নির্মল ধর: আজকাল ছবি শুরুর আগে একটা সাবধানবাণী লেখা থাকে – “এই ছবির সব ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে কোনও মিল থাকলে সেটা কাকতালীয়।” সায়ন্তন ঘোষালের ছবি-কারখানা থেকে উৎপাদিত নতুন প্রোডাক্ট ‘স্বস্তিক সংকেতে’ও (Swastik Sanket) এমন একটি সতর্কবার্তা দেওয়া রয়েছে। সুতরাং, টিকিট কেটে কল্পনা ও গাঁজাখুরির এমন ককটেল দেখে বাস্তব বা ইতিহাস নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই, বা কেউ করলেও সাবধানবাণীর ঢাল দিয়ে তা রুখে দিতে কোনও অসুবিধে নেই।
খারাপ লাগে, আবার হাসিও পায় এমন ছবির পরিকল্পনা করার মতো অতীব সাহসী কিছু মানুষ এখনও টালিগঞ্জ পাড়ায় রয়েছেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর (Subhash Chandra Bose) মতো একজন নমস্য ব্যক্তিত্বকে নিয়েও এমন উদ্ভট ভাবনার কথা ভাবতে পারেন! জনৈক দেবারতি
মুখোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত এই কাহিনিতে হিটলার তাঁর জমানার এক বিজ্ঞানী রুডলফ এবং তাঁরই আবিষ্কার করা এক অভিনব মারণ ভাইরাস, রুডলফের বাঙালি সহকারী সত্যেন চট্টোপাধ্যায়, নেতাজিকে (অভিনয়ে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) নিয়ে থ্রিলার মার্কা একটা ‘গপ্পো’ ফাঁদা হয়েছে।
যে মারণ ভাইরাস নাকি হিটলার ব্যবহার করেছিলেন ইহুদিদের নিধনে। সেই মারণ ভাইরাসের অ্যান্টিডোট রুডলফ বাঙালি সহকারীকে জানিয়ে গিয়েছিলেন এক সাংকেতিক ভাষায়।
এই কল্পনার গাছে চড়ে বসেছে আজকের সময়ের গঞ্জিকা সেবনের কিছু শাখামৃগ মার্কা চরিত্র। যে দলটির প্রধান রুদ্রাণী (নুসরত জাহান), তাঁর IT বিশেষজ্ঞ স্বামী প্রিয়ম (গৌরব চক্রবর্তী)। রুদ্রাণী আবার সাংকেতিক ভাষা বিশেষজ্ঞ। নতুন বই উদ্বোধন করতে গিয়েছে লন্ডনে। পুরো ছবির জন্য তাই লন্ডন শহর ও শহরতলীর লোকেশন দর্শকের কাছে চোখের কিঞ্চিৎ আরাম।
[আরও পড়ুন: অস্কারের দৌড়ে আরও একধাপ এগোল ভারতের ‘জয় ভীম’ ও ‘মারাক্কার’, সাফল্য আর কত দূর?]
কিন্তু মনের আরাম? গল্প বার বার অতীতের হিটলার এবং এখনকার ইউরোপে নব্য-নাৎসি বাহিনীর এক নতুন ইউরোপ গড়ে তোলার ন্যক্কারজনক কিছু ঘটনা এবং সেই মারণ ভাইরাসের অ্যান্টিডোট খোঁজার এক গোঁজামিল মাত্র। নেতাজির বিখ্যাত গান “কদম কদম বাড়ায়ে যা…”র লাইন নিয়ে ধাঁধার খেলা। গ্রিনিচ শহরের আশপাশের চারটি মিউজিয়ামে রাখা অ্যান্টিক জিনিস থেকে সাংকেতিক ভাষা উদ্ধার করে ভাইরাসের অ্যান্টিডোট ‘আবিষ্কার’ অবাক করে।
ওহ! আসল ভিলেনের কথাই তো বলা হয়নি! শুমাখার (শতাফ ফিগার) নামের এক ভারত-জার্মান বংশোদ্ভূতও খাঁটি রক্তের ইউরোপ গড়তে ব্রিটিশ নব্য-নাৎসিদের দলে নাম লিখিয়েছে। এই শুমাখারই যত গন্ডগোলের গোড়া। হ্যাঁ, এটা মানতেই হবে ‘নাটক’ তৈরির কাজে সায়ন্তন ঘোষাল বেশ দড়। অলীক কল্পনাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টায় ত্রুটি তিনি রাখেননি। কিন্তু ‘গপ্পো’টাই যে মানুষের বিশ্বাসের ধারেকাছে নেই! টাবুনের ক্যামেরার কাজ, রাজানারায়ণ দেবের আবহ বাড়তি কিছু যোগ করেনি। শুধু ব্যতিক্রম নুসরতের (Nusrat Jahan) স্বাভাবিক, স্বচ্ছন্দ অভিনয়। গৌরব (Gaurav Chakrabarty) প্রায় সারাক্ষণ স্বামী হিসেবেই রইলেন। শতাফ ফিগার, রুদ্রনীল ঘোষ, এবং একদল বিদেশি অভিনেতা ক্যামেরার সামনে সংলাপ বলে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করেননি। তাঁকে মনে হয়েছে যেনো গোয়েবলস! আসলে পুরো ছবিটাই যে ভুলে ভরা।
ছবি – স্বস্তিক সংকেত
অভিনয়ে – নুসরত জাহান, গৌরব চক্রবর্তী, রুদ্রনীল ঘোষ, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, শতাফ ফিগার
পরিচালনা – সায়ন্তন ঘোষাল