শম্পালী মৌলিক: ক’দিন আগেই গেল কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) ১০২তম জন্মদিবস। আর এই শুক্রবার অর্থাৎ আজ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল তাঁর গল্পের আধারে তৈরি ‘মাস্টার অংশুমান’ (Master Anshuman)।
খুব সম্ভবত এই প্রথম মায়াস্ত্রোর কোনও কাহিনি নিয়ে বাংলায় বড়পর্দার জন্য চলচ্চিত্র নির্মিত হল রায়বাড়ির বাইরের কারও তত্ত্বাবধানে। হ্যাঁ, ‘মাস্টার অংশুমান’-এর পরিচালনায় সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায় (Sagnik Chatterjee)। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সাগ্নিকের এই শ্রদ্ধার্ঘ্য। যিনি নিজে দীর্ঘদিন সন্দীপ রায়ের সহকারী হিসাবে কাজ করেছেন। ফলে সত্যজিতের সৃষ্টির সঙ্গে তাঁর বাড়তি আবেগ জড়িয়ে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সাগ্নিক এর আগে ‘ফেলুদা : ফিফটি ইয়ার্স অফ রেজ ডিটেকটিভ’ নামে একটি তথ্যচিত্র করেছিলেন যার জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার পান। তাঁর এই প্রথম ফিচার ছবি নিয়ে দর্শকের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে। মূল গল্পটির প্রেক্ষাপট ছিল রাজস্থান। তবে পরিচালক এই সিনেমার গল্প বুনেছেন দার্জিলিংয়ের প্রেক্ষাপটে। তাঁর সঙ্গে কাহিনি রূপান্তর ও চিত্রনাট্য বিন্যাসে রয়েছেন শ্রীপর্ণা মিত্র। এই ছবির ভরকেন্দ্র এক স্টান্টম্যান ও অংশুমানের বন্ধুত্ব।
কিশোর অংশুমান (স্যমন্তক দ্যুতি মৈত্র) ভাল ক্রিকেট খেলে, একইসঙ্গে চমৎকার অভিনয় করে। ঘটনাচক্রে, একটি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ আসে তার কাছে, প্রোডাকশন কন্ট্রোলার বিশুদার (চঞ্চল ঘোষ) মাধ্যমে। নামকরা পরিচালক সুশীল মল্লিক (সুপ্রিয় দত্ত) ছবি বানাচ্ছেন, থ্রিলার গল্প নিয়ে, সেই ছবিতে দরকার অংশুকে। সেখানে রয়েছেন আরও দুই তারকা– অভিনেত্রী মাধবী (প্রিয়ঙ্কা ত্রিবেদী উপেন্দ্র) ও জগ্গু ওস্তাদ (রজতাভ দত্ত), এছাড়া স্টান্টম্যান ক্যাপ্টেন কৃষ্ণন (সোম চট্টোপাধ্যায়)। দার্জিলিংয়ে গিয়ে তারা ওঠে ধনী ব্যবসায়ী মিস্টার লোহিয়ার (রবি খেমু) বাংলোয়।
[আরও পড়ুন: জমজমাট রিসেপশনে নজর কাড়লেন সুদীপ্তা ও সৌম্য, কেমন সেজেছিলেন জুটি?]
থাকা-খাওয়ার এলাহি বন্দোবস্ত, সেই সঙ্গে শুটিংয়ের আয়োজন। মিস্টার লোহিয়া আবার মূল্যবান পাথর সংগ্রাহক এবং তাঁর বাড়ির সংগ্রহ তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। ঘোড়ায় চড়ার একটা অ্যাকশন সিকোয়েন্সে দারুণ বিপদ থেকে অংশুকে বাঁচায় ক্যাপ্টেন কৃষ্ণন। তাদের আলাপের সূত্রপাত সেখানেই। চমৎকার সাজিয়েছেন এই দৃশ্যটি সাগ্নিক। গল্প গড়াতেই বোঝা যায়, জগ্গু খুব একটা পছন্দ করছে না কৃষ্ণনকে। ওদিকে অংশুমান আর কৃষ্ণনের বন্ধুত্ব গড়ে উঠছে একটু একটু করে। দেখতে ভাল লাগে যখন একটা গানের মাধ্যমে স্টান্টম্যানের জীবন সংগ্রামের গল্প বলা হয় একটি সিকোয়েন্সে। গেয়েছেন রূপঙ্কর বাগচী।
গানের একটি অংশ লিখেছেন পরিচালক সাগ্নিক নিজে, অন্য অংশটি সাংবাদিক অগ্নি রায়। ছবি যত এগোয় সাধারণ শুটিংয়ের গল্প থেকে থ্রিলারের দিকে মোড় নেয়। বিশেষ করে যখন মিস্টার লোহিয়ার বাড়ি থেকে দামি নীলকান্ত মণিটি চুরি হয়ে যায়, ছবি জমজমাট ক্লাইম্যাক্সের দিকে এগোয়। অভিনেতা থেকে অংশুমান ততক্ষণে রহস্যসন্ধানী। সাহিত্য-আশ্রয়ী ছবিতে সিনেমার স্বার্থে কিছু রদবদল করা হলেও মন্দ লাগে না।
ছবিটার মধ্যে অদ্ভুত বাঙালিয়ানা রয়েছে। ভাল লাগে রানা দাশগুপ্ত ও ধরম গুলাটির ক্যামেরার কাজ। তাঁরা সুন্দর ধরেছেন শৈলশহরকে। এই গরমে পাহাড়ে বেড়ানোর আস্বাদ এনে দেবে এই ছবি। আর এডিটিং, সাউন্ডের বাঁধুনি বেশ ভাল। চিত্রনাট্যের মানবিক দিকটা মন ছুঁয়ে যায়। নামভূমিকায় স্যমন্তক দ্যুতি মৈত্র (Samontak Dyuti Maitra) সাবলীল। ক্যাপ্টেন কৃষ্ণনের ভূমিকায় সোম চট্টোপাধ্যায় একেবারে মিশে গিয়েছেন। বলতেই হয়, জগ্গুর রোলে রজতাভ দত্ত (Rajatava Dutt) ছাড়া কাউকে এত মানাত না। সুপ্রিয় দত্ত (Supriyo Dutta) ডিরেক্টরের ভূমিকায় আগাগোড়া মসৃণ। স্বল্প পরিসরে দেবেশ রায়চৌধুরী, অরিত্র গঙ্গোপাধ্যায় যথাযথ। কিছু খামতি থাকলেও সব মিলিয়ে এই ছবির দ্রুতি দর্শকের ভাল লাগবে।
সিনেমা – মাস্টার অংশুমান
অভিনয়ে – স্যমন্তক দ্যুতি মৈত্র, সোম চট্টোপাধ্যায়, রজতাভ দত্ত, সুপ্রিয় দত্ত, দেবেশ রায়চৌধুরী, অরিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা উপেন্দ্র
পরিচালনায় – সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়