স্টাফ রিপোর্টার: ডিওয়াইএফআই নেতা কলতান দাশগুপ্তের গ্রেপ্তারিকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে তাঁর সংগঠন, তাঁর দল। কিন্তু সেই সংগঠনেই আড়ি পাতলে শোনা যাচ্ছে কলতান-বিরোধী বলে পরিচিত ‘পাশে থাকা’ গোষ্ঠীর ওই নেতাদের মধ্যে একটা খুশি খুশি ভাব। সংগঠনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা কলতানের দলের শীর্ষ নেতারাও জানেন। সংগঠনে কলতান-শিবিরের দাবি, তাঁর বিরোধীরা একটা কৌশল নিয়েছেন। প্রত্যেকেই আওড়াচ্ছেন ‘ষড়যন্ত্র’ তত্ত্ব, অথচ একবারও কেউ জোর গলায় বলছেন না, বলা ভালো অস্বীকার করছেন না যে, ভাইরাল অডিও ক্লিপের গলা কলতানের নয়।
সন্দেহ হওয়ারই কথা। তাহলে কি এবার কলতানের উত্থানে যাঁদের ভ্রূক্ষেপ ছিল, তাঁরা এবার একটু সংগঠনে সামনের সারিতে উঠে আসতে পারেন! তাই কৌশলে কলতানকে কোণঠাসা করার একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তা না হলে প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুললেও পার্টির ভিতরে ঘরোয়া আলোচনায় শনিবার কেন বারবার সেই বিরোধী শিবিরই প্রশ্ন তুলছেন এই বলে যে, ‘কলতান এই কাজ কেন করল? এটা তো পার্টির লাইন না’! জানা যাচ্ছে, কলতান-বিরোধী শিবির এদিন সংগঠনে জোরালো বক্তব্য দিয়ে সরব হয়েছে এই বলে যে, ‘এই ধরনের কথোপকথনে কীভাবে কলতান যুক্ত হলেন। যুব সংগঠনের এই নেতার এমন কাজের অর্থ তো গোটা সংগঠনের ভাবমূর্তির দিকে আঙুল ওঠা।’
প্রকাশ্য়ে এই ‘বিরোধীরা’আপাতত তাঁর পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেও এই ঘটনার জল কতদূর গড়াতে পারে দেখে সংগঠনের নেতৃত্ব কলতানের দায় ঝেড়েও ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলতানের এক শুভাকাঙ্ক্ষী এক ডিওয়াইএফআই নেতার বক্তব্য, “আমাদের কানে সবটা এসেছে। আমরা সবই নজরে রাখছি। কারা কোন পথে কাকে কোণঠাসা করতে চাইছে সেটা আমরা বুঝতে পারছি।” এই ঘটনায় দলের সিনিয়রদেরও কারও কারও প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে বলে সন্দেহ কলতান শিবিরের। কলতান গ্রেপ্তারের সঙ্গে সঙ্গেই সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় অভিযোগ তুলেছিলেন, “স্পষ্ট ষড়যন্ত্র। আমাদের আন্দোলন ভাঙার জন্য এভাবে কলতানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
দলের সিনিয়র নেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, এই অডিও ‘তৈরি করতে’ এআই অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেওয়া হয়েছে। তবে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই বা মহিলা সমিতির কেউই ‘এআই ষড়যন্ত্রের’ কথা বলেনি। স্বাভাবিকভাবে এই পরিস্থিতিতে স্পষ্ট দুভাগ হয়ে গিয়েছে কলতান-পন্থী ও বিরোধী দুই শিবির। মীনাক্ষী ছাড়া ধ্রুবজ্যোতি সাহা, দীপ্সিতা ধর আর কলতানরা এই মুহূর্তে সংগঠনের প্রথম সারির নেতা। বাকিদের মধ্যে কলতান নেতৃত্বের অন্যতম মুখ হিসাবে উঠে আসছেন। কলতান শিবিরের বক্তব্য, “ঠাণ্ডা একটা চোরা স্রোত, একটা প্রতিযোগিতা তাঁদের মধ্যে আছে। যদিও কলতান এসব মানতে চায় না।” কলতানের বিরোধী শিবিরের অনেকেই প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তলে তলে এই ঘটনায় খুশি। কলতানের এক বন্ধু দাবি করেছেন, পরিস্থিতি যা বোাঝা যাচ্ছে, তাতে এখনই কলতানকে ‘ওরা’ দোষী বলে হয়তো দাগিয়ে দেবে না। যদিও দলের মধ্যেই তারা বলছে ‘কলতানের গলা’ সংগঠনে বিপদ ডেকে আনল। এটাকেই দলের চোরা স্রোত বলে মানছে কলতান শিবির।