শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: একটা সময়ে মহিষের রক্ত দিয়ে শুরু হত পুজো। হত পাঁঠাবলিও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাণী বলি বন্ধ হয়েছে ঠিক তবে আজও পুজোও মেতে ওঠেন ইটাহারের রায়চৌধুরী বাড়ির সদস্যরা।
সাড়ে তিনশো বছর আগে শুরু হয়েছিল পুজো (Durga Puja 2023)। মহালয়ার ভোরে মহানন্দার জলে স্নান করিয়ে ঢাক-কাসর ঘণ্টা বাজিয়ে মহিষের মাথা গাঢ় সিঁদুরে রাঙিয়ে নিয়ে যাওয়া হত জমিদার বাড়িতে। বাড়ির প্রবেশ পথ মুখরিত হত শঙ্খধ্বনিতে। ঠাকুর দালানের চাতালে বলির সাক্ষী থাকতেন কয়েক হাজার মানুষ। স্বাধীনতার পর দিনাজপুরের একাংশ পড়েছে এদেশে, বাকিটা বাংলাদেশে। স্বাভাবিকভাবেই দেশভাগের পর পুজোর জাঁকজমক খানিকটা কমেছে। জানা গিয়েছে, রায়চৌধুরী বাড়িতে দেবী অন্নভোগ গ্রহণ করেন না। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বেলতলায় দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। এর পর দেবী বরণ করে ঠাকুরদালানে অধিষ্ঠিত করা হয়। সপ্তমীতে তামার বড় পরাতে ২২ খণ্ডির ডালায় হাতির দাঁত, দর্পণ, সোনা, রূপা-সহ, হলুদ, ধান, ফুল দুর্বা প্রভৃতি উপকরণ দেওয়া হয়। গ্রামবাসীরা নবমীতে জমিদার বাড়িতে পাত পেরে ভোগ প্রসাদ গ্রহণ করতেন। যদিও এখন আর জমিদারি নেই। আমন্ত্রিত অতিথি নামমাত্র। বন্ধ হয়েছে বলিও।
[আরও পড়ুন:পুজোর মুখে অস্ত্রপাচারের পর্দাফাঁস, হাতেনাতে গ্রেপ্তার ৪ দুষ্কৃতী ]
জমিদার জগৎবল্লভ চৌধুরীর দশম বংশধর কৌশিক রায়চৌধুরী। তিনি পেশায় কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার কর্মী। তিনি বলেন, “প্রাণী হত্যা ব্যাপারটা আমার একেবারে সহ্য হয় না। তাই আমি ২০১০ সাল থেকে বলি বন্ধ।” কৌশিকের মা কৃষ্ণাদেবীর কথা, “বিয়ে হয়ে এসে দেখেছি মহিষ আর পাঁঠা বলি হত। কিন্তু পুজোতে রক্ত দেখে অনেকে ভয় পেতেন। সেই সময় আপত্তি থাকলেও কিছু করা সম্ভব ছিল না। এখন অবশ্য পুজোয় ফল কেটে বলিপ্রথা রয়ে গিয়েছে।” বৃহস্পতিবার কিংবা শনিবার দশমী হলেও সূচনা পর্বের রীতি অনুযায়ী সেই সন্ধ্যায় মহানন্দার জলে দেবী বিসর্জনের ঐতিহ্য আজও অব্যহত।