shono
Advertisement
Nepal

জনতার ক্ষোভে অগ্নিগর্ভ নেপাল, কেন রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবি?

নেপালের একটা বড় অংশর জনতা ধর্মনিরপেক্ষতাকে হিন্দু-বিরোধী হিসাবে দেখে।
Published By: Kishore GhoshPosted: 05:11 PM Apr 01, 2025Updated: 05:11 PM Apr 01, 2025

রাজতন্ত্রর প্র‌ত‌্যাবর্তন এবং হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে সরব নেপাল। প্রজাতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রতি পুঞ্জীভূত জনতার ক্ষোভেই তপ্ত প্রতিবেশী দেশটি।

Advertisement

ভারতের আরও একটি প্রতিবেশী দেশ আরও একবার নজিরবিহীন রাজনৈতিক সংকটের মুখে। গণতন্ত্রর পরিবর্তে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে ঘিরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নেপালে। রাজধানী কাঠমান্ডুতে রাজতন্ত্র-পন্থী বিক্ষোভ হিংসাত্মক রূপ ধারণ করেছে। ব্যাপক ভাঙচুর এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে। একজন সাধারণ নাগরিক ও একজন সাংবাদিকের মৃতু‌্যতেই বোঝা যাচ্ছে যে, পরিস্থিতি কতটা গুরুতর হয়ে উঠেছে। মনে করা হচ্ছে, প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহর সাম্প্রতিক একটি বক্তৃতায় ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ রাজতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে উসকে দিয়েছে। দেশের প্রজাতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রতি জনতার ক্ষোভ দিনে-দিনে পুঞ্জীভূত হয়েছে।

বছরের পর বছর ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা, শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা এবং অর্থনৈতিক সংগ্রামে প্রজাতন্ত্রর প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে। এবং তা এখন সংগঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি এবং ডানপন্থী নেতা তথা শিল্পোদ্যোগী দুর্গা পরাসই জনতার এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন। এসবই উপলক্ষ‌ মাত্র। দফায়-দফায় সংঘর্ষ, প্রাণহানি ও গ্রেফতারির খবর সামনে আসছে। পরিস্থিতি সামাল নিতে কার্ফু জারি হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকায়। কিন্তু তার পরও হিংসা, তাণ্ডব এড়ানো যাচ্ছে না। ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির নেতা রবীন্দ্র মিশ্র এবং ধবল শামশের রানাকে পুলিশ আটক করেছে।

দেশের নেতৃত্বকে রাজতন্ত্রবাদী সহানুভূতিগুলিকে সরাসরি খারিজ করার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশ্বাস পুনরুদ্ধারে প্রকৃত সংস্কারের জন‌্য কাজ করতে হবে। একদা নেপালে ছিল রাজতন্ত্র, একক শাসনব্যবস্থা এবং একটি হিন্দু রাষ্ট্র। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র। তবে নেপালের একটা বড় অংশর জনতা ধর্মনিরপেক্ষতাকে হিন্দু-বিরোধী হিসাবে দেখে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো কার্যকরভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে ব্যর্থ হয়েছে এবং প্রজাতন্ত্র শুধুমাত্র রাজতন্ত্রর পরিবর্তে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক অভিজাতদের কুক্ষিগত হয়েছে। জনসাধারণের এই হতাশাই রাজতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন হয়ে উঠেছে। শাসনকার্যে দুর্বলতার কারণে জনতা রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হারিয়ে আগের রাজতন্ত্রকেই ‘শ্রেয়’ বলে মনে করতে শুরু করেছে।

আসলে এটি রাজতন্ত্র ফেরানোর জন‌্য যতটা না, তার চেয়ে বেশি হল জনতার প্রতিষ্ঠান-বিরোধী মনোভাব। নেপালিরা প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য মরিয়া। কিন্তু গণতন্ত্রী বা রাজতন্ত্র-পন্থী শক্তি, কেউই বিশ্বাসযোগ্য ‘বিকল্প’ দেখাতে পারছে না। রাজতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন অবশ্য নেপালের সমস‌্যাগুলির সমাধান নয়। অতীতের শাসন ব‌্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, অর্থনৈতিক সুযোগ নিশ্চিত করা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বছরের পর বছর ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা, শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা এবং অর্থনৈতিক সংগ্রামে প্রজাতন্ত্রর প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে।
  • দেশের নেতৃত্বকে রাজতন্ত্রবাদী সহানুভূতিগুলিকে সরাসরি খারিজ করার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশ্বাস পুনরুদ্ধারে প্রকৃত সংস্কারের জন‌্য কাজ করতে হবে।
Advertisement