লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসী-বিক্ষোভ থামাতে ট্রাম্প ন্যাশনাল গার্ড নামান, যা অসাংবিধানিক। ক্ষমতার দম্ভে গণতন্ত্রের বলির আরও এক নিদর্শন।
লস অ্যাঞ্জেলেস; ডাকনাম ‘এলএ’। মার্কিন অভিবাসীদের পছন্দের শহর। বর্ণময় মুক্ত মিশ্রণের হাঁড়ি, যেখানে মিশেছে পৃথিবীর সব দেশের মানুষ, তাদের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, হতাশা। এমন ঘটনাবহুল এলএ-র উপর রেগে আগুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, কারণ সেখানে ক্রমশ বাড়ছে অভিবাসীদের বেপরোয়া ভিড় এবং প্রতিবাদী মনোভাব। বিক্ষোভ দমনে ক্ষমতাদম্ভী ট্রাম্প এলএ-তে পাঠিয়েছেন ন্যাশনাল গার্ডের বাহিনী। তিনি সম্ভবত দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি, লস অ্যাঞ্জেলেসের আপাত শৌখিন জীবনের মধ্যে লুকিয়ে আছে এমন বহ্নিময় প্রতিবাদ!
ন্যাশনাল গার্ডের আগমনে এলএ কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত। ছুটছে রবার বুলেট। হচ্ছে বেধড়ক লাঠিচার্জ। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করছে জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ঘৃণার থুতু ফেলে। তিনি তারই মধ্যে ঘোষণা করেছেন, যত ফেলবে থুতু, তত বাড়বে ঠ্যাঙানো! তঁার স্পষ্ট বক্তব্য, অভিবাসীদের এই বাড়াবাড়ি ও প্রতিবাদ তিনি সহ্য করবেন না, গণতন্ত্র-মুক্ত ভাবনার অজুহাতে।
স্টেটের সঙ্গে আলোচনা না-করে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন যে গণতন্ত্রবিরোধী ও অসংবিধানিক কাজ, জানাতে দ্বিধা করেননি ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম। অতএব ট্রাম্প-প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা হবে।
চোখে পড়ার মতো বিষয় হল– বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতেই দেখা যাচ্ছে বিদেশি পতাকা। সুতরাং এই বিক্ষোভ যে মূলত অভিবাসীদের, সন্দেহ নেই। হবে না-ই বা কেন? দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ট্রাম্প ঘোষিতভাবে অভিবাসী-বিরোধী। গত দু’-মাসে লক্ষাধিক অবৈধ অভিবাসীকে তঁার প্রশাসন গ্রেফতার করেছে। প্রসঙ্গত, ভারতীয় অভিবাসীদের ক্রীতদাসের মতো হাতে-পায়ে শিকল বেঁধে দেশে ফেরত পাঠানোর অপমানকর ঘটনাটি। ট্রাম্প এ-কথাও বলেছেন, জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন নাকি ১ কোটি ১০ লক্ষ অবৈধ অভিবাসী আমেরিকায় ঢুকেছে, তাদের না তাড়িয়ে তঁার শান্তি নেই।
ট্রাম্প আমেরিকাকে বিদেশিমুক্ত করতে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশিদের লেখাপড়া করতে আসা পছন্দ করছেন না। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তঁার এই হুকুম মানতে অস্বীকার করেছে। ট্রাম্প সরাসরি ক্ষমতার যুদ্ধে নেমেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। তঁার আচরণে ক্রমশই ছাপিয়ে উঠছে ক্ষমতার অহং। সুতরাং আমেরিকার মতো গণতান্ত্রিক দেশে ক্রমশ যে ট্রাম্প-বিরোধী প্রতিবাদ ঘনিয়ে উঠবে, সন্দেহ কী!
একদা গলায়-গলায় বন্ধু ইলন মাস্ককেও ট্রাম্প বেশি দিন সহ্য করতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত তাঁকেও না মাস্ক দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মের কারণে ‘অভিবাসী’ দাগিয়ে আমেরিকা ছাড়তে বাধ্য করেন!
