গৌতম ব্রহ্ম: এই বাড়িতেই জন্ম নিয়েছিল হাটেবাজারে, জঙ্গম, স্থাবর, ভুবনসোম – কতশত কালজয়ী উপন্যাস। কবিতা, ছোটগল্পের আঁতুরঘর এই গোলবাড়িই। বাংলা সাহিত্যের (Bengali Literature) কত দিকপাল কবি-লেখক আড্ডা দিয়েছেন এখানে। সেই স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি এখন হাতবদল হয়ে কঙ্কালসার, ভেঙে পড়ার অপেক্ষায়। যে কোনও দিন থাবা বসাবে প্রোমোটার। মাথা তুলবে বহুতল।
বিহারের (Bihar) ভাগলপুর জেলার আদমপুর ঘাট রোডের ব্যাংক কলোনি। এখানেই একের পর এক কালজয়ী উপন্যাস সৃষ্টি করেছিলেন সাহিত্যিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ওরফে বনফুল। সাধের সেই বাড়িতে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে কত স্মৃতি। কিন্তু বাড়ির বর্তমান বাসিন্দারা সেই সব কিছুই জানেন না। কিছু জিজ্ঞেস করলেই উত্তর আসে ‘কুছ মালুম নহি’। বুধবার ছিল বনফুলের জন্মদিন। কিন্তু নিজের বাড়িতেই ব্রাত্য চিকিৎসক সাহিত্যিক। বনের একটা ফুলও জুটল না বনফুলের!
[আরও পড়ুন: ২১ জুলাই মিছিল কোন কোন পথে? কোন রাস্তায় চলবে গাড়ি? জেনে নিন এক নজরে]
শরিকি বিবাদের জেরে একাধিক পরিবারের বাস এই বাড়িতে। অনেকটা বস্তিবাড়ির মতোই পরিবেশ। যত্রতত্র রান্না হচ্ছে। যেখানে সেখানে কাপড় টাঙিয়ে, বস্তা ঝুলিয়ে চলছে দিনযাপন। প্রচুর গাড়ি দাঁড়িয়ে বাড়ির চৌহদ্দিতে। একটি বিউটি পার্লারের সাইনবোর্ডও ঝোলানো রয়েছে বাইরে। ভাবা যায়! কলম দিয়ে আলপনা দেওয়ার মন্দিরে চুল-দাড়ি কাটার শব্দ! স্থানীয় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সম্পাদক অঞ্জন ভট্টাচার্য জানালেন, ‘‘হাটেবাজারে থেকে শুরু করে জঙ্গম, বনফুলের অধিকাংশ কালজয়ী সৃষ্টি এই বাড়িতেই। সেই বাড়ির এই ভঙ্গুর দশা। কষ্ট তো হবেই।’’ শান্তনুবাবু আরও জানালেন, টানা ১৪ বছর বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ গ্রন্থাগারের সভাপতির পদ আলো করেছিলেন বনফুল। তাঁর ব্যবহার করা সেই কাঠের চেয়ার সংরক্ষণ করেছেন অঞ্জনবাবুরা। কিন্তু বাড়িই তো ধ্বংসের মুখে!
১৯৬৮ সালে বিহার ছেড়ে কলকাতার (Kolkata)উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে তিনি এই বাড়ি বিক্রি করে গিয়েছিলেন। মালিকানা বদল হওয়ায় এই স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটিকে ‘হেরিটেজ’ স্থাপত্যের স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব হয়নি। একমাত্র সরকার যদি চায় তবে শেষ রক্ষা হতে পারে। এখনও বহুতল হয়নি, তার কারণ, মালিকপক্ষের শরিকি বিবাদ। ওই বাড়িটির আশপাশের সব বাড়িই ভেঙে বহুতল হয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু বনফুলের লাল গোলবাড়ি। শরিকি বিবাদ মিটে গেলেই বহুতল মাথা তুলবে। চিরতরে মুছে যাবে বলাইচাঁদের স্মৃতি।
[আরও পড়ুন: শুভেন্দুর পর মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেকের বিরুদ্ধে FIR করতে চেয়ে জনস্বার্থ মামলা হাই কোর্টে]
বিহারের কাটিহার জেলার মণিহারিতে জন্ম হলেও ভাগলপুরেই তাঁর সাহিত্য জীবনের স্বর্ণযুগ কাটে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করে পাটনা মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তার হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন বনফুল। আজিমগঞ্জ হাসপাতালে প্যাথলজিস্ট হিসাবে কর্মরত থাকলেও ভাগলপুরে প্র্যাক্টিস করতেন। এখনও ভাগলপুর প্রচুর বাঙালির বাস। স্থানীয় বাসিন্দা তথা প্রখ্যাত লাইফ স্কিল ট্রেনার দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায় জানালেন, ‘‘বর্তমানে ৭০ হাজার বাঙালি রয়েছেন ভাগলপুরে। ১৬৭টি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে বাঙালির নামে। কিন্তু সেই তালিকায় নেই হাটেবাজারের আঁতুরঘর!’’