shono
Advertisement
Midnapore

প্রশ্নপত্রে 'সন্ত্রাসবাদী' বিপ্লবীরা! হেমচন্দ্রদের প্রকৃত ইতিহাস আজও গর্বিত করে

যে ইতিহাস বাঙালি তথা ভারতবাসীর হৃদয়ে রক্তে লেখা রয়েছে।
Published By: Biswadip DeyPosted: 06:15 PM Jul 10, 2025Updated: 06:15 PM Jul 10, 2025

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত যে প্রাণের বলিদান হয়েছিল তা অশ্রুজলে লেখা রয়েছে। কিন্তু সেই লেখা কি মুছে যাচ্ছে বাঙালির মন থেকে? বিদ‌্যাসাগর বিশ্ববিদ‌্যালয়ের ইতিহাস অনার্সের প্রশ্নপত্রে 'সন্ত্রাসবাদী' তকমা পেয়েছেন বিপ্লবীরা। যার পর থেকেই বিতর্ক তুঙ্গে। ইতিমধ্যেই ক্ষমা চেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপক কর। এই ভুল 'অনিচ্ছাকৃত' বলেই জানাচ্ছেন তিনি। প্রশ্নপত্র তৈরির দায়িত্বে থাকা দু’জনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আশা করাই যায়, এই ভুল সত্যিই অনিচ্ছাকৃত। তবুও প্রশ্ন ওঠে, ভুল করেও বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদী বলা যায় কী করে? এই পরিস্থিতিতে ফিরে ফিরে আসছে ১৯৩১ সালের এপ্রিল মাসের সেই ইতিহাস। যে ইতিহাস বাঙালি তথা ভারতবাসীর হৃদয়ে রক্তে লেখা রয়েছে।

Advertisement

ঠিক কী ঘটেছিল? ১৯৩১ সালের ৭ এপ্রিল খুন হন জেমস পেডি। তিনি তখন মেদিনীপুরের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট তথা জেলাশাসক। ৩৮ বছরের এই আইসিএস অফিসার ছিলেন তুমুল অত্যাচারী। দিঘা সৈকতে সত্যাগ্রহীদের উপর নির্যাতন চালিয়েছিলেন তিনি। আর এর প্রতিশোধ নিতেই পরিকল্পনা করা হয় তাঁকে হত্যা করার। সেই ভার পড়ে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স বিমল দাশগুপ্ত ও জ্যোতিজীবন ঘোষের উপরে। মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে প্রদর্শনী দেখতে গিয়েছিলেন পেডি। আর তখনই তাঁকে গুলিতে ঝাঁজরা করে দেন বিপ্লবীরা। এই দলটির নেতৃত্বে ছিলেন হেমচন্দ্র ঘোষ।

তবে গুলি চালানোর পরও ধরা পড়েননি বিমল-জ্যোতিজীবন। পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন তাঁরা। আসলে প্রদর্শনী কক্ষের আলো নিভিয়ে গুলি চালানোতেই কারও নজরে পড়েননি তাঁরা। বেরিয়ে পড়েন ছুটতে ছুটতে। তারপর সাইকেল চালিয়ে সোজা শালবনি। পরে আত্মগোপন পর্বে ঝরিয়া অঞ্চলের কয়লাখনিতেও চাকরি করেন বিমল। তবে পেডি হত্যায় জেলে যেতে না হলেও ভিলিয়ার্স সাহেবকে হত্যা করে জেলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। ১৯৩২ সালে তাঁকে আন্দামানের সেলুলার জেলে যেতে হয়। মুক্তি পান ১৯৪২ সালে। তবে তার চার বছর আগেও আন্দামান থেকে দেশে ফেরানো হয়েছিল তাঁকে। ২০০০ সালে ৯০ বছর বয়সে প্রয়াত হন।

পেডি সাহেবের পরও দুই ইংরেজ জেলাশাসকের একই পরিণতি হয়েছিল। তাঁরা রবার্ট ডগলাস ও বি ই জে বার্জ। ডগলাসকে হত্যা করেন প্রভাংশুশেখর পাল ও প্রদ্যোৎকুমার ভট্টাচার্য। বার্জকে খুন করেন অনাথবন্ধু পাঁজা, নির্মলজীবন ঘোষ, মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত, রামকৃষ্ণ রায়, ও ব্রজকিশোর চক্রবর্তী। এই তিন জেলাশাসকের নামই উঠে এসেছে বিদ‌্যাসাগর বিশ্ববিদ‌্যালয়ের ষষ্ঠ সেমেস্টারের ইতিহাস অনার্সের সি ১৪-টি পেপার তথা মডার্ন ন‌্যাশনালিজম ইন ইন্ডিয়া বিষয়ে প্রশ্নপত্রে। বিতর্কের মধ্যেই সেই পুরনো ইতিহাস নতুন করে বাতাসে বইতে শুরু করেছে। এমন 'ভুল', এমন 'ভ্রান্ত' শব্দচয়ন ঘিরে বিতর্ক ক্রমেই জোরাল হয়েছে। তবে আট দশক পেরিয়েও এই ইতিহাস ঘিরে বিতর্ক বুঝিয়ে দেয়, অশ্রুজলে লিখিত ইতিহাস বাঙালি ভোলেনি। এমন ইতিহাস কি ভোলা যায়?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বিদ‌্যাসাগর বিশ্ববিদ‌্যালয়ের ইতিহাস অনার্সের প্রশ্নপত্রে 'সন্ত্রাসবাদী' তকমা পেয়েছেন বিপ্লবীরা। যার পর থেকেই বিতর্ক তুঙ্গে।
  • প্রশ্ন ওঠে, ভুল করেও বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদী বলা যায় কী করে?
  • এই পরিস্থিতিতে ফিরে ফিরে আসছে ১৯৩১ সালের এপ্রিল মাসের সেই ইতিহাস।
Advertisement