shono
Advertisement

অখিলেশ পারেন, রাহুল পারেন না! কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এড়িয়ে চলতে চাইছে কংগ্রেস?

‘মমতা’র ইমেজকে কাজে লাগাতে কোথায় আপত্তি সোনিয়াদের?
Posted: 03:28 PM Jan 20, 2022Updated: 03:28 PM Jan 20, 2022

কিংশুক প্রামাণিক: অখিলেশ যাদব (Akhilesh Yadav) যা বোঝেন, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীরা (Rahul Gandhi) তা বোঝেন না। নাকি বুঝতে চান না? নামটা যেহেতু মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায় (Mamata Banerjee), সেজন‌্যই কি অ‌্যালার্জি?
উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh) বিধানসভা নির্বাচন (UP election 2022) দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সাত দফায় ৪০৩ আসনে ভোট। সরকারে বিজেপি। সমস্ত ক্ষমতা তাদের হাতে। তবু, গেরুয়া শক্তির বিরুদ্ধে একাই লড়াই করছেন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। ‘বহুজন সমাজ পার্টি’ ক্ষয়িষ্ণু শক্তি। মায়াবতী পিছন থেকে বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করে নিয়েছেন। কিন্তু তাতে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া রোখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন সমীক্ষা ও বিশ্লেষণ সামনে আসার পর বোঝা যাচ্ছে, গদি হারানোর মুখে এসে দাঁড়িয়েছেন যোগী আদিত‌্যনাথ।

Advertisement

অখিলেশের পক্ষে একক গরিষ্ঠতাও দেখাচ্ছে কোনও কোনও রিপোর্ট। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই অখিলেশের জনসভায় জনজোয়ার দেখা যাচ্ছিল। উলটো দিকে, বিজেপির সভা ফাঁকা। এখন করোনার অজুহাতে সভা-সমিতি প্রায় বন্ধ উত্তরপ্রদেশে। অভিযোগ, বিরোধীরা যাতে প্রচার করতে না পারে সেজন‌্যই এই পন্থা। গোটা বিষয়টি নিয়ে যখন শোরগোল শুরু হয়েছে, ঠিক এই সময় কালীঘাটে ৩০বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে এসে উপস্থিত হলেন সমাজবাদী পার্টির নেতা কিরণময় নন্দ।

গোয়ায় লুঝিনো ফারেইরোর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

[আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রের স্থানীয় নির্বাচনে জয় শিব সেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোটের, বৃহত্তম দল হয়েও চাপে বিজেপি]

বামফ্রন্ট সরকারের মৎস‌্যমন্ত্রী কিরণময় নন্দ অত্যন্ত ধুরন্ধর রাজনীতিক। ২০১১ সালে পালাবদলের আগেই মুলায়ম সিং যাদবের বদান‌্যতায় সমাজবাদীতে নাম লেখান। রাজ‌্যসভার সাংসদও হন। বুদ্ধিমান এই নেতাকে যথার্থভাবেই নিজের ভোটকুশলীর আসনে বসিয়ে রেখেছেন অখিলেশ। মমতার সঙ্গে যেহেতু তাঁর ভাল সম্পর্ক, সেজন্য তাঁকে দূত করে পাঠান। প্রায় আধঘণ্টা বৈঠকের পর দৃশ্যতই তৃপ্ত কিরণময় নন্দ জানান, গত বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূলকে সমর্থন দিয়ে কোনও আসনে প্রার্থী দেয়নি সমাজবাদী পার্টি। একইভাবে উত্তরপ্রদেশের ভোটেও তৃণমূল কোনও প্রার্থী দেয়নি। এবার, অখিলেশ যাদব একান্তভাবেই চান তৃণমূল নেত্রী প্রচারে আসুন লখনউয়ে। তাঁদের দু’জনের মধ্যে কথা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে যাওয়ার প্রস্তাব মমতা গ্রহণ করেছেন। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি মমতা-অখিলেশ ভারচুয়াল সভা করবেন লখনউয়ে। তারপর যৌথ সাংবাদিক বৈঠক।

