অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: জমিদার নেই, নেই জমিদার বাড়ির সদস্যরাও। পারিবারিক পুজো পরিণত হয়েছে সর্বজনীন দুর্গাপুজোয় ((Durga Puja 2021))। কিন্তু নিয়মের কোনও পরিবর্তন হয়নি। প্রাচীন নিয়ম মেনেই এখনও দুর্গাপুজোর আয়োজন হয় মুর্শিদাবাদের রানিনগরের সীমান্তবর্তী গ্রাম রাধাকান্তপুরের দুর্গা-কালীমন্দিরে।
১৩২৫ সালে প্রথমে পুজো শুরু হয়েছিল খড়ের চালার মন্দিরে। পরবর্তীতে ১৩৬১ সালে জমিদার পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাসের উদ্যোগে পাকা মন্দির নির্মাণ করা হয়। এখনও সেখানেই হয় পুজো। নিয়ম রয়েছে, ভাদ্র মাসে পুজোর কোনও কাজ যাবে না। সেই কারণে শ্রাবন মাসেই দুর্গাপ্রতিমার কাঠামোয় মাটির প্রলেপের কাজ করা হয়। বাকি কাজ হয় আশ্বিন মাসে। বর্তমান পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা অর্ধেন্দু সরকার জানান, “শুরু থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে। কেউ ব্যতিক্রম করতে পারেনি। পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাসের বংশ ধরেরা কেউ এখানে থাকেন না।”
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: হবে না কার্নিভাল, দুর্গাপুজো নিয়ে ১১ দফা নির্দেশিকা জারি রাজ্যের]
শোনা গিয়েছে, বছর চল্লিশেক আগে একবার ঢাকি রাগ করে মায়ের পুজোয় ঢাক বাজাননি। পরের পুজো আসার আগেই তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়েন। অনেক চিকিৎসা সত্ত্বেও বিশেষ লাভ হচ্ছিল না। তখন দেবীদুর্গা তাকে স্বপ্নাদেশে জানিয়েছিলেন, পুজোয় ঢাক বাজাতে। তারপরই সে অলৌকিক ভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। তবে সেই ঢাকি এখন আর নেই। কিন্তু তারপর থেকে তাঁর বংশধরেরাই ঢাক বাজাচ্ছেন। এমনকি পুরোহিত ও প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।
জানা গিয়েছে, পারিবারিক পুজো হিসেবে শুরু হলেও ধীরে ধীরে গ্রামের মানুষেরা জড়িয়ে পড়েছিলেন পুজোর সঙ্গে। সেই সময় গ্রামের আরেক প্রভাবশালী ব্যক্তি হরেন্দ্র নাথ সরকার, জমিদার পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাসের কাছে প্রস্তাব রেখেছিলেন পুজোর সঙ্গে গ্রামের মানুষকেও জড়িয়ে নিতে। জমিদার সে কথা মেনে নিয়েছিলেন। তারপর থেকেই গ্রামের মানুষ নানা বিষয়ে সহযোগিতা করতে শুরু করেন। পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাসের বংশধরেরা কেউ আর গ্রামে থাকেন না। তবে বাড়ি ও মন্দির রয়েছে।
পুজোর বর্তমান আরেক উদ্যোক্তা মলয় সরকার জানান, “থিম আর জাঁকজমক সম্পন্ন মণ্ডপের যুগে একটা পুজো দেখে তো মন ওঠে না দর্শকদের। তাই এখন যা কিছু আয়োজন তা ওই যুগোপোযোগী হতে হবে। কিন্তু মন্দিরের পুজোয় সেসব করা নিয়ম নেই যে! তাই গ্রামের মানুষও ছুটে যায় একাধিক মণ্ডপে।”