সন্দীপ চক্রবর্তী: উদ্বোধনের দিন বাদ রাখলে প্রথম দশদিনেই বই বিক্রিতে টাকার অঙ্কের হিসাবে সর্বকালীন রেকর্ডের পথে কলকাতা বইমেলা (Kolkata Book Fair)। প্রকাশনা সংস্থাগুলির স্টলে বই বিক্রিতে ব্যস্ত থাকা কর্মীদের থেকে যে তথ্য মিলছে, তাতে এটা স্পষ্ট। গিল্ডের তথ্য, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৩ লক্ষ মানুষ এসেছেন। বুধবার পর্যন্ত বই বিক্রি ১১ কোটি টাকারও বেশি! যা ৪৫ বছরের হিসেবে সর্বোচ্চ বলেই মনে করা হচ্ছে।
দেব সাহিত্য কুটিরে ৩৯ বছর ধরে স্টল সামলাচ্ছেন দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়। ঢুকেই সার দিয়ে ডিকশনারি। কেমন বিক্রি হচ্ছে? প্রশ্নটা শুনেই উচ্ছ্বসিত তিনি। বললেন, “৩৯ বছর ধরে স্টল সামলাচ্ছি। এত বিক্রি দেখিনি। ওঠার সময় পাচ্ছি না।” সুন্দর পিচাইয়ের সংস্থা থাকলেও যে নতুন প্রজন্মের এ টি দেবের ডিকশনারিতে ভরসা কমেনি, প্রমাণ মিলছে। গদ্যে মহাভারত, ভাগবতের মতোই বিকোচ্ছে সদ্যপ্রয়াত নারায়ণ দেবনাথের ‘বাঁটুল সমগ্র’, ‘বাহাদুর বিড়াল সমগ্র’। দে’জ পাবলিশিংয়ের কর্মীরা ভিড় সামলাতে কার্যত হাঁফিয়ে উঠছেন। সংস্থার কর্তা গিল্ডের সক্রিয় সদস্য শুভঙ্কর দে জানালেন, “বই বিক্রিতে ৪৫ বছরের রেকর্ড ভাঙা নিয়ে আর সংশয় নেই আমাদের।”
[আরও পড়ুন: রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করুন! টেলিগ্রামে ইউক্রেনীয় সেনাকে কেন এমন আরজি জেলেনস্কির?]
মিত্র ও ঘোষ-এ বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর ও তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় লিখিত বইয়ে ভরপুর ক্যাশ কাউন্টার। তেমনই সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের নানা বই, কিরীটী অমনিবাস বা প্রচেত গুপ্তর ‘ঝিলডাঙার কন্যা’ চেয়ে চিৎকার করছেন কোনও কর্মী। দীপ প্রকাশনে গিয়ে দেখা গেল সামনে কুণাল ঘোষের তিনটি বইয়ের ফ্লেক্স-প্রচার। বইগুলির নাম ‘সংকেত’, ‘বাঘবিধবা’ ও ‘রাধাকৃষ্ণ’।
গেটের বাইরে ঝুলছে গৌতম ভট্টাচার্যর নতুন বই, টেনিস ল্যাবরেটরির বিজ্ঞাপন। কিংশুক প্রামাণিকের ‘লকডাউনের দিনগুলি’ বইটি সামনেই সাজিয়ে রাখা। দীপে যেমন, তেমনই করুণা প্রকাশনীতেও দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের লেখা বইয়ের চাহিদা। শিশু সাহিত্য সংসদে শো-কেসে রাখা থাকায় বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে ‘চিরকালের সেরা’। পত্রভারতীতে কিশোর সাহিত্যের ভাল চাহিদা। কর্ণধার তথা গিল্ডের কর্তা ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “পত্রভারতীতে যে ৪৫ বছরের রেকর্ড ভাঙছে, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। ২০২০ সালের নিরিখে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বিক্রি বেশি।” তুহিনা প্রকাশনীর ৪৭৩ নম্বর স্টলে সংবাদপত্রের কাটিং নিয়ে অনেকেই বাড়তি ১০ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন। সংস্কৃত পুস্তক ভাণ্ডারে হুমড়ি খেয়ে ক্রিয়াযোগ কিনতে দেখা গিয়েছে। হরফ প্রকাশনীর কর্ণধার আবার এক হাতে গীতা অন্য হাতে কোরান শরিফ বিক্রি করে সম্প্রীতির নজির রাখছেন।
[আরও পড়ুন: ‘অপারেশন গঙ্গা’ও ব্যর্থ করতে চেয়েছিল বিরোধীরা! বিস্ফোরক মোদি]
ওঙ্কারনাথ মিশন বা অনুকূলচন্দ্র, রামঠাকুর ও শ্যামাচরণ লাহিড়ীর নামাঙ্কিত স্টলেও বই আনতে আনতেই ফুরিয়ে যাচ্ছে। লিটল ম্যাগাজিনে বিক্রিও সর্বকালীন রেকর্ডের পথে। ‘আলোচনাচক্র’ এই দশদিনে অন্তত ৫০ হাজার টাকার বই বিক্রি করেছে। পাশের স্টল কবিতা সীমান্ত-য় অন্তত ২০টি কবিতার বই। এদিনও একের পর এক বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রেস কর্নারে স্মরণিকা ত্রিপাঠীর ’দ্য এনভেলপস অফ লাইফ উইথ হুপ অ্যান্ড হার্পার’ বইপ্রকাশে ছিলেন অভিনেতা দীপাঞ্জন বসাক, পামেলা পাল দাস ও দেবাদিত্য চৌধুরি।
সাহিত্যম-এর ১৫৭ নম্বর স্টলে এদিনই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ পেয়েছে প্রয়াত বুদ্ধদেব গুহর শেষ বই, ‘জ্যোৎস্নারাতে বেতলাতে’ এবং ‘ঋজুদা কাহিনী’ প্রথম প্রকাশের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের প্রাক্কালে এই গ্রন্থপ্রকাশ। এসবিআই অডিটোরিয়ামে শিশু কিশোর আকাদেমির পক্ষে আলোচনার বিষয় ছিল, আমরা কী পড়তে চাই। অংশ নেন তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামলকান্তি দাস, প্রচেত গুপ্ত, দীপ মুখোপাধ্যায়, দীপান্বিতা রায়। ছোটদের গান শোনান সমদীপ্তা মুখোপাধ্যায়। গুরুচণ্ডালী প্রকাশনার সাতটি গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে। শ্রীজাত, চন্দ্রিল, অনুপম, অনিন্দ্য, অঞ্জন, দেবজ্যোতি মিশ্ররা এসেছিলেন দে’জ পাবলিশিংয়ের বই উদ্বোধনে।