দেবব্রত মণ্ডল, কুলতলি: ‘বাঘবন্দি খেলা’ শেষ হচ্ছেই না। বনকর্মীদের সমস্ত প্রচেষ্টা, অপেক্ষায় জল ঢেলে পঞ্চম দিনেও ধরা পড়ল না কুলতলিতে ত্রাস জাগানো রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার (Royal Bengal Tiger)। ড্রোন উড়িয়েও ধরা গেল না ‘বাঘমামা’কে। এবার দমকলকে ডাকা হয়েছে, বসানো হবে ক্যামেরা। ঝোপের মধ্যে থেকে এদিন বাঘ বাইরে বের করে আনার জন্য একের পর এক বাজি ফাটানো হয়। তাতেই তাতেও সাড়া মেলেনি দক্ষিণরায়ের। ফলে কীভাবে তাকে ধরা হবে, তা নিয়ে এই মুহূর্তে কিছুটা চিন্তিত বনদপ্তর।
গত শুক্রবার থেকে কুলতলি (Kultali)তে ত্রাস ছড়ানো বাঘটিতে ধরার প্রস্তুতি দেন বনকর্মীরা। দুটি খাঁচা পাতা হয় সেখানে। তাতে টোপ হিসেবে একটি ছাগল রাখা হয়। কিন্তু তাতেও খাঁচায় ধরা দেয়নি বাঘ। অন্যদিকে, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে কাবু করতে ব্যঘ্র প্রকল্পের ঘুমপাড়ানি বন্দুক নিয়ে দুটি দল তৈরি হয়ে আছে ওই জঙ্গলের মধ্যে। যাতে বাঘের উপর নজরদারি চালাতে সুবিধা হয়, তার জন্য দুটি উঁচু অস্থায়ী মাচা বানানো হয়েছে। যে মাচার ওপরে বসে আশপাশের এলাকায় নজর রাখতে সুবিধা হচ্ছে বনকর্মীদের। আর সেখানেই ঘুমপাড়ানি গুলি নিয়ে হাজিরা বিশেষজ্ঞরা। যেহেতু ঘন জঙ্গল তাই ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে বাঘকে কাবু করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে বনকর্মীদের।
[আরও পড়ুন: আনন্দপুরে বাংলাদেশি পাচার কাণ্ডে নদিয়া যোগ, ভুয়ো নথি তৈরির অভিযোগে গ্রেপ্তার এক]
২৩ তারিখ সুন্দরবনের (Sunderban)হেরোভাঙা জঙ্গল থেকে নদী পেরিয়ে বাঘটি প্রবেশ করে সুন্দরবনের কুলতলি ব্লকের শেখপাড়া এলাকায়। শুধু শেখপাড়া তেই সীমাবদ্ধ ছিল তাই নয, আশপাশ জঙ্গলে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে সে। তারপর সেই এলাকায় জাল দিয়ে ঘিরে ফেলে বনকর্মীরা। রবিবার যতটা অংশে জাল দিয়ে ঘেরা ছিল সোমবার সেই জাল দিয়ে ঘেরা অংশের বেশ খানিকটা কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে বেঁধে ফেলা সম্ভব হয়েছে বাঘকে।
এলাকায় বাঘের উপস্থিতি আর গর্জন শোনার জন্য ইতিমধ্যেই আশপাশ এলাকা থেকেও লোক গিয়ে ভিড় জমাতে শুরু করেছে সেখানে। ম্যানগ্রোভ জঙ্গলটি পুরো লোকালয় সংলগ্ন হওয়ায় মানুষের অহরহ যাতায়াত শুরু হয়েছে সেখানেও। ফল মানুষের ভিড় বাড়ার জন্য বাঘ খাঁচাবন্দি করতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে বনকর্মীদের। এদিন লাঠি উঁচিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে পুলিশ। ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বাঘ যেহেতু জঙ্গলে সেই অর্থে কিছু খাবার পাচ্ছে না। ফলে ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় বাঘ খাবার না খেয়ে থাকতে পারলেও তারপর তার খাবারের দরকার হয়ে পড়বে। খিদে পেলে খাবারের লোভ হয় সে জঙ্গলে ফিরে যাবে, নয়তো খাঁচায় রাখা ছাগলের টোপে তাকে পড়তে হবে।
[আরও পড়ুন: ঘোষিত চার পুরনিগমের নির্বাচনের দিনক্ষণ, ঝুলেই রইল হাওড়ার ভাগ্য]
এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন আধিকারিক মিলন মণ্ডল বলেন, ড্রোন (Drone)দিয়ে জঙ্গলের ঘনত্বের কারণে বাঘের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়নি। আজ সেখানে চার জোড়া ক্যামেরা বসানো হবে। বাঘের গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্যই এই ক্যামেরা। সঙ্গে দমকল কেউ রাখা হবে। অন্যান্য যা ব্যবস্থা আছে সবই থাকবে।