স্টাফ রিপোর্টার: কদিন আগেই যে সমস্ত শিল্পী-অভিনেত্রীর মতো বিশিষ্টরা আর জি কর ইস্যুকে সামনে রেখে দুর্গাপুজোর(Durga Puja 2024) সময় 'উৎসবে নেই' বলে ঘোষণা করেছিলেন, তাঁরাই এবার রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে উৎসবকে সামনে রেখে নিজেদের স্বার্থ রণে কোমর বেঁধে নেমে পড়লেন। শুধু তাই নয়, চক্ষুলজ্জার মাথা খেয়ে উৎসবকে ব্যবহার করেই নিজেদের ব্যবসা-অর্থ উপার্জনের কর্মসূচি ফলাও করে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন ওই সব শিল্পী-বিশিষ্টরা। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম অবশ্যই সনাতন দিন্দা এবং লগ্নজিতা চক্রবর্তী।
এই সনাতন কদিন আগেই সোশাল মিডিয়ায় দুর্গাপুজো নিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে কুৎসিততম মন্তব্য করেছিলেন। আর আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের মঞ্চে গিয়ে দুর্গাপুজোর আনন্দ উৎসব থেকে দূরে থাকার ডাক দেওয়া সেইসব শিল্পীদের অধিকাংশই আগমনির আগমনকে সামনে রেখে 'ব্যবসা-রোজগার' করতে নেমে পড়লেন। শুধু তাই নয়, উৎসবে নেই বলে বিপ্লব করা স্বস্তিকার মতো বেশ কয়েকজন অভিনেত্রী পুজোয় তাঁদের ছবি রিলিজ করে দেখতে যাওয়ার জন্য এখন প্রচারে নেমেছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের মঞ্চে গিয়ে, প্রতিবাদী মিছিলে অংশ নিয়ে 'উৎসবে নেই' ঘোষণা করে গরিব হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পেটে লাথি মারার ব্যবস্থা পাকা করা শিল্পীরাই এখন নিজেদের 'ব্যবসা' জাঁকিয়ে শুরু করতে চলেছেন।
তথ্য বলছে, হাতিবাগান, গড়িয়াহাট থেকে শুরু করে পুজোর বাজার ধ্বংস করে এখন বিদেশে যাচ্ছেন গান গাইতে, শাড়ির বিজ্ঞাপনে মডেল হচ্ছেন, মণ্ডপ উদ্বোধনে মোটা টাকা নিয়ে ফিতে কাটছেন বহু 'প্রতিবাদী' শিল্পী। সোশাল মিডিয়া ও সংবাদ মাধ্যমে চটকদারি কথা বলে, কুৎসা করে ‘বাংলাকে নানাভাবে অসম্মান’ করার পর এখন উৎসবকে ঘিরেই নিজেদের সম্মান বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাঙ্ক ব্যালান্স বাড়াতে নামলেন। একদিকে সনাতন যেমন বাঘাযতীনে বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল ক্লাবে পুজোর থিম-মণ্ডপ গড়ে উদ্বোধন করলেন, তেমনই লগ্নজিতা ওই পুজোর অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন। এখানেই থামেননি তিনি, দুবাই, আটলান্টা, নিউজার্সি, ফিলাডেলফিয়া, শিকাগোতেও দুর্গাপুজোর অনুষ্ঠানে গান গাইতে যাচ্ছেন লগ্নজিতা। দুই শিল্পীর দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে এসেছে বাঘাযতীনের ওই পুজোর ৭৫তম বর্ষের উদ্বোধন ঘিরে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিল্পী সনাতন দিন্দা ও লগ্নজিতার এক পাশে ছিলেন তৃণমূল যুব সভাপতি তথা সাংসদ-অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ, অন্য পাশে ছিলেন যাদবপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার। ঘটনা উল্লেখ করে তৃণমূলের তরফে দুই শিল্পীকে তীব্র কটাক্ষ করে মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তীর মন্তব্য, "কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়।"
আর জি করের বর্বরোচিত ও জঘন্য ঘটনা নিয়ে প্রথমদিন থেকেই স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপরাধীদের কঠোরতম শাস্তির দাবিতে সরব আছেন। এমনকী, রাজ্য সরকার দেশের মধ্যে প্রথম ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় ‘অপরাজিতা বিল’ পাস করিয়ে আইন কার্যকর করতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিরোধী রাজনৈতিক দলের মদতে রাজ্যের কিছু শিল্পী-তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা সোশাল মিডিয়ায় ‘ফুটেজ’ খেতে নানা ধরনের চটকদারি মন্তব্য এবং আচরণ করেছেন। এর মধ্যে অবশ্যই দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল বিরোধী বলে পরিচিত সনাতন দিন্দা আর জি করের নির্যাতিতাকে হাতিয়ার করে ফের সংবাদ মাধ্যমে ভেসে উঠেছিলেন। বছর দশেক আগে একবার চেতলা অগ্রণীর পুজোর থিম শিল্পী ছিলেন তিনি। সেই সময় ওই পুজোর সভাপতি তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে চিরাচরিত প্রথা মেনে তাঁর মণ্ডপের প্রতিমার ‘চক্ষুদান’ করান। বস্তুত সেই ঘটনাকে উল্লেখ করে আর জি কর ঘটনার পর সনাতন দিন্দা মন্তব্য করেছিলেন, "মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে চক্ষুদান করিয়ে পাপ করেছি।" যদিও চেতলা অগ্রণীর পুজো কমিটি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এটা বহুদিন ধরে হয়ে আসছে। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পুজোর প্রতিমার চক্ষুদান করবেন এটাই রীতি, যে শিল্পী থাকেন তিনি এই ঘটনায় গর্ববোধ করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর 'উৎসবে ফিরুন' আহ্বানকে তীব্র কটাক্ষ করে যাঁরা প্রতিবাদী মিছিলে পা মিলিয়ে 'পুজোর আনন্দ উৎসব বয়কট' করার ডাক দিয়েছিলেন তাঁরাও এখন নানা মঞ্চে উঠে পড়ছেন। ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের বিদেশের একটিমাত্র অনুষ্ঠান বাতিল হওয়া নিয়ে যে সব তথাকথিত 'প্রতিবাদী' শিল্পীরা কটাক্ষ করেছিলেন, তাঁরাও এখন প্রবাসে পারফর্ম করে রোজগারের লক্ষে বিদেশের বিমানে উঠে পড়ছেন। কলকাতায় গত এক মাসে কেউ রাত দখল, কেউ ভোর দখলে পা মেলানোর পাশাপাশি পুজোর অনুদান বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন পরিচিত বামপন্থীরা। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত পুজো অনুদানের ৮৫ হাজার টাকার চেক নিতে সেই সব বামপন্থীরাই ছুটে গিয়েছেন বিভিন্ন থানায়। এমনকী, নতুন পুজোকে অনুদান দেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর বামপন্থী নেতাদের অনেকেই তৃণমূলের মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়কদের ফোনে কাতর আবেদন জানিয়েছেন। তৃণমূলের তরফে কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তীর প্রশ্ন, "যাঁরা 'উৎসবে ফেরা' নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেছিলেন, আক্রমণ করেছিলেন সোশাল মিডিয়ায়, টিভি চ্যানেলে, সেই সব শিল্পী- পরিচিত বিশিষ্টরা এখন নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে বিভিন্ন পুজো মণ্ডপের মঞ্চে উঠে পড়ছেন। সত্যিই এঁরা শিল্পী, না হলে সাত দিন আগে-পরে দুই ভূমিকায় অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন কোনটা তাঁদের মুখ ও কোনটা মুখোশ।"