মুকেশ আম্বানি অগ্রগণ্য শিল্পপতি, অর্বুদপতি। তাঁর পুত্রের বিয়েতে সেলব-ঝড় উঠবে স্বাভাবিক, কিন্তু কোথাও কি নিয়ন্ত্রণ-রেখাও থাকবে না!
ব্যবসায় মন্দা চলছে। বড় পুঁজির খুব দরকার, ডুবন্ত রাজপাটকে টেনে তোলার জন্য। শর্টকাট চিন্তায় মাথায় এল– বিয়ে। পুঁজিপতি ও তাঁর স্ত্রী ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিলেন, তাঁদের ছেলের তো বিয়ের বয়স হয়েছে। অন্য একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর মেয়ের সঙ্গে যদি নিজেদের ছেলেকে আলাপ করিয়ে দেওয়া যায়, ও বেঁধে ফেলা যায় তাদের বিয়ের বন্ধনীতে? সেই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর মেয়ের বিয়ে নিয়ে জব্বর জটিলতা চলছে। এই তো সুযোগ, মওকা বুঝে ফায়দা তুলে নেওয়ার!
সন্তর্পণে পরিকল্পনা গোছাতে থাকেন পুঁজিপতি দম্পতি। পুঁজিপতির জন্মদিন উপলক্ষে ধুমধাম করে ক্রুজে পার্টি দেওয়ার কথা ঘোষিত হয়। ডাকা হয় সে-ই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীকেও। উভয়ের সম্পর্কে, ব্যবসায়িক কারণেই,
মরচে-দাগ রয়েছে অল্পবিস্তর। সেটা কাটাতে হবে। মসৃণ করতে হবে যোগের শিকড়। পরিস্থিতি কিছুটা সায়ও দেয়। ডুবন্ত পুঁজিপতির ছেলে এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর মেয়ের মধ্যে বন্ধুতা তৈরি হয়। তারা প্রায় সমবয়সি বলে ভাবের অাদানপ্রদানেও স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব নেই।
কিন্তু নিয়তির মুচকি হাসিতে বাস্তবে মোচড় আসে। এই দু’টি ছেলেমেয়ে পরস্পরের সঙ্গে ভাব জমাতে আগ্রহী, কিন্তু ‘বিয়ে’-র গ্রন্থিতে আবদ্ধ হতে রাজি নয়। কথাবার্তা, ঠাট্টা-ইয়ার্কি সবই করতে থাকে তারা দু’জন। কিন্তু তার সঙ্গে প্রেম-ভালবাসা বা একত্রে থিতু হওয়ার ব্যাপার নেই। পুঁজিপতি দম্পতির এত সাধ করে বানানো প্ল্যান তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে থাকে। এরা বিয়ে করলে, ব্যবসা বঁাচত। কিন্তু এই তরুণ-তরুণী বিয়ের সঙ্গে ব্যবসাকে জড়াতে চায় না, তারা অকারণ তামঝামও চায় না, নিভৃতে প্রেম উদ্যাপন করতে চায়। জোয়া আখতারের সিনেমা ‘দিল ধড়কনে দো’ (২০১৫) শেষাবধি ক্রুজের পার্টি, বিলাস-ব্যসন, প্রভূত আয়োজনের বেলুনটাকে ফুটো করে দেয়।
এই গল্পের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ নেই, কিন্তু যদি বাহুল্য ও উপলক্ষের কথা ওঠে, তাহলে যে-প্রশ্ন তীক্ষ্ণ শলাকার মতো উত্থিত হয়ে মনে বিঁধতে চাইছে, তা হল, একটি বিয়ে ঘিরে কেন এত দেখানেপনা, কেন এত অর্থের উল্লাস, কেন প্রাচুর্যের এত নিলাজ প্রদর্শনী? একটি নামি বিদেশি সংবাদমাধ্যম এই বিয়েতে হওয়া জলের মতো অর্থব্যয়কে ‘অবসিনিটি’ বলে উল্লেখ করেছে। মুকেশ অাম্বানি দেশের অগ্রগণ্য শিল্পপতি। পৃথিবীর প্রথম পনেরো ‘ধনী ব্যক্তি’-র তালিকায় তঁার নাম সংযোজিত হয়। সেজন্যই হয়তো তঁার থেকে সংযমের প্রত্যাশা ছিল বেশি।
তাঁর পুত্রের ‘প্রি-ওয়েডিং সেশন্স’-সহ বিয়েতে চাঁদের হাট বসবে, সেলেবে ছয়লাপ হবে আসর– ঠিকই। কিন্তু তা’ বলে কি মাত্রাবোধ থাকবে না? বিয়ের মাধুর্যে নব দম্পতি প্রসন্ন হবে, আচ্ছন্ন হবে, নেশাতুর হবে– এতেও অস্বাভাবিকতা নেই। কিন্তু যা চোখে লাগে– বিয়ের উৎসব-মন্থনের মধ্যেও যেটুকু দাম্পত্য-নিভৃতি থাকে, তা এখানে খুন হল না তো!