দ্বিতীয় দফায় আবার মমতা প্রচারে যাবেন। এবার নরেন্দ্র মোদির বারাণসী। সেখানেও ভারচুয়াল সভা ও যৌথ সাংবাদিক বৈঠক হবে। রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ এই কর্মসূচি ঘোষণা হতেই সাংবাদিকরা কৌতূহলভরে কিরণময়বাবুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, উত্তরপ্রদেশে তৃণমূল কোনও শক্তিই নয়। তা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায়ের সঙ্গে যৌথ প্রচারে কেন আগ্রহ দেখাচ্ছেন সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো? এর জবাবে পোড়খাওয়া নেতা বলেছিলেন, ‘‘বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন‌্যতম মুখ হলেন বাংলার মুখ‌্যমন্ত্রী। বাংলার বিধানসভার নির্বাচনে উনি বিজেপিকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছেন।’’ অর্থাৎ, কিরণময়বাবু বোঝাতে চাইলেন, মমতার বিজেপি-বিরোধী ভাবমূর্তিকেই দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্যে প্রচারের হাতিয়ার করতে চায় সমাজবাদী পার্টি। মোদিকে তিনি যেভাবে থামিয়েছেন, সেই ইমেজ কাজে লাগবে। সেই কারণেই তাঁকে লখনউয়ে আমন্ত্রণ।

[আরও পড়ুন: উন্নয়ন হয়নি, প্রচারে যাওয়া বিজেপি বিধায়ককে তাড়া করে গ্রামছাড়া করল ভোটাররা]

অখিলেশের এই আমন্ত্রণ আবার প্রমাণ করল, কংগ্রেসের রাগটা কোথায়। কেন বারবার তৃণমূলকে এড়িয়ে চলতে চাইছেন রাহুল গান্ধীরা। কেনই বা বারবার আহ্বান করা সত্ত্বেও গোয়ায় বিজেপি-বিরোধী জোট গঠনে সাড়া দিচ্ছেন না?
গোয়ায় তৃণমূলের কিছুই ছিল না। বাংলায় বিজেপির স্বপ্ন চূর্ণ করে তৃতীয়বারের জন‌্য মুখ‌্যমন্ত্রী হওয়ার পর বিভিন্ন রাজ‌্য থেকে সংগঠন তৈরির বার্তা পান মমতা। সেই প্রেক্ষিতে ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, মেঘালয়, হরিয়ানা এবং গোয়ায় তৃণমূলের প্রবেশ। আরও আমন্ত্রণ আছে। কিন্তু মমতা চান না বিজেপি-বিরোধী লড়াই কোথাও বাধা পাক। তিনি আঞ্চলিক শক্তির পক্ষে। যে কাজ কংগ্রেস পারছে না, সেটা করছে আঞ্চলিক দল।

বিজেপিকে হারিয়ে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মমতা যে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ‘মুখ’ হয়ে উঠেছেন, তার জেরেই তাঁকে ঘিরে নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। মোদির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে রাহুল গান্ধীর ব্যর্থতার জন্য বিকল্প নাম হিসাবে মমতার কথা উঠেছে। তাঁর পক্ষে বলার তালিকা দীর্ঘ। চল্লিশ বছর ধরে লড়াই আান্দোলনের ইতিহাস। সাতবারের সাংসদ। দুই বারের রেলমন্ত্রী। আরও চারটি মন্ত্রক চালানোর অভিজ্ঞতা। এর সঙ্গে দশ বছরের মুখ্যমন্ত্রী। এমন বায়োডাটার ধারে কাছে দেশে কেউ নেই।

খুব স্বাভাবিকভাবেই এসব পছন্দ নয় কংগ্রেসের। সোনিয়া-রাহুলরা মনে করছেন তৃণমূলের আরও শক্তি বাড়লে মমতার লাভ। সেই কারণে গোয়ায় জোট গঠনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আবার সেই প্রশ্নটি সামনে আসে, কোনটা জরুরি– মোদিকে ক্ষমতা থেকে সরানো, নাকি রাহুলের প্রধানমন্ত্রিত্ব?

