স্টাফ রিপোর্টার: কে করেননি তাঁর সুরে অবগাহন?
মুকেশ, লতা মঙ্গেশকর, কিশোর কুমার, রফি, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে। পরিচালকদের তালিকাও লম্বা। বিমল রায় থেকে শুরু করে ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন চিত্রনাট্য রচনা থেকে সংগীত পরিচালনা, সবেতেই সাবলীল বিচরণ সলিল চৌধুরীর। জন্মশতবর্ষের যাপনে সেই গঙ্গাজলেই গঙ্গাপুজো হল। সলিল চৌধুরীর ব্যবহার করা একাধিক সামগ্রী প্রকাশ্যে নিয়ে এল তাঁর পরিবার।
শিল্পীর ব্যবহার করা একজোড়া ডট পেন, চশমা, পকেট ডায়েরি, একাধিক গানের পাণ্ডুলিপি। সুরকারের ব্যবহার করা হারমোনিয়াম, অর্গানও ছুঁয়ে দেখার সুযোগ রয়েছে। আর আছে অনেক অকথিত ইতিহাস। যা উঠে এল স্মৃতিচারণায়। চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষের কথায়, "একটা বেসুরো বেতালা সমাজের মধ্যে রয়েছি আমরা। সলিলদা বঞ্চনা, শোষণহীন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছেন।" পবিত্র সরকার আবার সলিল চৌধুরীর মুম্বই ইয়ুথ কয়্যারকে পাঁচশো টাকা দিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান করানোর রোমন্থন করলেন। জানালেন, সলিল চৌধুরীর মতো এত বেশি করে কেউ বিশ্ব-পৃথিবীকে সুরবন্দি করেনি। শিল্পীর সমগ্র রচনাকে এক মলাটের মধ্যে আনার প্রস্তাব রাখেন পবিত্রবাবু। পুলিশ ফাঁকি দিয়ে শিল্পীর লেখা গণনাট্য সঙ্ঘের নাটক মঞ্চস্থ করার গল্প বললেন সলিল ভ্রাতা সুহাসের বন্ধু শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। তেজেন্দ্রনারায়ণ পরবর্তী প্রজন্মকে আরও বেশি করে সলিল চৌধুরীকে জানার পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে জুড়ে দেন একটা আক্ষেপ। বলেন, "ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক তৈরি করা নিয়ে রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমিতে একটা সেমিনার করতে চেয়েছিলেন সলিলদা। সেটা আর বাস্তবায়িত হয়নি।" বেহালার 'পিস' তেজেন্দ্রনারায়ণকে দিয়ে সরোদে তুলিয়েছিলেন শিল্পী। সেই কথাও উঠে আসে আলাপচারিতায়।
সুফল পাকড়াশি শিল্পীর হারমোনিয়াম প্রীতির গল্প বলেন। জানান, "বাইকে করে, সাইকেলে করে সলিলদার জন্য হারমোনিয়াম নিয়ে যেতাম অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠান শেষে আমায় লুকিয়ে বকশিস দিতেন।" একটা সময় ব্যস্ততার চাপে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। চেয়েছিলেন কেউ তাঁকে কিডন্যাপ করে নিক। জানালেন লোকসঙ্গীত শিল্পী স্বপন বসু। অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন আরও অনেকে। ইন্দ্রাণী সেন, অলোকনাথ দে প্রমুখ।
প্রদর্শনীটি সুন্দর করে সাজিয়েছেন কিউরেটর সুদীপ সেন। মেয়ে অন্তরা ও ছেলে সঞ্জয় চৌধুরিও বাবার অনেক অকথিত গল্প বললেন 'সংবাদ প্রতিদিন'-কে। অন্তরা জানালেন, "ফ্লোরে গিয়ে অনেক সময়ই বাবা গানের সুর পরিবর্তন করতেন। অনেকসময় বদলে ফেলতেন আমূল গানও। যেমন ‘আমার ময়না গো’ গানটিও ফ্লোরে বসেই লতা মঙ্গেশকরের জন্য লিখেছিলেন। এমন অজস্র গল্প আছে।" সেই সঙ্গে অবধারিত অনুযোগ এনে অন্তরা মনে করালেন, "অনেকেই বাবার গান ভুল সুরে নিজের মতো করে 'রিমেক' করছেন। এটা খুব পীড়াদায়ক। তাই বাবার গানের স্বরলিপি প্রকাশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একশো গান দিয়ে শুরু করা হবে এই উদ্যোগ।"
প্রদর্শনী চলবে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত, 'কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি'-তে। এদিনের প্রদর্শনীতে একাধিক রেকর্ডও প্রদর্শিত হয়েছে।