সুব্রত বিশ্বাস: করোনা আবহে যাত্রী সংখ্যা তলানিতে এসে পড়ায় পূর্ব রেলের ১৯টি মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন বাতিলের অনুমতি দিল রেল বোর্ড। গত ২৬ এপ্রিল পর্যাপ্ত যাত্রী না হওয়ায় ট্রেনগুলি অস্থায়ী ভাবে বন্ধের অনুমতি চেয়েছিল পূর্ব রেল। বৃহস্পতিবার ১৯টি ট্রেন বাতিলের প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে রেল বোর্ড পূর্ব রেলকে তা কার্যকর করতে বলেছে। তবে কবে থেকে এই ট্রেন বাতিল হবে তা ঠিক করবে পূর্ব রেলই।
[আরও পড়ুন: ২টি গাছ কেটে ১ কোটি ২১ লক্ষ টাকা জরিমানার মুখে জঙ্গল মাফিয়া!]
আগেই পূর্ব রেল জানিয়েছিল, ২৯ এপ্রিল রাজ্যের ভোট পর্ব মিটে গেলে ট্রেন বাতিল শুরু হবে। উনিশটি ট্রেনের মধ্যে হাওড়া থেকেই বাতিল হচ্ছে আটটি, বাদ বাকি শিয়ালদহ, কলকাতা, মালদহ, ভাগলপুর থেকে। দিন তিনেক আগে রেল বোর্ডের সঙ্গে পূর্ব রেলের কর্তাদের কোভিডের বর্তমান পরিস্থিতিতে যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে স্পষ্ট করা হয়েছিল যে স্বল্প দূরত্বের প্রায় সবক’টি ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা কুড়ি শতাংশেরও কম হচ্ছে। ফলে তা এখন অস্থায়ীভাবে বন্ধ করা যেতে পারে। প্রস্তাবে এদিন সিলমোহর দেয় বোর্ড। যে ১৯টি ট্রেন বাতিল হবে তা হাওড়া-রামপুরহাট স্পেশ্যাল, হাওড়া-রাঁচি শতাব্দী স্পেশ্যাল, হাওড়া-দানাপুর স্পেশ্যাল, আসানসোল-হলদিয়া স্পেশ্যাল, শিয়ালদহ-রামপুরহাট স্পেশ্যাল, ভাগলপুর-আজমের স্পেশ্যাল, হাওড়া-রামপুহাট স্পেশ্যাল, হাওড়া-আজিমগঞ্জ স্পেশ্যাল, কাটোয়া-আজিমগঞ্জ স্পেশ্যাল, হাওড়া-আসানসোল স্পেশ্যাল, কলকাতা-লালগোলা স্পেশ্যাল, হাওড়া-সিউড়ি স্পেশ্যাল, নবদ্বীপ ধাম-মালদহ টাউন স্পেশ্যাল, ভাগলপুর-মুজফফরপুর স্পেশ্যাল, মালদহ-দিল্লি স্পেশ্যাল, মালদহ-কিউল স্পেশ্যাল, আসানসোল-টাটা স্পেশ্যাল, হাওড়া-শান্তিনিকেতন স্পেশ্যাল, আসানসোল-দিঘা স্পেশ্যাল।
উল্লেখ্য, রেলকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ মাত্রারিক্ত পর্যায়ে চলে যাওয়ায় চিন্তিত রেল। ১ মে থেকে ১৮ থেকে ৪৫ বছরের ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হচ্ছে। এই বয়সের রেলকর্মীদের ভ্যাকসিন কীভাবে দেওয়া হবে? অত্যাধিক চাপ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে তা নিয়ে এদিন রেল জোনের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে ভারচুয়াল মিটিং করেন রেল বোর্ডের ডিরেক্টর অফ হেল্থ বিজয় কুমার। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের প্রিন্সিপাল সিএমডি রুদ্রেন্দু ভট্টাচার্য ও মিহির চৌধুরী এদিন আলোচনায় ছিলেন। নতুন যুক্ত হওয়ায় রেলকর্মীদের ভ্যাকসিনের বিষয়ে তিনটি পদক্ষেপের কথা ভাবা হয়েছে। রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত প্রক্রিয়ায় এখন যেমন ভ্যাকসিন চলছে সেই প্রক্রিয়া চলতে পারে নতুনদের ক্ষেত্রে। রাজ্যের ভ্যাকসিন ঠিকমতো জোগান না থাকলে কেন্দ্রের অনুমতিতে রেল তা কিনে নিতে পারে। এই দু’টো না হলে রেলকর্মীরা প্রাইভেটে গিয়ে ভ্যাকসিন নিতে পারে। সেক্ষেত্রে টাকা দিয়ে দেবে রেল। এক সঙ্গে এই তিনিটি প্রক্রিয়াও কার্যকর হতে পারে বলে বোর্ডের স্বাস্থ্য আধিকারিক নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, রেলকর্মীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় হাওড়া, শিয়ালদহে লোকাল ট্রেন বাতিলের তালিকা প্রায় একই রয়েছে। লোকালের যাত্রী সংখ্যাও এখন অর্ধেকের কম হওয়ায় ট্রেন বাতিলে বিশেষ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে না বলে সূত্রের মত। যদিও এদিন শিয়ালদহ-ক্যানিং শাখায় লোকাল ট্রেনের সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে চম্পাহাটিতে বিক্ষোভ দেখান যাত্রীরা। এদিকে, এখনও কিছু যাত্রী মাস্ক না পরে ট্রেনে চড়ছেন। বৃহস্পতিবার হাওড়া স্টেশনে ২৯জন মাস্কবিহীন যাত্রীকে জরিমানা করা হয়। শিয়ালদহেও ১৮ জনের মতো একই অপরাধ করে জরিমানা দেন। লোকালের তুলনায় দূরপাল্লা ট্রেনে এই ধরণের মাস্কবিহীন যাত্রী বেশি বলে রেল জানিয়েছে।