প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় ভারতের উপর আমেরিকার চাপানো শুল্ক তুলনামূলক কম। তাই শুল্কের গুঁতো খেয়েও ভারত মুখ খোলেনি।
আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হল। ভারতের উপর চড়া হারে শুল্ক চাপালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প এটাকে বলছেন ‘পাল্টা শুল্ক’। ২ এপ্রিল যে ট্রাম্প তাঁর পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করবেন, হুঁশিয়ারি অনেক অাগে থেকেই ছিল। আমেরিকার সঙ্গে যে যে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তারা সকলেই ট্রাম্পের এই পাল্টা শুল্কের তিরে বিদ্ধ। ২ এপ্রিল দিনটিকে ট্রাম্প ‘স্বাধীনতা দিবস’ ঘোষণা করেন। তিনি জানিয়েছেন, গোটা বিশ্বের উপর পাল্টা শুল্ক চাপিয়ে তিনি আমেরিকার শিল্প ও ব্যবসাকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। ট্রাম্পের দাবি, আমেরিকায় ব্যবসা করে বহু দেশ বড়লোক হয়েছে। এবার আমেরিকার তাদের থেকে পাল্টা আদায় করার সময়। কোন দেশ মার্কিন পণ্যের উপর কত শুল্ক চাপায় সেই তালিকা নিয়ে হাজির হন ট্রাম্প। পাল্টা আমেরিকা কার উপর কত শুল্ক চাপাচ্ছে, সেই তালিকাও তুলে ধরেন।
তালিকায় দেখা যাচ্ছে– ভারত মার্কিন পণ্যের উপর গড়ে ৫২ শতাংশ শুল্ক চাপায়, পাল্টা হিসেবে ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের উপর গড়ে ২৭ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন। অর্থাৎ, মার্কিন বাজারে যে কোনও ভারতীয় পণ্য ২৭ শতাংশ দামি হয়ে গেল। বাজারে জিনিসের দাম বাড়লে তার চাহিদা কমে। ফলে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের বিক্রি আগের থেকে কমবে। আমেরিকায় ভারতের রপ্তানি কমবে, যার ধাক্কা এসে লাগবে ভারতীয় অর্থনীতিতে।
তবে ভারতের ক্ষেত্রে আশার দিক হল, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের উপর ট্রাম্প আরও বেশি হারে শুল্ক চাপিয়েছেন। ভিয়েতনামের পণ্যের উপর ৪৬ শতাংশ, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের পণ্যের উপর ৩৭ শতাংশ, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের উপর যথাক্রমে ৪৪ ও ৩০ শতাংশ শুল্ক চেপেছে। সর্বোপরি চিনের পণ্যের উপর চেপেছে ৩৪ শতাংশ শুল্ক। আমেরিকার বাজারে পণ্য ও পরিষেবা বেচার ক্ষেত্রে এই দেশগুলি ভারতের প্রতিযোগী। ভারতের চেয়ে এদের উপর শুল্কের বোঝা বেশি হলে প্রতিযোগিতায় ভারতের তুলনামূলক সুবিধা। ট্রাম্প সেকথা ঘোষণাও করেছেন। সেকারণে শুল্কের গুঁতো খেয়েও ভারত তার কৌশলগত সহযোগীর বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো আমেরিকার বন্ধু দেশও হুমকি দিয়েছে মার্কিন পণ্যের উপর চাপানো শুল্ক আরও বেশি করার। ভারতের সেখানে বার্তা– শুল্ক কমানোর। ভারত-আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। আলোচনা চলছে পরস্পরের জন্য বাজার পুরোপুরি উন্মুক্ত করার। ভারত একই ধরনের বাণিজ্য চুক্তি চাইছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও। তবে আপাতত ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের ধাক্কায় বিপন্ন ভারতের অলংকার শিল্প। আমেরিকায় ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি যায় অলংকার। এই শিল্পকে বাঁচাতে কেন্দ্রের উচিত আপৎকালীন কোনও পদক্ষেপ করা।