shono
Advertisement

নতুন বছরে আশার আলো, করোনা সংকটেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি

করোনা আবহেও চার-ছক্কা মেরে ব্যাটিং শুরু করেছে ২০২১।
Posted: 04:48 PM Jan 05, 2021Updated: 04:48 PM Jan 05, 2021

সুতীর্থ চক্রবর্তী: প্রত্যাশা যেরকম ছিল, সেরকমই চার-ছক্কা মেরে ব্যাটিং শুরু করেছে ২০২১। প্রথম দিনেই জোড়া সুখবর। একদিকে কোভিড ভ্যাকসিনের ছাড়পত্র ও অন্যদিকে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সংকেত। বছরের প্রথম দিনটি নিয়ে আমাদের প্রত্যেকেরই একটা সংস্কার থাকে। বাকি বছরটা কেমন যাবে, প্রথম দিনেই তার বার্তা মেলে বলে আমরা মনে-মনে বিশ্বাস করি। আপাতত আমাদের সকলের প্রার্থনা প্রথম দিনের বিশ্বাসটাই যেন বছরের শেষদিন পর্যন্ত ধরে রাখতে পারি।

Advertisement

[আরও পড়ুন: অতিরিক্ত সুবিধা পাচ্ছেন মুসলিম ব্যবসায়ীরা! রেড মিট ম্যানুয়াল থেকে ‘হালাল’ শব্দ সরাল কেন্দ্র]

১৩৮ কোটির দেশ কোভিড মোকাবিলায় যথেষ্ট নাজেহাল হবে বলে আশঙ্কা ছিল। কিন্তু তা অনেকটাই দূর হয়েছে বলে ধারণা। গোটা দেশে অল্প সময়ে সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে যেভাবে খাড়া করা গিয়েছে, তা অভাবিত। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারগুলির ভূমিকা খুবই উল্লেখযোগ্য ছিল। এই সময়কালে যাঁদের বেলেঘাটা আইডি, মেডিক্যাল কলেজ বা বাঙুর হাসপাতালের মতো কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাঁরা নিশ্চিত করেই উপলব্ধি করেছেন সরকার চাইলে কী করতে পারে। চিকিৎসক, নার্স ও অসংখ্য স্বাস্থ্যকর্মীর দায়বদ্ধতায় যে এটা সম্ভব হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রেও এটা সতি্য। জীবন বাজি রেখে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা যে দেশজুড়ে এইভাবে কোভিড মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়বেন, তা মহামারী শুরুর পর্বে এতটা বোঝা যায়নি। রাতারাতি অজস্র কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র, সেফ হোম, টেস্ট করার পরিকাঠামো ইত্যাদি যে গড়ে ফেলা সম্ভব হবে, তা কল্পনাই করা যায়নি।

ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও দেশজ গবেষণা ও প্রযুক্তি যে এইভাবে দ্রুত কার্যকর হবে, তা ভাবা যায়নি। এক্ষেত্রেও তো আমরা ইংল্যান্ড, আমেরিকার চেয়ে বিশেষ পিছিয়ে রইলাম না। বহু উন্নত ও ধনী দেশ কিন্তু এখনও ভ্যাকসিনের বিষয়ে ভারতের সমকক্ষ নয়। বরং ভারতে তৈরি ভ্যাকসিনের দিকে তাকিয়ে বহু উন্নত দেশ। কেন্দ্রীয় সরকার ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকদের নির্দেশ দিয়েছে এখনই রফতানি নয়। আগে দেশের মানুষকে টিকাদান কিছুটা অগ্রসর হোক, তারপর রফতানির প্রসঙ্গ আসবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, বিশ্বের বৃহত্তম টিকাদান কর্মসূচি ভারতে হতে চলেছে। বাস্তবিক তাই। কোভিড মহামারী আমাদের অন্তর্নিহিত শক্তি দেখিয়ে দিল। নিজেদের ক্ষমতার প্রতি আস্থাও বাড়াল। বছরের প্রথম দিন অামরা জানতে পারলাম, ডিসেম্বরে দেশে জিএসটি আদায় সর্বকালীন রেকর্ড করেছে। ২০১৯-এর ডিসেম্বরের থেকেও ১২ শতাংশ বেশি। লকডাউনের সময় যে অর্থনীতির প্রায় ২৪ শতাংশ সংকোচন ঘটল, কয়েক মাসের মধ্যেই সেখানে জিএসটি আদায়ের সর্বকালীন রেকর্ড কীভাবে সম্ভব হল? বিস্মিত হতে হলেও ঘটনাটি তো ঘটল! জিনিসের কেনাবেচা বেড়েছে বলেই এটা সম্ভব হল। বাজারে ব্যবসা বাড়ার অর্থই হল, অর্থনৈতিক কাজকর্ম বাড়ছে। গত একমাসে আমদানি ও রফতানি দুটোই বেড়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে, অতিমারী ও লকডাউনের আর্থিক ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।

রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তখন একটি অনুষ্ঠানে তিনি অাক্ষেপ করে বলেছিলেন, যাঁদের হাতে প্রচুর টাকা আছে, তাঁরা কেউ লগ্নি করতে চাইছেন না। সবারই লক্ষ্য টাকা নিয়ে ফাটকা খেলা। উদ্যোগী হওয়ার ঝুঁকি নিতে কেউ রাজি নয়। অর্থমন্ত্রীর চেয়ারে বসে যে সমস্যা প্রায় এক দশক আগে প্রণববাবু উপলব্ধি করেছিলেন, সেই সংকট থেকে আজও দেশ মুক্ত হয়নি। লকডাউনে যখন দেশের অর্থনীতির এক—চতুর্থাংশ উবে যাচ্ছে, তখনও শেয়ার বাজার চাঙ্গা! অর্থাৎ, পুঁজিপতিদের টাকা কলকারখানায় লগ্নি হচ্ছে না। শেয়ারের ফাটকায় তা খাটছে।

কোভিড মোকাবিলায় সাফল্য এবার নিশ্চয়ই দেশের পুঁজিপতিদেরও আস্থা বাড়াবে। সরকার যখন তার কর্মীবাহিনী নিয়ে এত বড় একটি অতিমারী সামাল দিতে পারে, তখন নিশ্চয়ই এই দেশবাসীকে নিয়ে আর্থিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। পুঁজিপতিদের লগ্নি করতে বললেই তাঁরা কর্মসংস্কৃতির কথা বলেন। যে ভারতীয় উদ্যোগী চিনে গিয়ে লগ্নি করছেন, তিনি সবসময়ই বলবেন দেশে কর্মসংস্কৃতি নেই। কোভিড মোকাবিলার পর প্রমাণিত হল, ভারতবাসীও পারে কর্মসংস্কৃতির সেই শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছতে। সরকারের যে কর্মীবাহিনী, তা দেশেরই মানুষ। লক্ষ্য ও তাগিদ থাকলে দেশবাসীও যে শৃঙ্খলাপরায়ণ হয়ে যে কোনও চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত, তা মহামারী আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল। চিনের কর্মসংস্কৃতির সাফলে্যর মূলে বলা হয় শৃঙ্খলাপরায়ণতা। সেই শৃঙ্খলাপরায়ণতা যে ভারতেও সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় দূর করার এবার সময় এসে গিয়েছে।

কোভিড মোকাবিলার এই শিক্ষা থেকে দেশকে আত্মনির্ভরতার দিকে নিয়ে যাওয়ার আস্থা গ্রহণ করুন আমাদের ব্যবসায়ীরা। বাজার চাঙ্গা হচ্ছে। জিনিসপত্রের চাহিদা বাড়ছে। নতুন বছরে অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর জন্য এবার আরও লগ্নি আসুক। শিল্পপতিরা নির্ভয়ে লগ্নি করুন। কোভিড মোকাবিলায় যে সাফল্য আমরা দেখিয়েছি দেশকে অল্প দিনে, উন্নত দুনিয়ার সমকক্ষ করার লক্ষে্যও আমরা সেই লাভ করতে পারব। অতিমারী আমাদের মধে্য এই আশার সঞ্চার ঘটিয়ে গেল। অন্ধকারের উল্টো পিঠে আলো থাকে। নতুন বছরে আমরা সেই আলোর দিকটাই যেন শুধু দেখে যেতে পারি।

[আরও পড়ুন: অবশেষে গ্রেপ্তার গাজিয়াবাদের শ্মশান দুর্ঘটনার মূল অভিযুক্ত, কড়া শাস্তির হুঁশিয়ারি যোগীর]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement