shono
Advertisement

পদদলিত

সহপাঠীদের জাত-ভিত্তিক কটূক্তি নিন্দনীয়।
Posted: 03:34 PM Aug 22, 2023Updated: 03:34 PM Aug 22, 2023

তামিলনাড়ুতে দলিত পড়ুয়াদের উপর সহপাঠীদের জাত-ভিত্তিক কটূক্তি নিন্দনীয়। জাতের নামে বজ্জাতি বন্ধ হবে কবে?

Advertisement

তামিলনাড়ুর তিরুনেলভেলি জেলার নাঙ্গুনেরিতে একজন দলিত কিশোর এবং তার বোনের উপর উচ্চবর্ণের সহপাঠীদের আগ্রাসনের ঘটনাটি শুধু উদ্বেগেরই নয়, আমাদের দেশে বহমান গভীর জাতিগত কুসংস্কারের বলয়ে নব বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই ভয়াবহ পর্বটি শুধুমাত্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার ব্যর্থতাই প্রকাশ করে না, জাতিগত বৈষম্য দূর করতে এবং সামাজিক সম্প্রীতিকে উন্নীত করার জন্য ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজনের উপরও জোর দেয়।

তামিলনাড়ুতে যেমন দলিত নির্যাতনের ইতিহাস আছে, তেমনই এই জাতীয় বৈষম্য দূর করতে চাওয়া দ্রাবিড় আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল উত্তরাধিকারও রয়েছে। তবে এখনকার দিনে দাঁড়িয়ে নাঙ্গুনেরির মতো ঘটনা দ্রাবিড় রাজ‌্যটির মানুষকে প্রবল ধাক্কা দিয়েছে। কেননা, ঘটনাটি বৃহত্তর সমস্যার সূচিমুখ, যা রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দলিত এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর প্রতি ঐতিহাসিক অবিচারের কারণে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।

[আরও পড়ুন: চোখের জল আর বুকের রক্তে লেখা স্বাধীনতার ইতিহাস, রয়েছে বিস্মৃত বিপ্লবের]

নাঙ্গুনেরি ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রতিশোধের একটি বেদনাদায়ক কাহিনি, যা তার সহপাঠীর বিরুদ্ধে জাত-ভিত্তিক কটূক্তির জন্য দলিত কিশোরের দায়ের করা অভিযোগ থেকে উদ্ভূত। এই ধরনের অভিযোগ যে এখনও বিদ্যমান, তা জাতিগত বিভাজনের দেওয়াল ভেঙে ফেলার জন্য উদ্যোগের অপর্যাপ্ততা প্রকাশ করে দিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তকে এ-বিষয়ে সতর্ক করেছিল ঠিকই, তবে নিছক সতর্কবার্তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লালিত সংস্কারগুলি পরিবর্তন করার জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়। এই ঘটনাটি দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্ণভেদের ক্রমাগত ব‌্যাপ্তির একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। গ্রামাঞ্চলে বর্ণভিত্তিক সীমাবদ্ধতা- তা সে স্কুলে দলিত শিশুদের বিচ্ছিন্ন রাখাই হোক, কিংবা স্থানীয় রাজনৈতিক ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলির দ্বারা যুবকদের শোষণ- বস্তুত এটাই স্পষ্ট করে যে, সময়ের অগ্রগতি সত্ত্বেও- বর্ণভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাসের শিকড়গুলি সমাজে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত। যদিও অতীতে জাতিগত সংঘাতের মোকাবিলায় সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, কিন্তু জাতিগত কুসংস্কারের মননটির নির্মূল অধরা রয়ে গিয়েছে।

ছাত্রসমাজে জাতপাতের পার্থক্য দূর করার জন্য সরকার কর্তৃক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কে. চন্দ্রু-র নেতৃত্বে এক সদস্যের কমিশন গঠন এই ব্যাপক সমস্যার নিরসন চেয়ে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। অর্থপূর্ণ পরিবর্তনের লক্ষ্যে নাঙ্গুনেরির ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা উচিত নয়। এই ঘটনা বর্ণ বিভাজনের মধ্যে যে অদম্য বিদ্বেষ বজায় রয়েছে, তা তুলে ধরেছে। প্রতিটি নাগরিক, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এবং প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতাকে একযোগে এমন সমাজ গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে, যেখানে বর্ণাশ্রম আর কারও মানব-মূল্যকে সংজ্ঞায়িত করবে না। আমরা এমন একটি সমাজ গড়ার আশা করতে পারি, যেখানে জাতপাত কোনও বিভাজনকারী শক্তি নয়, বরং অতীতের একটি স্মৃতিচিহ্ন, যা ঘৃণার বীজ বপন করার জন্য আর উর্বর ভূমি খুঁজে পায় না।

[আরও পড়ুন: ভারতীয় বিচারব্যবস্থার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা কী?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement