shono
Advertisement
Kolkata

জলমগ্ন শহরে অ্যাপ-বাইকের সারচার্জ গগনচুম্বী, সাহায্যের বার্তা টাকার নিক্তিতে মাপা!

লোভের হাঁমুখ এতখানি বিস্তৃত না-করলে কি চলত না?
Published By: Biswadip DeyPosted: 08:19 PM Sep 25, 2025Updated: 08:19 PM Sep 25, 2025

মঙ্গলবার জলমগ্ন শহর চিরে মানুষ যেমন নিরুপায় হয়ে হেঁটেছে, তেমনই অ্যাপ-বাইকও ছুটেছে। কিন্তু সারচার্জ ছিল প্রবল! রাইডারদের শ্রম এবং প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজে নামার মানসিকতা প্রশংসনীয়। তবে লোভের হাঁমুখ এতখানি বিস্তৃত না-করলে কি চলত না? আর, যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তার প্রশ্নটি তো চিরকালই অবহেলিত, এদিন তা যেন ভিজে পানসেই হয়ে গিয়েছিল।

Advertisement

রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ঘণ্টা কয়েকের বৃষ্টিতে কলকাতা কুপোকাত হওয়ার পর বিপর্যয়ের চোখরাঙানি উপেক্ষা করেও পথে বেরতে হয়েছিল বহু মানুষকেই। কাঙ্ক্ষিত ‘ছুটি’ বা ‘ডে অফ’ তারা পায়নি। অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার সঙ্গে জড়িতরা এ ধরনের দুর্যোগেও ডিউটি করতে বাধ্য হয়। দুর্গাপুজোর আনন্দঘন পরিবেশেও কি তারা ছাড় পায় কর্তব্যসম্পাদনের দায়িত্ব থেকে? অতএব তাদের কথা বরাবরই আলাদা।

কিন্তু মঙ্গলবার, এই শ্রেণির বাইরের মানুষকেও আমরা দেখেছি, চাকরির জোয়াল স্বীকার করে রাস্তায় নামতে। কোথাও কোমরসমান, কোথাও-বা হঁাটুজল ঠেলতে হয়েছে। চারচাকা বা দু’-চাকা যখন জলের ঢেউ-বিক্রমের সামনে জবাব দিয়েছে, মানুষকে দ্বারস্থ হতে হয়েছে আদি ও অকৃত্রিম ১১ নম্বর যানের, পায়ে হেঁটে প্রতিকূলতা জয় করতে হয়েছে। এরই মাঝে তড়িদাহত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। মহানগরীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট বা ‘ইলেকট্রোকিউটেড’ হয়ে মারা গিয়েছে বেশ কিছু হতভাগ্য। এমন দীর্ণ ও শ্রীহীন জলছবির পাশে উজ্জ্বল আর-একটি দিক হল: যে মুষ্টিমেয় গণপরিবহণ সেদিন মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছিল। ভিড় ও দরকারের তুলনায় তা হয়তো নগণ্য, তবে সেটুকুও না-থাকলে কী দুরবস্থায় যে এই মহানগর আক্রান্ত হত, ভাবলেই ভয় হয়। প্রয়োজনের তুলনায় বাস কম ছিল– এ তথ্যের পাশে উল্লেখ করতে হবে– রাস্তায় ছিল অনেক অ্যাপ-নির্ভর বাহনও। চারচাকা ও দু’-চাকা উভয়েই এই তালিকায় পড়ে, তবে ভোগান্তিতে পড়া মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে– ভাড়ার বাইক মঙ্গলবার ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল প্রায়।

কিন্তু অ্যাপ-বাইক তো ব্যক্তিগত বাহন, গণপরিবহণ নয়। ফলে সামর্থ্য বা টাকার জোরই এখানে শেষকথা। মহানগরে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে, বা অন্য ধরনের অচলাবস্থা দেখা দিলে, বিশেষত যখন ট্রেন এবং মেট্রো রেলও বন্ধ হয়ে যায়, তখন অ্যাপ-নির্ভর বাহনের সারচার্জ আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। মানুষের সাহায্য করার বার্তা যে আদতে টাকার নিক্তিতে মাপা, বোঝা যায়। মঙ্গলবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। চারচাকার তুলনায় দু’-চাকা বেশি পারংগমতা দেখিয়েছে, কারণ জল কেটে, তুলনায় অপরিসর গলির ভিতর দিয়ে যেতে পারার সহজাত ক্ষমতার কারণে।

কিন্তু ভাড়া ছিল অবিশ্বাস্য অঙ্কের। মহানগরের অন্যতম ব্যস্ত ও জনবহুল এলাকায় দু’-কিলোমিটার যেতে আটশো থেকে হাজার টাকা গুনতে হয়েছে অনেককে। তায় উপরির আবদার বা বজ্রকণ্ঠে ঘোষিত নির্দেশ। এক-একটি রাইডে, ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা দেওয়া এখন সংবৎসরের অলিখিত নীতি। মঙ্গলবার জল-অধ্যুষিত আবহে যাত্রীদের তরফে ফিরতি-যুক্তি প্রায় ছিল না বললেই চলে। ‘উপরি’ টাকা যে-যেমন পেরেছে, হেঁকেছে। দিতেও হয়েছে। রাইডারদের শ্রম এবং প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজে নামার মানসিকতা প্রশংসনীয়। তবে লোভের হাঁমুখ এতখানি বিস্তৃত না-করলে কি চলত না? আর, যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তার প্রশ্নটি তো চিরকালই অবহেলিত, এদিন তা যেন ভিজে পানসেই হয়ে গিয়েছিল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • মঙ্গলবার জলমগ্ন শহর চিরে মানুষ যেমন নিরুপায় হয়ে হেঁটেছে, তেমনই অ্যাপ-বাইকও ছুটেছে। কিন্তু সারচার্জ ছিল প্রবল!
  • রাইডারদের শ্রম এবং প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজে নামার মানসিকতা প্রশংসনীয়।
  • তবে লোভের হাঁমুখ এতখানি বিস্তৃত না-করলে কি চলত না?
Advertisement