রকাশ করেছে হানিয়েহর স্বামীহারা পুত্রবধূ।
প্যালেস্টাইনের জঙ্গি সংগঠন হামাসকে পুরোপুরি শেষ করতে হলে সবার আগে খতম করতে হবে মাথাদের। তাই এই মুহূর্তে তেল আভিভের ‘হিটলিস্টে’রয়েছে হামাসের রাজনৈতিক প্রধান হানিয়েহ। নিশানায় ছিল তার পুত্ররাও। কারণ ইজরায়েলের অভিযোগ, সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত ছিল কুখ্যাত এই জঙ্গির সন্তানেরাও। গত বুধবার ইদের দিন ইজরায়েলি বাহিনীর ড্রোন হামলায় মৃত্যু হয় হানিয়েহর তিন ছেলে আমির, হাজিম ও মহম্মদের। প্রাণ হারায় তার তিন নাতি-নাতনিও। পরিবারের বাকি সদস্যদের ইদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য সকলেই গাড়ি করে বাড়ি যাচ্ছিল। তখনই আঘাত হানা হয় তাদের উপর। যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল হানিয়েহ সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিল, “প্রতিশোধ ও খুনের উদ্দেশেই অপরাধী শত্রুরা কাজ করে। তারা কোনও আইন মানে না। নেতাদের পরিবারকে আক্রমণ করাতেই তারা বিশ্বাসী।” এবার আরব বিশ্বকে নিশানা করে সুর চড়াল মৃত হাজিমের স্ত্রীও।
[আরও পড়ুন: কেন ইজরায়েলে হামলা? রাষ্ট্রসংঘকে ‘ব্যর্থ’ তোপ দেগে জানাল ইরান]
ইজরায়েলের হামলায় মৃত হানিয়েহর ছেলে হাজিমের স্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আরব দেশগুলো থেকে তাদের আর কোনও আশা নেই। স্বামী ও সন্তানদের শেষ বিদায় জানিয়ে সে বলে, "আমরা সকলেই আল্লাহর সৃষ্টি। আমাদের ধৈর্যশক্তি অসীম। আমি তোমাকে আল্লাহর কাছে নিবেদন করেছি, তারা (ইজরায়েলি) ব্যর্থ হয়েছে কারণ হাজিম বেঁচে আছে। সে মারা যায়নি। গত ছয়মাস ধরে গাজায় গণহত্যা চালানো হচ্ছে। কিন্তু আরব দেশগুলো গাজার মানুষদের কোনও সমর্থন জানাচ্ছে না। আরবের কাছে কারও সাহায্য চাওয়ার দরকার নেই। তাদেরই আমাদেরকে দরকার হবে। আমাদের কখনও ওদের প্রয়োজন পড়বে না।" স্বামীর দেহ ছুঁয়ে হানিয়েহর পুত্রবধূ বলে, "তোমরা জীবিতই রয়েছ। মৃত্যু হয়েছে শত্রুদের।"
বলে রাখা ভালো, গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে বেনজির হামলা চালায় হামাস। যার বদলা নিতে গত ছয় মাস ধরে গোটা গাজা ভূখণ্ড গুঁড়িয়ে দিচ্ছে তেল আভিভ। ইতিমধ্যেই গাজায় মৃতের সংখ্যা ৩৩ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। সৌদি আরব, মিশর, জর্ডন, কাতার এই দেশগুলো বহুবার প্যালেস্তিনীয়দের মৃত্যু নিয়ে ইজরায়েলর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। কিন্তু এই ছয় মাসে ইহুদি দেশটির বিরুদ্ধে সেভাবে কোনও পদক্ষেপ করেনি তারা। এমনকী ইরানের মদতপুষ্ট লেবাননের হেজবোল্লা গোষ্ঠী মাঝে মধ্যে ইরানে মিসাইল ছুঁড়লেও তারাও প্রায় নিস্তেজ। তাই সেই অর্থে দেখতে গেলে ইজরায়েলের আক্রমণ শানিয়ে কোনঠাসা হয়ে গিয়েছে হামাসই।