shono
Advertisement

Breaking News

Hero Worship

'হিরো ওয়ারশিপ', কেবলই অন্ধ আবেগ?

ছুটে গিয়ে হিরোর পা ধরার মধ্যে না আছে পুণ্য, না আছে গৌরব।
Published By: Kishore GhoshPosted: 08:55 PM Dec 03, 2025Updated: 08:55 PM Dec 03, 2025

'হিরো ওয়ারশিপ' আমাদের কোথাও পৌঁছে দেয় না। ছুটে গিয়ে হিরোর পা ধরার মধ্যে না আছে পুণ্য, না আছে গৌরব।

Advertisement

আরামবাগের মধুরপুর। সেখানকার আদিবাসী পাড়ার যুবক শৌভিক মুর্মু। তার জীবনের একমাত্র ভগবান, একটি লক্ষ্য, যেভাবে হোক একবার বিরাট কোহলিকে ছুঁয়ে, সম্ভব হলে তাঁর পায়ে পড়ে, জীবন সার্থক করা। বিরাটের দেখা পাওয়ার জন্য শৌভিক একবার তার বাড়িতেই পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু ঢুকতে পারেনি। তারপর কয়েক মাস আগে, সাইকেলে চেপে শৌভিক সোজা চেন্নাই। যদি বিরাটকে একটিবার স্পর্শ করা যায়। কিন্তু কিছুতেই সেই সুযোগ এল না। এবার বিরাট কোহলি রাঁচিতে। রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকা আর ভারত বনাম ক্রিকেট ম্যাচে দুর্ধর্ষ ব্যাটিং করে বিরাট কোহলি তুমুল অভিনন্দনের মধ্যে।

এই তো সুবর্ণ সুযোগ। সমস্ত নিষেধ নিয়মশৃঙ্খলা তুড়ি মেরে, প্রবল উল্লাসে, সে ঢুকে পড়ল মাঠে। বেপরোয়া গতিতে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল বিরাট কোহলির পা। হতভম্ব বিরাট। চমকে উঠল নিরাপত্তারক্ষীর। দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের সামনে ভারতের মুখ কি খুব উজ্জ্বল হল শৌভিকের আচরণে। নিরাপত্তারক্ষীরাও শৌভিকের এই হটকারিতা, ছেলেমানুষি বা ভক্তের অন্ধ উচ্ছ্বাস বলে ক্ষমা করেনি। তারা শৌভিককে পাকড়ে থানায় নিয়ে গিয়েছে। এবং তার বাবাকে তারা জানিয়েছে তাঁর পুত্রের এই কীর্তিকলাপের এবং শোভনীয়-অশোভনীয় আচরণের কথা।

তবে তার বাবাও, অনুতপ্ত নন। বরং খুশি, বিরাট কোহলিকে ছেলে ছুঁতে পেরে জীবন সার্থক করতে পেরেছে বলে। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ আমার ছেলের এই অপরাধের জন্য যা শাস্তি দেওয়ার দিক। তার তো কোনও অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। আমার গর্ব হচ্ছে শৌভিক যা চেয়েছিল, এত দিনে তা করতে পেরেছে।

শৌভিকের এই আচরণ কিন্তু দু'টি সামাজিক ব্যাধি প্রকাশ করল। সে-কারণেই এমন আচরণকে কোনওভাবেই সমর্থন করা যায় না। প্রথম ব্যাধি-নিয়ম ভেঙে, শৃঙ্খল উড়িয়ে, শাসন না-মেনে, বেপরোয়, অশোভন আচরণ করে কয়েক মিনিটের 'হিরো' হওয়ার মনোভাব ও বিহ্বল প্রচেষ্টা। এহেন আচরণের জন্য শান্তি পাওয়ার মধ্যে যে গৌরব নেই, আছে নিজের স্বার্থসিদ্ধির ক্ষণিক চমক ও বোধহীন অন্ধ উচ্ছ্বাস, তা বোঝার বয়স কিন্তু শৌভিকের হয়েছে। তবুও সে এমন একটা কাজ করেছে, যার নিদর্শন সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর।

প্রশ্ন, কেন মানুষ এমন হিতাহিতজ্ঞানশূন্য কাজ করে? এটাই দ্বিতীয় ব্যাধি, হিরো-ওয়ারশিপ, নায়ক-পুজোর অন্ধ আবেগ। এই ভ্রান্ত আবেগে মানুষ প্রাণ পর্যন্ত দিচ্ছে, শুধুমাত্র একটিবার প্রিয় নায়ক বা নায়িকাকে দেখার জন্য। এমন বেপরোয় আবেগকে জীবনে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। তা নিজের অর্বাচীনতার পরিচয়। আবেগকে ধরে রাখতে হবে নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে। নিয়মশৃঙ্খলা নিয়ে মনে রাখার মতো একটি কথা বলেছেন ইয়ান ম্যাকুইন তাঁর সম্প্রতিকতম উপন্যাস 'হোয়াট উই ক্যান নো'-তে। 'হোয়ার দেয়ার ইজ অর্ডার, দেয়ার ইজ মেন্টাল স্পেস অ্যান্ড কাম।' যে কোনও সমাজে, মানসিক পরিসর ও শান্তির বড় প্রয়োজন। কারণ তা শৃঙ্খলার অনুসারী।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • শৌভিকের এই আচরণ কিন্তু দু'টি সামাজিক ব্যাধি প্রকাশ করল।
  • প্রশ্ন, কেন মানুষ এমন হিতাহিতজ্ঞানশূন্য কাজ করে?
Advertisement