কংগ্রেস যে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে তার প্রমাণ গোয়া। ওই রাজ্যে তৃণমূলের কিছুই ছিল না। প্রাক্তন মুখ‌্যমন্ত্রী লুইজিনো ফালেইরো জোড়া ফুলের পতাকা হাতে নেওয়ার পর আচমকা সংগঠন বাড়তে থাকে। ভাঙতে শুরু করে কংগ্রেস। ক্রমে ক্রমে নানা স্তরের মানুষ মমতার পতাকা নিতে থাকেন। মমতা দু’-দফায় গোয়া যেতেই পালে আরও হাওয়া লাগে। মাত্র ১১ লক্ষ মানুষ যে রাজে্য সেখানে মমতার তিনটি জনসভায় ছিল লক্ষণীয় ভিড়। গোয়ার সবচেয়ে পুরনো দল মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি তৃণমূলের সঙ্গে জোটে আসে। সব মিলিয়ে গোয়ায় তিনমাসের মধ্যেই বড় শক্তি হয়ে উঠেছে তৃণমূল। অভিষেক বন্দে্যাপাধ্যায় মাটি কামড়ে গোয়ায় বসে আছেন। স্ট্র‌্যাটেজি ঠিক করছেন।

কেন এতটা শক্তি বাড়ল তৃণমূ্‌লের? এর মূল কারণ, কংগ্রেসের প্রতি মানুষের বিশ্বাস হারানো। মমতা গোয়া সফরে গিয়ে স্পষ্টই বলেছিলেন, তিনি এসেছেন বিজেপিকে হারানোর জন‌্য। এর বাইরে আর কোনও উদ্দেশ‌্য নয়। কংগ্রেস ব‌্যর্থ হয়েছে। বিজেপির হাতে সরকার তুলে দিয়েছে। না হলে ১২টি আসন নিয়ে কখনওই এই রাজ‌্য শাসন করতে পারত না গেরুয়া শিবির। কংগ্রেস এবারও তাই করবে না, তার কী গ‌্যারান্টি আছে? এই কারণে তৃণমূলকে জেতাতে হবে।
মমতার এই আহ্বানে ভুল কোথায়? তিনি তাঁর দলের কথা বলতেই গোয়া গিয়েছিলেন। যা বলছেন তা তো সত্যিই। একই সঙ্গে তৃণমূলনেত্রী এও জানিয়ে দেন, উত্তরপ্রদেশেও তৃণমূলের সংগঠন করার ডাক রয়েছে। কমলাপতি ত্রিপাঠির পরিবার যোগ দিয়েছে। কিন্তু, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমাজবাদী পার্টিই যথেষ্ট। তাই তৃণমূল সংগঠন করবে না। ‘বন্ধু’ অখিলেশ যাদবকেই সমর্থন করবেন।

২০২৪-এর যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোট আসলে সেমিফাইনাল। বিজেপি যদি উত্তরপ্রদেশ রাখতে না পারে, তাহলে দিল্লি দখলে রাখা কঠিন হয়ে উঠবে। শুধুমাত্র এই রাজ‌্য থেকেই ৮০টি আসন রয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই মরিয়া হয়ে বিজেপি নেমেছে উত্তরপ্রদেশ রক্ষা করতে। একদিকে দলিতদের উপর যোগী প্রশাসনের আঘাত, ওবিসিদের বঞ্চনা ও মুসলিমদের বিশ্বাস হারানো বিজেপির কাছে অশনি সংকেত। একমাত্র ব্রাহ্মণ ঠাকুর ভোট ছাড়া বিজেপির ভোটব‌্যাঙ্ক ছত্রখান। এই অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে অখিলেশ পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন। তিনি একাই লড়াই করতে পারতেন। কিন্তু মমতাকে আহ্বানের মধ্য দিয়ে তিনি বোঝাতে চাইলেন, বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে বাংলার মুখ‌্যমন্ত্রীর গুরুত্ব কতটা। যেটা তিনি কাজে লাগাতে চান।
সমাজবাদী পার্টি যা বোঝে, কংগ্রেস হয় বোঝে না, না হয় বুঝতে চায় না। ‘মমতা’ নামে তাদের যত অ‌্যালার্জি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement