গৌতম ব্রহ্ম: কথায় বলে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। লক্ষ্য স্থির থাকলে কোনও বাধাই যেন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। হলও তাই। হাজারও প্রতিকূলতা পেরিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশের খুদের কাছে পৌঁছল জীবনদায়ী ওষুধ। সৌজন্যে হ্যাম রেডিও।
জটিল রোগে ভুগছে বাংলাদেশের জারা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে ছয় বছর বয়সি শিশু। তাকে বাচানোর জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যায়নি ওপার বাংলায়। বাংলাদেশে তন্নতন্ন করে খুঁজেও লাভ হয়নি কিছুই। সময়ে ওষুধ না পাওয়া গেলে প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কাও ছিল একশো শতাংশ। বাংলাদেশের হ্যাম রেডিও মারফত এই বিপদের খবর আসে ভারতে। রাহাত খান, আলি আকবর, কবিরুল সাগররাই সাহায্যের কাতর আরজি জানান। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানোই যে লক্ষ্য হ্যাম রেডিওর। তাই ছোট্ট মেয়ের প্রাণ বাঁচাতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন হ্যাম রেডিওর সদস্যরা।
[আরও পড়ুন: ঘরে স্ত্রী-সন্তান, খুন করতে গোখরো ছেড়ে দরজায় খিল দিলেন ব্যক্তি, তার পর…]
প্রথমবার চেষ্টায় ব্যর্থ। তা-ও চেষ্টা চালিয়ে যান হ্যাম রেডিওর অপারেটররা। দুদফার চেষ্টায় অবশেষে দিল্লিতে মেলে ওষুধের সন্ধান। এবার ভাবনা ওষুধ ঢাকা মেডিক্যালে যত দ্রুত সম্ভব পৌঁছনো যায় কীভাবে? কারণ, দিল্লির হ্যাম রেডিওর প্রায় সকলেই তখন আহমেদাবাদে হ্যাম ফেস্টে ব্যস্ত। হ্যাম রেডিওর জুনিয়র সদস্য খগেন্দ্রনাথ জানাই যেন অন্ধের যষ্ঠী! হ্যাম অপারেটররা বাংলাদেশের উপদূতাবাসের দ্বারস্থ হন। কিন্তু দূতাবাসের কর্মীরা নিয়মের দোহাই দিয়ে জানিয়ে দেন, ওষুধ পাঠাতে তাঁরা পারবেন না। দিল্লি দূতাবাস জানিয়ে দেয় ‘এটা তাদের কাজ নয়’। পরিবর্তে ক্যুরিয়ারে কিংবা সৌহার্দ্য বাসের মাধ্যমে ওষুধ বাংলাদেশে পৌঁছনোর কথা বলা হয়। ক্যুরিয়ারে পৌঁছলে ৪ দিন আর সৌহার্দ্য ওষুধ নিয়ে গেলে ১২ ঘণ্টা সময় তো লাগবেই। তাতে ওষুধ পৌঁছলেও প্রয়োজন হয়তো ফুরিয়ে যেতে পারে।
বাধ্য হয়ে হ্যাম রেডিওর সদস্যরা বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে শুরু করেন। ঢাকাগামী বিমানযাত্রী অহিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। তাঁর হাতেই তুলে দেওয়া হয় সেই জীবনদায়ী ওষুধ। তাঁর হাত দিয়েই পৌঁছল জীবনদায়ী ওষুধ। ছোট্ট শিশুর পরিজনদের মুখে ফুটল হাসি। আর সেই হাসির ঝিলিকেই যেন আরও উজ্জ্বল ভারত-বাংলাদেশের সম্প্রীতি, মৈত্রীর বন্ধন।