নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে পদপিষ্টর ঘটনা যেমন প্রশাসনের গাফিলতি দর্শায়, তেমনই ‘ভাইরাল-সংস্কৃতি’ও এ বিপর্যয়ের দায় এড়াতে পারে না।
সম্প্রতি, নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাঁদের বেশিরভাগই মহিলা ও শিশু। এই ঘটনাটি ভারতে ভিড় নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থার অনুপস্থিতি বা ব্যর্থতার আরও একটি উদাহরণ হয়ে থাকল। শনিবার রাত ১১টা নাগাদ ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ ঘটনায় বহু মানুষ আহতও হয়। এই যাত্রীদের প্রত্যেকেই মহাকুম্ভের যাত্রী। প্রত্যক্ষদর্শীরা এই দুর্ঘটনার জন্য যাত্রীদের অত্যধিক ভিড়কে দায়ী করেছেন, যা নাকি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।
নয়াদিল্লি স্টেশনের এই ঘটনা কুম্ভমেলার মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রশাসনের গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয়। তেমনই আমজনতার অসংযত ধর্মীয় উন্মাদনাও এক বিপদসংকেত। প্রয়াগরাজে আগত পুণ্যার্থীর সম্ভাব্য সংখ্যা সম্পর্কে প্রশাসন সম্পূর্ণ অবগত ছিল। তবুও, পুণ্যার্থীদের স্থিতিশীল এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর যাত্রী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ব্যর্থ হয়েছে। পরিবর্তে, ‘ভিআইপি’ পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে বেশি নজর দেওয়া হয়েছিল। ফলে আম পুণ্যার্থীদের একটি মারাত্মক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে।
ধর্মীয় মেলা এবং জনসমাগম দীর্ঘ দিন ধরে ভারতের সংস্কৃতির অঙ্গ। প্রশাসন মহাকুম্ভে সমাগমের সংখ্যা অনুমান করতে পারলেও, তারা অনুষ্ঠানের প্রসার-বৃদ্ধিতে, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব আন্দাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই মনে হয়। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দৌলতে ‘ভাইরাল’ হওয়া কুম্ভমেলা-সম্পর্কিত বিষয়বস্তু, অপ্রত্যাশিতভাবে পুণ্যার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি– এসবই আর কারওর অজানা নয়। সরকার বা প্রশাসন হয়তো মহাকুম্ভে কত মানুষের সমাগম হবে, তা ধরে নিয়েই সবরকমের আয়োজন করেছিল। কিন্তু কিছু মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় কুম্ভের অসংখ্য ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানটিকে রীতিমতো বিনোদনে পরিণত করেছে। কুম্ভমেলার শুরুতে এতটা ভিড় লক্ষ করা যায়নি। মাঝামাঝি সময় থেকে মানুষের উন্মাদনা বাড়তে দেখা গিয়েছে। একাধিক অগ্নিকাণ্ড ও মৌনী অমাবস্যায় কুম্ভে পদপিষ্টর ঘটনাও কাউকে প্রয়াগের সংগমে যাওয়া আটকাতে পারেনি।
নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্টর ঘটনা তারই প্রমাণ। প্রয়াগের রুটে অন্যান্য বড় রেলস্টেশনেও এই চিত্র দেখা গিয়েছে। কুম্ভে বিপর্যয়ের দায় সরকার এড়াতে পারেনি। সবচেয়ে বড় ভুল হল, এই কালে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপ্তি আন্দাজ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সরকার কুম্ভে আরও বেশি লোক টানার খেলায় না-মেতে এই সোশ্যাল মিডিয়া ‘পোস্ট’ নিয়ন্ত্রণ করলে হয়তো বিপর্যয় কমানো যেত। সরকার ও প্রশাসনের কাছে এ-ও বড় শিক্ষা। আশা করি, ভবিষ্যতে এই শিক্ষা তাদের কাজে লাগবে। সরকার এবং প্রশাসনকে তাদের পদ্ধতির ফঁাকগুলি স্বীকার করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্যোগ প্রতিরোধের জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ করতে হবে।