অনলাইন প্রতারণা রুখতে ১৮ লক্ষ সন্দেহজনক মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা! সঙ্গে ইঙ্গিত রয়েছে কেন্দ্রের, যে একাধিক ফোন বদল বা সিম-বদলের মাধ্যমে শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া শুরু হবে দেশে।
পাহাড়-টিলা-জঙ্গুলে ঝোপের মাঝে একখান আস্ত বৃদ্ধ গাছ। আর তার ডাল বেয়ে ঝুলছে, না কোনও ফুল নয়, ফল নয়, লাশও নয়, গুচ্ছ-গুচ্ছ ফ্রড। না, কোনও ম্যাজিক রিয়েলিস্ট দৃশ্য নয়। আদপে, ঝুলছে ফোন। একটা ফোন থেকে একাধিক ফ্রড কারবারি সফল হলে, তাকে অন রেখেই ঝুলিয়ে দেওয়া হয় সেই গাছে। এভাবেই মুঠোফ্রডের ঢালাও ফলন ফলিয়েছে বিহারের জামতাড়া গ্রাম, আমরা দেখেছিলাম, ‘জামতাড়া’ সিরিজে। নেটওয়ার্কের বায়বীয় পথ ধরে স্ক্যামারকে খুঁজতে এলে ঠগ বাছতে গঁা উজাড়ের আগেই পুলিশ ও প্রশাসন ধাক্কা খাবে এই গাছের কাছে, কারণ অজস্র ফোন সেখানে ভিড় হয়ে ঠগকে লুকিয়ে রেখেছে।
কোটি-কোটি ভারতবাসীর রাতারাতি ব্যাঙ্ক ব্যালান্স গায়েব করে কুখ্যাতি রয়েছে দেশের ধনীতম গ্রামটির। একই ফোন, একাধিক সিম; একই সিমের একাধিক ফোনবদল– এহেন নানাবিধ কম্বিনেশনে জালিয়াতির চক্র আজকে নয়, সে তো আজকে নয়। এক্ষেত্রে ধরা হবে কাকে, ফোনের বিল দেখে ফোনের মালিক, না কি সিমের ভোক্তা? কিন্তু, ফোন চুরি হতে পারে, আবার সিম হতে পারে মৃত ব্যক্তির, এক্ষেত্রে উপায়? দীর্ঘকাল এহেন প্রশ্ন নিয়েই জেরবার ছিল কেন্দ্র থেকে রাজ্য জুড়ে প্রশাসন ও তদন্তকারী সংস্থাগুলি। কারণ, সিম বা ফোন রাতারাতি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা আইনত মুখের কথা নয়। কিন্তু, শেষমেশ তা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা রাখল না দেশের স্ক্যামবাজরা। কারণ, তাদের মাথাচাড়া দেওয়া সংখ্যাধিক্য। ‘জাতীয় সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল’-এর ২০২৩-এর সমীক্ষা বলছে, শুধু দায়ের করা সাইবার ক্রাইম ও ফ্রডের অভিযোগের সংখ্যাই ৭ লক্ষ ছুঁইছুঁই, ফ্রডের আর্থিক পরিমাণ ১০,৩১৯ হাজার কোটি টাকা, যা নির্বাচনী বন্ডের অর্থ কিংবা বার্ষিক বাজেটের পরিমাণকেও রীতিমতো টেক্কা দেয়।
[আরও পড়ুন: তীব্র গরমে হিটস্ট্রোক শাহরুখের, ভর্তি হাসপাতালে]
এহেন পরিস্থিতিতে, একটি ফোন সিম বদলানোর প্রবণতা ও তথ্য-সংবলিত সন্দেহের উপর ভিত্তি করে ১৮ লক্ষ সন্দেহজনক মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। গত বছর, ২ লক্ষ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হয়েছিল। এহেন প্রয়াসকে ভূয়সী প্রশংসা করতেই হয়। কিন্তু এই পদক্ষেপ দুশ্চিন্তায় ফেলার মতো। এবারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে ইঙ্গিত রয়েছে কেন্দ্রের, যে একাধিক ফোন বদল বা সিম-বদলের মাধ্যমে শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া শুরু হবে দেশে। একাধিক রাজ্যে ঘুরে ঘুরে কাজ, কিংবা কাজের খাতিরে একাধিক সিমের ব্যবহার এই নজরদারির আওতায় পড়তেই পারে। তবে, সেই কিঞ্চিৎকর দোটানা বাদ দিয়ে অন্য এক প্রশ্ন বাজছে।
বর্তমানে, অনলাইন প্রতারণা (Online fraud) কেবলই সিম-ফোনের সিম্ফনিতে পড়ে নেই। প্রাইভেট সার্ভারের মাধ্যমে ভিপিএন কলিং করে আমাদের শহরের আইটি সেক্টর জুড়ে রমরমিয়ে চলছে ফ্রড, স্ক্যাম। মাসে-মাসে এদের অফিস বদলায়। এদের কীভাবে ধরবে তদন্তকারীরা?